Mohun Bagan SG vs Mohammedan: নতুন বছরে অপরাজিত মোহনবাগানকে ধাক্কা দিতে পারবে সমস্যায় জর্জরিত মহমেডান?
Indian Super League: ডিসেম্বরে এফসি গোয়ার কাছে হারার পর টানা ছ’টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। নতুন বছরে এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচে হারেনি তারা।

কলকাতা: আইএসএল পয়েন্ট টেবলের এক বনাম ১৩ নম্বর দলের মধ্যে লড়াইটা যে একপেশেই হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, এই নিয়ে কোনও দ্বিমত না থাকতেই পারে। কিন্তু ফুটবলে যে অঘটন কোনও নতুন ঘটনা নয় এবং আইএসএল যে অঘটনেরই পীঠস্থান, এই নিয়েও নিশ্চয়ই কেউ তর্ক করবেন না। তাই শনিবার যুবভারতীতে আর এক কলকাতা ডার্বির লড়াই আকর্ষণীয় হয়ে উঠতেই পারে।
ডিসেম্বরে এফসি গোয়ার কাছে হারার পর টানা ছ’টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। নতুন বছরে এখন পর্যন্ত কোনও ম্যাচে হারেনি তারা। পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতেছে ও দু’টিতে ড্র করেছে। অন্য দিকে, মহমেডান শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে। তবে পয়েন্ট খুইয়েছে মাত্র একটিতে। বাকি তিনটিতে জিততে না পারলেও ড্র করেছে তারা। দুই দলের সাম্প্রতিক ফলের এই ফারাকই হয়তো শনিবারের কলকাতা ডার্বির ফল আগাম বলে দিতে পারে।
কিন্তু এই মহমেডানই যেহেতু বেঙ্গালুরু এফসি-কে তাদের মাঠে গিয়ে হারিয়েছে, এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ড্র করেছে, চেন্নাইন এফসি-কে দুই ম্যাচের কোনওটিতেই জিততে দেয়নি, রুখে দিয়েছে নর্থইস্টকেও, তাই তাদের খাটো করে নেওয়াটা মোটেই বুদ্ধমানের কাজ নয়।
মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনাও শুক্রবার সাংবাদিকদের একই কথা বলেন। তাঁর মতে, “মহমেডান লিগ টেবলে যেখানেই থাকুক না কেন, সম্প্রতি তাদের ম্যাচগুলোতে যে রকম খেলেছে, তার পরে ওদের খাটো করে দেখার প্রশ্নই ওঠে না। আইএসএলে কোনও ম্যাচই সোজা নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী সব ম্যাচই কঠিন”।
অন্যদিকে, মহমেডান এসসি-র সহকারী কোচ মেহেরাজউদ্দিন ওয়াডু মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে বলেন, “এই ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সমর্থকদের কাছে, তা খুব ভাল করেই জানি আমি। সে জন্যই দলের খেলোয়াড়রা সবাই খুব ফোকাসড্ আছে। আমিও অধীর আগ্রহে এই ম্যাচের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি কালকের ম্যাচে ইতিবাচক ফলই পাব”।
মহমেডানের সহকারী কোচের আশা যদি পূরণ হয়, তা হলে যে আইএসএলের অন্যতম সেরা অঘটন ঘটবে এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে মোহনবাগান শিবিরে সম্প্রতি যে গোলখরা চলছে, তাতে তারা নিজেরাই নিজেদের ভুলে চাপে পড়ে যেতে পারে।
দুই পক্ষেই গোলখরা
তাদের সমস্যা তাদের পুরনো রোগ। গত তিন ম্যাচেই প্রচুর সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করেও গোলশূন্য ড্র করে মোহনবাগান। তার আগে জামশেদপুরে দাপুটে ফুটবল খেলেও ফল ১-১ রেখে ম্যাচ শেষ করে তারা। সারা ম্যাচে ১৬টি গোলের সুযোগ তৈরি করেও একটির বেশি গোল করতে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। পাঁচটির বেশি শটও লক্ষ্যে ছিল না তাদের। কলকাতা ডার্বিতে তাদের সমর্থকদের মন ভরিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। সে দিনও ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করে একটির বেশি গোল করতে পারেনি তারা।
গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শুধু লিস্টন কোলাসোর গোলে তারা জিতলেও ৯০ মিনিটের লড়াই ছিল উত্তেজনায় ভরা। সারা ম্যাচে মাত্র ৩৬.৬ শতাংশ পজেশন থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে সবুজ-মেরুন বাহিনীই। সারা ম্যাচে যেখানে ছ’টি গোলের সুযোগ তৈরি করে কলকাতার দল, সেখানে বেঙ্গালুরু এফসি ন’টি সুযোগ তৈরি করেও একটিও কাজে লাগাতে পারেনি। সবুজ-মেরুন রক্ষণকে চেনা মেজাজে পাওয়া যায় সে দিন। কিন্তু আক্রমণের সমস্যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রিয়স পেট্রাটসরা। যা মহমেডানের পক্ষে ভাল।
মহমেডান এসসি গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটি গোল করেছে। চলতি লিগের অন্যান্য সব দলের গোল সংখ্যা দুই অঙ্কের হলেও সাদা-কালো বাহিনীর গোলসংখ্যা এখনও আটেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়া দলগুলির তালিকায় ওপর দিকেই রয়েছে তারা। পাঁচটি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখলেও তার সুফল অর্জন করতে পারেনি তারা, রক্ষণ বিভাগ এতটাই দুর্বল তাদের। এই দুর্বল রক্ষণকে কাজে লাগিয়েই নিশ্চয়ই এই ম্যাচে গোলখরা কাটানোর চেষ্টা করবে মোহনবাগান এসজি।
ঐতিহাসিক দ্বৈরথ
কলকাতা শহরের দুই শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব, যাদের অনায়াসে প্রতিবেশী বলা যায়, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও যে বহুকালের, তা বলাই বাহুল্য। ১৮৮৯-এ মোহনবাগান ক্লাবের প্রতিষ্ঠার দু’বছর পর ১৮৯১-এ শুরু মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পথচলা। কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনে প্রথম ১৯৩৩-এ অংশ নেওয়ার এক বছর পরই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় মহমেডান এসসি, যে পালক মোহনবাগানের মুকুটেও তখন ছিল না।
সেই সময় থেকেই মোহনবাগানের সঙ্গে তাদের ফুটবল দ্বৈরথ। যা জাতীয় স্তরের ফুটবলে গত কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয়েছে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে। শনিবার, বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সেই ফুটবল-যুদ্ধ ফের দেখা যাবে। এ মরশুমে প্রথম মুখোমুখিতে ৩-০-য় জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। সে দিন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংস কেউই ছিলেন না তাদের প্রথম এগারোয়। মনবীর সিং ও জেমি ম্যাকলারেনকে সামনে রেখে দল সাজায় তারা। পেট্রাটস নামেন ম্যাচের শেষ দিকে। কামিংস নামেনইনি। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও ম্যাকলারেনের বোঝাপড়ায় সে ম্যাচে মোহনবাগানের আক্রমণে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
আট মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার ও এ লিগের অন্যতম সেরা ফুটবলার ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটের মাথায় ফের আর এক স্মরণীয় হেডে ব্যবধান বাড়ান শুভাশিস বোস এবং ৩৬ মিনিটের মাথায় গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন স্টুয়ার্ট। তবে সে দিন যা পরিমান গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান, সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে অনেক বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তারা। এই ম্যাচেও সে রকমই দাপুটে ফুটবল খেলার পরিকল্পনা নিয়েই নামবে মোহনবাগান। তবে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করলে সমস্যায় পড়তে পারে তারা।
পরিসংখ্যান তত্ত্ব
চলতি লিগে এখন পর্যন্ত কোনও হোম ম্যাচে জয় পায়নি মহমেডান এসসি। গত চার ম্যাচে মোহনবাগান এসজি এক বা তার কম গোল করেছে। গত দু’টি অ্যাওয়ে ম্যাচে জয়হীন রয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। চলতি আইএসএলে কর্নার থেকে সাতটি গোল খেয়েছে মহমেডান। লিগের অন্য কোনও দল কর্নার থেকে এত গোল খায়নি। অন্যদিকে, কর্নার থেকে সবচেয়ে বেশি ন’টি গোল করেছে মোহনবাগান। তাদের অস্ট্রেলীয় তারকা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস লিগের অন্যান্য সব দলের বিরুদ্ধে গোল পেলেও দু’টি দলের বিরুদ্ধে গোল পাননি। তার মধ্যে একটি মহমেডান এসসি। অন্যটি হায়দরাবাদ এফসি। মহমেডানের আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সি গোমেজ ২৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও একটি থেকেও অ্যাসিস্ট করতে পারেননি।
ম্যাচ
মহমেডান এসসি বনাম মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
ভেন্যু
বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়ঙ্গন, কলকাতা
কখন খেলা
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০
সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং
স্পোর্টস ১৮-৩- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল ও স্পোর্টস ১৮-২- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮-১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ; জিও সিনেমা- বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, মালয়ালাম
আরও পড়ুন: ধোনিকে না দেখে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের সেরা! ঋদ্ধিমানের অজানা গল্প শোনালেন স্ত্রী রোমি
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
