Mohun Bagan Super Giant: মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে মোহনবাগানই, দুরন্ত ছন্দে থাকা জামশেদপুরকে হারাতে পারবে সুবজ-মেরুন?
Jamshedpur FC vs Mohun Bagan: ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ৯ বার। পাঁচটিতে জিতেছে কলকাতার দল। তিনটিতে জামশেদপুর এফসি।

জামশেদপুর: সমানে সমানে টক্কর বলতে যা বোঝায়, শুক্রবার হয়তো সে রকমই কিছু হতে চলেছে জামশেদপুরের জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও জামশেদপুর এফসির (Jamshedpur FC vs Mohun Bagan) সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও ফলাফল অন্তত সে রকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা মোহনবাগান যেমন গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে, জামশেদপুরের শেষ পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যানও একই। তারা রয়েছে টেবলের চার নম্বরে। ফারাক শুধু গোলসংখ্যায়। মোহনবাগান যেখানে গত পাঁচ ম্যাচে এগারো গোল দিয়ে পাঁচ গোল খেয়েছে, সেখানে জামশেদপুর গত পাঁচ ম্যাচে আট গোল দিয়ে তিন গোল খেয়েছে।
পুরো লিগে যতটা ধারাবাহিক থাকতে পেরেছে মোহনবাগান, ততটা ধারাবাহিক থাকতে পারেনি জামশেদপুর। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে খালিদ জামিলের দল। সে দিক থেকে বিচার করলে অনেকে মোহনবাগানকেই এই ম্যাচে এগিয়ে রাখতে পারেন। কিন্তু আইএসএলে যে কোনও কিছুই আগাম বলা যায় না, তা তো বারবার প্রমাণ হয়েছে। বুধবার রাতে কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনেও তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
ঘরের মাঠে দুরন্ত ইস্পাতবাহিনী
কিন্তু ইস্পাতনগরীর দলের ঘরের মাঠের রেকর্ড অন্য যে কোনও দলের কাছে ঈর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। জেআরডি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তাদের শহরের মোট আটটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছে তারা। হারিয়েছে মুম্বই সিটি এফসি, ইস্টবেঙ্গল, হায়দরাবাদ, মহমেডান, পাঞ্জাব এফসি, কেরালা ব্লাস্টার্স ও বেঙ্গালুরু এফসি-কে। একটিমাত্র হোম ম্যাচে হারে তারা, চেন্নাইন এফসি-র কাছে (১-৫)। তাই তাদের ঘরের মাঠে মোহনবাগানের তিন পয়েন্ট অর্জন করা খুব একটা সোজা হবে না।
এ কথা স্বীকার করে নিয়ে সবুজ-মেরুন কোচ হোসে মোলিনা বলেছেন, “জামশেদপুর ওদের ঘরের মাঠে দুর্দান্ত। মাত্র একটা হোম ম্যাচ হেরেছে ওরা। তাই ওদের বিরুদ্ধে আমাদের সেরা ফুটবল খেলতে হবে। কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে। তবে জয়ের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী”।
প্রথম পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জয় পাওয়ার পরে টানা তিন ম্যাচে ১৩ গোল খেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জামশেদপুর এফসি। ইস্টবেঙ্গলের কাছেও এক গোলে হারে তারা। কিন্তু তার পরে গত তিন ম্যাচে টানা জয়ই জামশেদপুরকে ফের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। তাই শুক্রবার দুই আত্মবিশ্বাসী দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার আশা নিয়ে গ্যালারিতে ভীড় জমাবেন সমর্থকেরা।
তবে তাদের দুর্বল রক্ষণ তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। সেরা ছয়ে থাকা দলগুলির মধ্যে তারাই সবচেয়ে বেশি (২৩) গোল খেয়েছে। সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দলের তালিকায় তারা রয়েছে চার নম্বরে। তাদের গোলপার্থক্যও -১।
তবে এই নিয়ে বিচলিত নন মোলিনা। তাঁর মতে, “জামশেদপুর কত গোল খেয়েছে, সেটা বড় কথা নয়। ওরা জিতছে, এটাই আসল কথা। ওরা আসলে দুটো ম্যাচে দশটা গোল খেয়েছে। সে জন্যই সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে। বাকি ম্যাচগুলোতে তো অত গোল খায়নি। তাই এটা নিয়ে অত ভাবার কিছু নেই”।
গোল করার দিক দিয়ে অবশ্য ধারাবাহিক জামশেদপুর। পাঁচ গোল করে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন ডেভিড মারে। চারটি করে গোল করেছেন হাভিয়ে সিভেরিও, হাভিয়ে হার্নান্দেজ। জাপানি ফরোয়ার্ড রেই তাচিকাওয়াও দু’টি গোল করেছেন। ক্ষিপ্র, তরুণ উইঙ্গার মহম্মদ সনন একটির বেশি গোল করতে না পারলেও আক্রমণ তৈরি ও গোলের পাস বাড়ানোয় তিনি যথেষ্ট সাহায্য করছেন দলকে।
ডার্বির পারফরম্যান্সে অশনি সঙ্কেত
শুক্রবার মোলিনার দলেও তেমন বড় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাঁর হাতে বিকল্প অনেক বেশি। দলের খেলোয়াড়দের চোট-আঘাত নিয়ে তিনি জানিয়ে দেন, “দিমি, গ্রেগ শুরু থেকে খেলার জন্য তৈরি। থাপা সম্ভবত দু-তিন সপ্তাহ খেলতে পারবে না। আপুইয়া অনুশীলনে যোগ দিয়েছে, স্বাভাবিক ছন্দেই আছে। ও খেলার জন্য তৈরি”।
দুই বিদেশী সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ, টম অলড্রেডের সঙ্গে দু’প্রান্তে শুভাশিস বোস ও আশিস রাইয়ের থাকার সম্ভাবনা বেশি। মাঝমাঠে সহাল আব্দুল সামাদ ও গ্রেগ স্টুয়ার্ট শুরু করতে পারেন। দুই উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো ও মনবীরের জায়গাও প্রায় পাকা। আক্রমণে কামিংস, ম্যাকলারেন ও পেট্রাটসদের মধ্যে দু’জন। মোটামুটি এমনই লাইন-আপ হয়তো ভেবে রেখেছেন বাগান-কোচ।
গত ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা জেমি ম্যাকলারেন, লিস্টন কোলাসোরা ফর্মে থাকলেও জেসন কামিংস, মনবীর সিং-রা চেনা ছন্দে না থাকায় একটির বেশি গোল দিতে পারেনি তারা। না হলে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হয়তো গোলের সংখ্যা আরও বাড়াতে পারত তারা। জামশেদপুরের মতো সেরা ছয়ে থাকা দলের বিরুদ্ধে পারফরম্যান্সে উন্নতি করতেই হবে সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। না হলে সমস্যা হতে পারে।
আপুইয়ার ফিরে আসাটা দলের পক্ষে ভাল খবর। তাই অনিরুদ্ধ থাপা না খেলতে পারলেও আপুইয়া ফিরে এসে তাঁর অভাব পূরণ করে দিতে পারেন। তিনি শুরু থেকে খেললে হয়তো সহালকে রিজার্ভ বেঞ্চে থাকতে হতে পারে।
নভেম্বরে যুবভারতীতে সারা ম্যাচে দাপুটে ফুটবল খেলে প্রতিবেশী রাজ্যের দলকে কার্যত কোণঠাসা করে রাখে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সারা ম্যাচে যেখানে আটটি শট গোলে রাখে সবুজ-মেরুন বাহিনী, সেখানে দু’টির বেশি শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি ইস্পাতনগরীর দল। ৬৪ শতাংশ বল তাদেরই দখলে ছিল।
ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় গোলের খাতা খোলেন টম অলড্রেড। বিরতির ঠিক আগে বাড়তি সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে চলতি লিগের প্রথম গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে নেন লিস্টন কোলাসো। দ্বিতীয়ার্ধে ৭৫ মিনিটের মাথায় অনায়াসে তৃতীয় গোল করেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন। ৮৩ মিনিটের মাথায় কোলাসোর শট পোস্টে ধাক্কা না খেলে হয়তো চার গোলে জিততে পারত মোহনবাগান। শুক্রবারও সেরকম পারফরম্যান্সের অপেক্ষাতেই থাকবেন বাগান সমর্থকেরা।
পরিসংখ্যান-তত্ত্ব
চলতি আইএসএলে শেষ ১২টি ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল পেয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এই এক ডজন ম্যাচে ২৫টি গোল করেছে তারা। এর আগেও দু’বার টানা ১২ ম্যাচে গোল পেয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী (মার্চ-সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ও মার্চ, ২০২১- জানুয়ারি, ২০২২)। শুক্রবার গোল করতে পারলে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে ধারাবাহিক ভাবে গোল করার নয়া নজির গড়বে তারা।
জামশেদপুর এ বারের লিগে এ পর্যন্ত তাদের প্রতিপক্ষদের প্রতি ম্যাচে গড়ে নিজেদের বক্সে ২৬.৬ বার করে বল ছুঁতে দিয়েছে, যা সর্বোচ্চ। মোহনবাগানের এই পরিসংখ্যান সবচেয়ে কম, ১৫.২। জামশেদপুর তাদের প্রতিপক্ষের বক্সে গড়ে প্রতি ম্যাচে ১৮.১ বার করে বল ছুঁয়েছে। মোহনবাগানের এই পরিসংখ্যান ২৫।
মোহনবাগানের আইএসএল অভিযানে মনবীর সিংয়ের গোল অবদান ৩৮। আর তিনটি গোলে অবদান রাখতে পারলে তিনি দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে (৪১) ছুঁয়ে ফেলবেন। একটি দলে ৪০ বা তার বেশি গোলের অবদান আইএসএলে আর চারজনের আছে। জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে মনবীর সাতটি গোলে অবদান রেখেছেন। সবকটিই অ্যাসিস্ট। ইস্পাতনগরীর দলের বিরুদ্ধে এটিই সর্বোচ্চ
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: কমেছে গোল, অ্যাসিস্টের সংখ্য়া, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বেগ্ন বাড়ছে পেত্রাতোসের?
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
