Bus Service Stopped: নতুন পরিবহণ আইনের বিরোধিতায় এবার বাস চালকরা, পরিষেবা বন্ধ কাটোয়া-আসানসোলে; ভোগান্তি নিত্যযাত্রীদের
Bus Drivers Claim: বাসচালকদের দাবি, এই ঝুঁকির পেশায় এই আইনে তাঁরা প্রাণে মারা পড়বেন।
রাণা দাস, কৌশিক গাঁতাইত ও ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কাটোয়া, আসানসোল ও সিউড়ি : ট্রাক ও লরি চালকদের পর এবার ন্যায় সংহিতায় নতুন পরিবহণ আইনের বিরোধিতায় আন্দোলনে বাস চালকরা। দুই বর্ধমান আন্দোলনে নামেন তাঁরা। সকাল থেকে কাটোয়া বাস স্ট্যান্ডে বাস পরিষেবা বন্ধ। পথে নামেনি শতাধিক বেসরকারি বাস। আসানসোলেও বাস চালকদের বিক্ষোভ। সিটি বাস স্ট্যান্ডে মিনি বাস দাঁড় করিয়ে রেখে মিছিল তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের। প্রায় ১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে পরিষেবা, চূড়ান্ত ভোগান্তির শিকার হন নিত্যযাত্রীরা। বাসচালকদের দাবি, এই ঝুঁকির পেশায় এই আইনে তাঁরা প্রাণে মারা পড়বেন।
আজ কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডের শতাধিক বাসচালক ধর্মঘটে সামিল হন। এতে যাত্রীরা অসুবিধায় পড়েন। পূর্ব বর্ধমানের সীমান্তবর্তী কাটোয়া শহরের বাসস্ট্যান্ড ছুঁয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৭৮টি বাস চলাচল করে। এই পরিস্থিতিতে চালকদের ডাকা বাস ধর্মঘটের জেরে বিপদে পড়েন যাত্রীরা। অন্যদিকে, আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে মিনি বাস দাঁড় করিয়ে রেখে মিছিল করে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন INTTUC। ঘণ্টাখানেক বন্ধ থাকার পর কয়েকটি রুটে বিক্ষিপ্তভাবে বাস চলাচল শুরু হয়।
এদিকে বীরভূমের সিউড়িতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান ট্রাকচালকরা। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শুরু হয় তাঁদের এই বিক্ষোভ। রাস্তা দিয়ে কোনও যানবাহন যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তার ওপর বসে পড়েন ট্রাকের চালকরা।
কেন্দ্রের নতুন পরিবহণ আইনে বিপদে পড়বেন তাঁরা। বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হবে। এই অভিযোগে দেশজুড়ে বিক্ষোভে সামিল হন ট্রাক ও লরি চালকরা। ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এনেছে কেন্দ্র। এই আইনে গাড়ি দুর্ঘটনা নিয়ে নিয়মের কড়াকড়ি করা হয়েছে। বড়সড় পথ-দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর, পুলিশ-প্রশাসনকে না জানিয়ে যদি চালকরা পালিয়ে যান, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে হিট-অ্যান্ড-রান মামলা দায়ের হবে। সেক্ষেত্রে দোষ প্রমাণ হলে চালকদের সর্বোচ্চ ১০ বছর সাজা অথবা ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। কেন্দ্রের এই আইনেরই বিরোধিতা করেন ট্রাক ও লরি চালকরা। কেন্দ্রীয় এই পরিবহণ নীতির বিরোধিতায় দেশজুড়ে ট্রাক চালকদের বিক্ষোভের আঁচ পড়ে। যার প্রভাব পড়ে পেট্রোল পাম্পগুলিতে। মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে দেখা দিয়েছে জ্বালানি-সঙ্কট। বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ে প্রতিদিন দেড় হাজার ট্রাক ঢোকে। কিন্তু বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে গতকাল সকাল থেকে পেট্রোল পাম্পগুলিতে কোনও ট্রাক ঢোকেনি। ফলে পেট্রোল-ডিজেলের ভাণ্ডারে টান পড়তে শুরু করে। প্রায় ৫০ শতাংশ ঘাটতি দেখা দেয়। নাগপুর, ইন্দোর, ধর্মশালায় পেট্রোল পাম্পগুলির সামনে গাড়ির লাইন ক্রমশ লম্বা হতে থাকে গতকাল। শুধু পেট্রোল পাম্প নয়, প্রভাব পড়ে নভি মুম্বইয়ের ফল ও সব্জি বাজারেও। জোগান কমে যাওয়ায় চড়চড়িয়ে বাড়তে থাকে দাম। পেট্রোল-ডিজেল, LPG সিলিন্ডার সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পুলিশকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেয় মহারাষ্ট্র সরকার। প্রভাব পড়ে এরাজ্যেও। এর প্রতিবাদে বছর শেষের দিন হুগলির ডানকুনিতে অবরোধ-আন্দোলন শুরু করেন ট্রাক ড্রাইভাররা। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে অবরোধ করা হয় জাতীয় সড়ক। ট্রাক চালকদের অবরোধের জেরে তীব্র যানজট দেখা দেয় বন্দর এলাকায়। সপ্তাহের দ্বিতীয় কাজের দিনে একাধিক রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে নয়া 'হিট অ্যান্ড রান' আইন (New Hit and Run Law) নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দেয় কেন্দ্রের। আশ্বাস পেয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদকারী ও বিক্ষোভ দেখানো ট্রাকচালকদের কাছে পুনরায় কাজ শুরু করার আর্জি জানায় পরিবহন সংস্থাগুলি। নতুন আইন অনুযায়ী, হিট অ্যান্ড রান মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ডের বিষয়টি এখনও লাগু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকারের আশ্বাস, কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে পরিবহন সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তার পরেই উঠে যায় দেশজুড়ে চলা ট্রাক চালক ও পরিবহন সংস্থাগুলির প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি।