Uniform Civil Code: সর্বসম্মতির কথা বলেও অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে ‘নৈতিক সমর্থন’, বিরোধী ঐক্যে আবারও কাঁটা AAP!
Aam Aadmi Party: আপ-এর তরফে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) সন্দীপ পাঠক।
নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোট ঘিরে চরম তৎপরতা। শর্তসাপেক্ষে তাতে শামিল হওয়ার কথা জানিয়েছে তারাও। কিন্তু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারেরই পাশে থাকার বার্তা দিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের (Arvind Kejriwal) আম আদমি পার্টি (Aam Aadmi Party)। অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে তাদের 'নৈতিক সমর্থন' রয়েছে বলে জানিয়েছে আপ। যদিও আইন কার্যকর করার আগে সবপক্ষের সমর্থন নেওয়া প্রয়োজন বলে মত তাদের (Uniform Civil Code)।
আপ-এর তরফে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠনিক) সন্দীপ পাঠক। তিনি বলেন, "নৈতিক ভাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন করে আপ। সংবিধানের ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদেও সেকথা বলা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা জরুরি, রাজনৈতিক দল এবং অরাজনৈতিক সংগঠনগুলির পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।"
সর্বসম্মতি পাওয়া গেলে তবেই বিষয়টি নিয়ে এগনো উচিত বলেও মত আপ-এর। সন্দীপ বলেন, "এই ধরনের বিষয়ে সকলের সম্মতি নিয়ে তবেই এগনো উচিত। আমাদের বিশ্বাস, সব পক্ষের সম্মতিক্রমেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পথে এগনো উচিত।" আ
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে হাতিয়ার করেই বিজেপি মাঠে নামতে চাইছে বলে দাবি বিরোধীদের। সেই নিয়ে এদিন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনাও করেন সন্দীপ। বলেন, "এটাই বিজেপি-র সংস্কৃতি। নির্বাচন এলেই জটিল বিষয়গুলি খুঁচিয়ে তোলে ওরা। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু বা সেই সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান বের করার কোনও উদ্দেশ্যই নেই এদের। বিজেপি শুধু বিভ্রম সৃষ্টি করে, যাতে দেশে বিভাজনের পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচন লড়া যায়।"
দলের হয়ে সন্দীপের বক্তব্য, "গত ন'বছরে কোনও কাজ করে থাকলে, তার ভিত্তিতেই মাঠে নামতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু কাজ কিছু দেখানোর নেই, তাই অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে হাতিয়ার করে সমর্থন জোগাড় করতে চাইছেন।"
আরও পড়ুন: Ravi Kishan Daughter: নিজেকে দিয়েই সূচনা, ‘অগ্নিবীর’ হতে সেনায় যোগদান তারকা-কন্যার
মঙ্গলবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা নিয়ে মুখ খোলেন মোদি। ভোটব্যাঙ্কের জন্যই বিরোধীরা এর বিরোধিতা করছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এক দেশে দুই পদ্ধতি কী করে থাকতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। যদিও গোটাটাই বিজেপি-র নির্বাচনী কৌশল বলে মত বিরোধীদের। তবে তা নিয়ে আপ-এর এই সমর্থন বিজেপি বিরোধী শিবিরের মাথাব্য়থার কারণ হতে পারে। কারণ সম্প্রতি পটনায় বিরোধীদের বৈঠকে যোগ দিলেও, আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-.বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত ধরিয়েছে আপ। আমলা নিয়োগে কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তাদের সমর্থন না জানালে, জোটে অংশ নেওয়ার কথা ওঠে না বলে জানিয়েছে। তার পরই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেন্দ্রের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত আপ-এর কৌশলেরই অঙ্গ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তান দত্তক নেওয়া থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার চয়ন নিয়ে এক এক দেশে ধর্ম এবং জাতি নির্বিশেষে নিজস্ব আইন-কানুন রয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সমস্ত নাগরিককে একই পারিবারিক আইন মেনে চলতে হবে। সেই নয়ের দশক থেকেই দেশে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রস্তাব দিয়ে আসছে বিজেপি। এমনকি তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারেও লাগাতার জায়গা পেয়ে এসেছে বিষয়টি। সামনে আসে খসড়া নীতিও। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যেও ওই বিধি চালুর প্রস্তাব উঠতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে আজও তা কার্যকর করা যায়নি।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে তৎপর হল কেন্দ্র। তাতে নির্বাচনের আগে বছর বছর অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে গাজর ঝোলানোর মতো করে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে লাগাতার অভিযোগ তুলে আসছেন বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক', 'বালাকোট অভিযান'কে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে একই ভাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেন্দ্র বিল নিয়ে এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মত বিজেপি বিরোধী শিবিরের একাংশের।
ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে এই বিধির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মাচারণের অধিকারের কথা বলা রয়েছে। শুধুমাত্র সংখ্যার জোরে, মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা দিতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের উপর জোর করে বিধি চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ সেই সংবিধান এবং ভারতীয় গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করা। বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আইন বা জীবনচর্যার স্বতন্ত্র বিধান ব্যক্তিসত্তার সার্বভৌমত্বকে খর্ব করে।
যদিও সমালোচনায় কান দিতে নারাজ কেন্দ্র। যে কারণে '২৪-এর নির্বাচনের আগে সেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে নতুন করে তৎপর হল তারা। জনমনে এ নিয়ে কী ভাবনা, মতামত রয়েছে, তা জানতে তৎপর ২২তম আইন কমিশন।ও সরকারি সিলমোহর প্রাপ্ত ধর্মীয় সংগঠনগুলির মতামতও গ্রহণ করা হবে। তার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন আগ্রহী নাগরিক এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলি। তার জন্য আইন কমিশনের ওয়েবসাইট lci@gov.in-এ গিয়ে 'ক্লিক হিয়ার' অপশন বেছে নিতে হবে।