Tripura HIV AIDS Cases: ত্রিপুরায় HIV আক্রান্ত ৫৬৭৪, 'হিমশৈলের চূড়ামাত্র', বলছেন চিকিৎসকেরা
Tripura HIV Report: চলতি মাসের গোড়ার দিকে Tripura AIDS Control Society (TSACS)-এর এক আধিকারিক রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
আগরতলা: ত্রিপুরায় পড়ুয়াদের মধ্যে HIV সংক্রমণ মহামারির আকার ধারণ করেছে বলে রিপোর্ট সামনে এসেছে। সে নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। রাজ্য সরকারের তরফে সাফাই দেওয়া হলেও, ত্রিপুরার পরিস্থিতি নিয়ে একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এখনও পর্যন্ত যেটুকু সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে বলে মত তাঁদের। (Tripura HIV AIDS Cases)
চলতি মাসের গোড়ার দিকে Tripura AIDS Control Society (TSACS)-এর এক আধিকারিক রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ত্রিপুরায় ৮২৬ পড়ুয়ার শরীরে HIV সংক্রমণ ধরা পড়ে, যাঁদের মধ্যে ৪৭ জন মারা গিয়েছেন। ৫৭২ জন পড়ুয়া এখনও জীবিত রয়েছেন। HIV আক্রান্ত অনেক বাকি পড়ুয়া উচ্চশিক্ষার জন্য ভিন্ রাজ্যে চলে গিয়েছেন। (Tripura HIV Report)
একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন TSACS-এর ওই আধিকারিক। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক নেওয়ায় আসক্ত ২২০টি স্কুল এবং ২৪টি কলেজের পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। প্রায় প্রত্যক দিনই পাঁচ-সাতজন করে পড়ুয়ার শরীরে HIV সংক্রমণ ধরা পড়ছে এবং প্রত্যেক ব্লক, মহকুমার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সেই তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বলে জানান। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে বাজারে সহজলভ্য মাদক নিতে গিয়েই পড়ুয়ারা HIV-তে সংক্রমিত হচ্ছেন বলে জানান ওই আধিকারিক।
বিষয়টি সামনে আসতেই ত্রিপুরা সরকারে তরফে সাফাই দেওয়া হয়। রিপোর্টটি বিভ্রান্তিমূলক বলে দাবি করে তারা। জানানো হয়, ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ART সেন্টারগুলিতে ওই ৮২৮ জন পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। যাঁদের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল চিকিৎসা চলছে। গত দু'বছরের হিসেব দিয়ে TSACS জানায়, ২০২২-'২৩ সালে ত্রিপুরায় ১৮৪৭ জনের শরীরে HIV সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং তাঁদের মধ্যে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৩-'২৪ সালে ত্রিপুরায় নতুন করে সংক্রমিত হন ১৭৯০ জন, যাঁদের মধ্যে ৪৪ জন মারা যান।
ত্রিপুরা সরকার জানিয়েছে, প্রতিদিন রাজ্যে পাঁচ থেকে সাত জন করে HIV সংক্রমিত ধরা পড়ছেন। ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ত্রিপুরার অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টারগুলিতে (ART) ৮ হাজার ৭২৯ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। এঁদের মধ্যে বর্তমানে HIV পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৭৪ জন, ৪ হাজার ৫৭০ জন পুরুষ, ১ হাজার ১০৩ জন মহিলা। রূপান্তরকামী HIV পজিটিভ রোগী একজন।
কিন্তু ত্রিপুরা সরকারের এই সাফাই নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। সংবাদ সংস্থা IANS-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন Unison Medicare and Research Centre, Mumbai-এর HIV বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ঈশ্বর গিলাদা। তিনি বলেন, "এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। শুধু HIV সংক্রমণই হোক বা অন্য কোনও সংক্রমণ, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে, শিরাপথে মাদক নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্রুত ছড়ায় সংক্রমণ।"
ওই বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, গিলে খাওয়া, সেবন করা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যত দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়, তার চেয়ে ঢের বেশি গতিতে সংক্রমণ ছড়ায় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শিরাপথে মাদক নেওয়ার ক্ষেত্রে, যেখানে একটি ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ একাধিক জন ব্যবহার করেন। HIV তো বটেই, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি এবং সিফিলিসের মতো সংক্রমণ সহজেই ছড়িয়ে পড়ে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে। পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে অবিলম্বে প্রত্যেক শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষা প্রয়োজন বলে মত তাঁর।
HIV বিশেষজ্ঞ ঈশ্বরের কথায়, "ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ভাগ করার পাশাপাশি আরও একটি ঝুঁকি রয়েছে, যা হল, অসুরক্ষিত যৌনতা। এতে যৌনরোগ এবং HIV, দুই-ই ছড়ায়।" বেঙ্গালুরুর Aster Whitefield Hospital-এর ইন্টার্নাল মেডিসিন কনসালট্যান্ট বাসবরাজ এস কুম্বর ত্রিপুরার পরিস্থিতিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, "ইঞ্জেক্টেবল মাদকের ব্যবহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। এ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার প্রয়োজন।"
HIV একটি এমন রোগ, যাতে রোগ প্রতিরোধ শক্তিই একেবারে হারিয়ে ফেলেন রোগী। শীরের অন্য আর ওরোগ বাসা বাঁধে, রোজকার জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হয়, পাশাপাশি অন্য কেউই রোগীর থেকে সংক্রমিত হতে পারেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগী যদিও দীর্ঘজীবী হতে পারেন, কিন্তু সর্বক্ষণ চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।
HIV বিশেষজ্ঞ ঈশ্বর জানিয়েছেন, ২০০০-২০১০ সাল পর্যন্ত HIV নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার জোর পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তেমন কোনও প্রচার নেই। ফলে ওই সময়ে এবং পরবর্তীতে জন্ম নেওয়া শিশু, যাঁরা এখন কৈশোরে পৌঁছে গিয়েছেন বা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছেন, HIV সংক্রমণ এড়ানোর উপায় সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনা গড়ে ওঠেনি তাঁদের মধ্যে। ফলে তাঁরাই বেশি করে HIV এবং যৌনরোগের শিকার হচ্ছেন।
রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসাতেও যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে বলে মত HIV বিশেষজ্ঞ ঈশ্বরের। তাঁর কথায়, "রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। ফলে দেশের সর্বত্র সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। এই মুহূর্তে সংক্রমিতদের মধ্যে ৭০ শতাংশই প্রান্তিক মানুষজন, যাঁরা সমাজে ছুঁৎমার্গ এবং বৈষম্যের শিকার।"
HIV বিশেষজ্ঞ ঈশ্বর জানিয়েছেন, মাদক ব্যবহারের সম্ভাব্য বিপদ, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক নেওয়া কতটা অসুরক্ষিত, সে ব্যাপারে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি, চিকিৎসার চেয়ে গোড়াতেই রোগ প্রতিরোধ করা যে জরুরি, তা সকলকে বোঝানো উচিত। এক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবেশও গড়ে তোলা দরকার, কাউন্সেলিং এবং পুনর্বাসনের বন্দোবস্তও থাকা জরুরি বলে জানিয়েছেন তিনি। নইলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।