Kashmir Terror Attack: পর পর নাশকতা, গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা, তার পরও বিপদ আটকানো গেল না, পহেলগাঁওয়ে বিপর্যয়ের দায় কার?
Pahelgam Terror Attack: ২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্য়াহার করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার।

নয়াদিল্লি: উপর উপর সব ঠিক দেখানো হলেও, আসলে কিছুই ঠিক নেই বলে লাগাতার দাবি করে আসছিলেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর নতুন করে সেই নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। নিরীহ পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে উপত্যকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। গত বছর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও, সেগুলিকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যাওয়া, গোয়েন্দাদের সতর্কতা এড়িয়ে যাওয়ার মাশুলই ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে দিতে হলে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। (Kashmir Terror Attack)
২০১৯ সালের ৫ অগাস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য সংরক্ষিত অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্য়াহার করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। তদানীন্তন রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে ভেঙে পৃথক তৈরি করা হয় দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল- জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। সেই নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও কেন্দ্রীয় সরকার নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে। কিন্তু বিপদ অনেক আগে থেকেই জানান দিচ্ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ সেনাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চলা, বা সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের ঘটনাই নয়, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীরা যে সক্রিয় হয়ে উঠছে, বার বার তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল। (Pahelgam Terror Attack)
শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই পর পর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে উপত্য়কায়। গত বছর ৯ জুন তৃতীয় বার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি শপথ নেওয়ার ৯৮ দিনের মধ্যেই উপত্যকায় ২৫টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে, যাতে ২১ জওয়ান প্রাণ হারান, মারা যান ১৫ জন নিরীহ নাগরিক। পরিসংখ্যান প্রকাশ করে সেই নিয়ে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। সন্ত্রাসমুক্ত কাশ্মীরের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি এবং অমিত শাহ, তার কী হল প্রশ্ন তুলেছিলেন দলের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেত।
কংগ্রেসের প্রশ্নে সেই সময় আমল দেয়নি কেন্দ্র। উন্নতি হয়নি কাশ্মীরের পরিস্থিতিরও। কারণ ২০২৪ সাল জুড়ে পর পর নাশকতার ঘটনা ঘটে—
- ২০২৪ সালের মে মাসে একটি সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলাকালীন হামলা চালায় জঙ্গিরা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ৬ পরিযায়ী শ্রমিক ও ১ চিকিৎসক। সেবারও হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন The Resistant Force, যারা মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে হামলা চালিয়েছে।
- যেদিন দিল্লিতে তৃতীয় বারের জন্য শপথ গ্রহণ করেন মোদি, সেই ৯ জুনই রিয়াসি সেক্টরে হিন্দু পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা চালায় জঙ্গিরা। সেবারও হামলার দায় স্বীকার করে The Resistant Force. এলোপাথাড়ি গুলির মুখে পড়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। মারা যান ৯ পুণ্যার্থী। আহত হন ৪১ জন।
- জুলাই মাসে কাঠুয়ায় সেনার কনভয়ে হামলা চালানো হয়, যাতে ৬ জন মারা যান।
- অক্টোবর মাসে আবার চার দিনে চার জায়গায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। গুলমার্গে জঙ্গিদের গুলিতে মারা যান দুই জওয়ান, সেনার দুই পোর্টার। ত্রালে ১৯ বছরের কিশোরকে গুলি করা হয়। সোনমার্গে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সাত কর্মীকে গুলিকের মারে জঙ্গিরা। শোপিয়ানে বিহারের এক পরিযায়ী শ্রমিককে গুলি করে মারে জঙ্গিরা।
- নভেম্বর মাসে আবার শ্রীনগরের লালচক বাজারে গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। কেউ হতাহত না হলেও ১২ জন আহত হন।
- ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে সরকারি রিপোর্টে বলা হয়, সেবছর শুধুমাত্র জম্মুতেই আটটি জেলায় জঙ্গি হামলা হয়। জঙ্গিদের হামলায় ১৮ জন জওয়ান প্রাণ হারান। সাধারণ মানুষ মারা যান ১৪ জন।
- ২০২৫ সালেও হামলার ঘটনা অব্যাহত থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দু'টি হামলায় ২ জনের মৃত্যুর খবর সামনে আসে। ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসেও ২ জন করে নাগরিকের মৃত্যু হয় জঙ্গি হামলায়। গত ১, ৫ এবং ১১ এপ্রিলও পৃথক জঙ্গি হামলায় ৪ জনের মারা যাওয়ার খবর মেলে। মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ২৬ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
আর তাতেই কাশ্মীর নিয়ে সরকারি প্রতিশ্রুতি, দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা ব্য়বস্থা নিয়েও। কারণ সরকারি সূত্র বলছে, ঢের আগেই হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। তার পরও নিরাপত্তা নিয়ে গাফিলতি ছিল। The Resistant Front নামের যে সংগঠনের জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে, তাদের মধ্যে দু'জন কাশ্মীরেরই যুবক, ২০১৮ সালে তারা পাকিস্তান চলে যায় এবং গত বছর ফিরে আসে বলে জানা যাচ্ছে। উপত্যকায় তাদের গতিবিধি নিয়েও নানা তথ্য উঠে আসে। তার পরও কেন সক্রিয়তা দেখা গেল না, উঠছে প্রশ্ন।
সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে, 'এবারের গ্রীষ্মে জম্মু ও কাশ্মীরকে তপ্ত করে তোলাই পাকিস্তানের পরিকল্পনা' বলে বার্তা এসেছিল। বাইরে থেকে ৭০ জন জঙ্গি উপত্যকায় ঢুকে পড়েছে এবং তারা যথেষ্ট সক্রিয় বলে জানানো হয়। তারা হ্যান্ডলারদের কাছ থেকে নির্দেশের অপেক্ষা করছে বলে জানান গোয়েন্দারা। এমনকি গোয়েন্দারা জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা নন, জঙ্গিরা বাইরে থেকে আসা লোকজনকে নিশানা করতে চাইছে। এমনকি, মঙ্গলবার হামলার আগে পাকিস্তানের এক সন্ত্রাসী সংগঠন হামলা চালানো নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করে।
সেই নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও হয়। গত ১০ মার্চ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহনের নেতৃত্বে একটি বৈঠক হয়। ৬ এপ্রিল ফের বৈঠক হয় শ্রীনগরে, যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ খোদ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তার পরও উপত্যকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাটো করা যায়নি। পহেলগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে এক সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করেছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। ওই সরকারি সূত্র বলেন, "বরফ গলার সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়ি রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে, তা হল, পাহাড় থেকে নেমে এসেছিল জঙ্গিরা।" কিন্তু গোয়েন্দাদের তরফে বার্তা আসার পরও কেন পহেলগাঁওয়ের মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানো হল না, কেন জঙ্গিদের গতিবিধির হদিশ পেল না নিরাপত্তা বাহিনী, উঠছে প্রশ্ন।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের দিকে আঙুল উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু বিপদের কথা জেনেও নিরাপত্তায় ঘাটতি রইল কেন, সেই প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না। বাইরে থেকে সব ঠিক মনে হলেও, আসলে কিছুই ঠিক নেই, ভিতরে ভিতরে ক্ষোভ জমা হচ্ছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ন্য়াশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির দিকেও আঙুল তুলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, "পাকিস্তান ঘোলা জলে মাছ ধরে বইকি। কিন্তু গোটা দেশে যা ঘটে, তার প্রভাবও পড়ে জম্মু ও কাশ্মীরে।" সেই সম উপত্যকার রাজনীতিতে বিরোধী ছিলেন ওমর। কিন্তু মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহলেগাঁওয়ে যখন জঙ্গি হামলা যখন ঘটল, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত ওমর। উপত্যকার এই মুহূর্তের পরিস্থিতি দেখে যন্ত্রণার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
