Nirapada Sardar: 'যতদিন আমাকে জেলে রাখবেন, আপনার চোখে ঘুম থাকবে না', জামিনে বেরিয়েই মমতাকে বার্তা নিরাপদর
Sandeshkhali Case: মঙ্গলবার সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
কলকাতা: জামিনে মুক্ত হয়েই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি সন্দেশখালির প্রাক্তন CPM বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের। জানালেন, বেআইনি ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জেলে এসে একরকম অভিজ্ঞতা হল তাঁর। সেই সঙ্গে মমতাকে বার্তা দিতে জানালেন, যতদিন তাঁকে জেলে রাখা হবে, ততদিন চোখে ঘুম থাকবে না তৃণমূলনেত্রীর। (Nirapada Sardar)
মঙ্গলবার সন্ধে ৬টা নাগাদ জেলের বাইউরে বেরিয়ে আসেন নিরাপদ। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন CPM-এর কর্মী-সমর্থকেরা। জয়ধ্বনি দিয়ে, গলায় মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয় তাঁকে। সেই আবহেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "আমাকে বেআইনি ভাবে কলকাতার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে এসে একটা ভাল-মন্দ অভিজ্ঞতা হয়েছে বটে, জেলে না ঢুকলে বোঝা যেত না। ৮০ শতাংশের বেশি যুব সমাজকে জেলের ভিতর রাখা হয়েছে। যে যুবসমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ, তাঁদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মিথ্যে মামলায় জেলে রেখেছে। হাঁস-মুরগি চুরির অভিযোগে জেলে রাখা হয়েছে অনেককে। এভাবেই যুবসমাজের মেরুদণ্ড ভাঙতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।" (Sandeshkhali Case)
এদিন নিরাপদ আরও বলেন, "সন্দেশখালির মানুষ জবাব দিয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে বিধানসভা বলে আসছিলাম যে, সন্দেশখালিতে জমি লুঠ হচ্ছে, মায়েদের ইজ্জত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, গরিব মানুষের জমি চলে যাচ্ছে, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বার বার বলেছি, কিন্তু আমার কথা কানে তোলেন সরকার। বরং মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে সন্দেশখালির মানুষের। তাই আন্দোলনে নেমেছেন।"
আরও পড়ুন: Sandeshkhali: জোর করে জমি দখলের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত, ১৩০ জনকে জমি ফেরত দিল জেলা প্রশাসন
মমতাকে নিশানা করে নিরাপদ বলেন, "শেখ শাহজাহান কোথায় আছে, আমরা বার বার তা বলেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ পাহারা না দিলে, ৫ তারিখ ইডি-র উপর হামলার পর ৬ তারিখই গ্রেফতার হয়ে যেত। এখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতার করার কথা বলা হচ্ছে। আজকে সন্দেশখালির পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ ভাবে তৃণমূল দায়ী। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলাম, যতদিন আমাকে জেলে রাখবেন, আপনার ঘুম হবে না। লালঝাণ্ডা হাতে নিয়ে সকলে তাঁর ঘুম কেড়ে নিয়েছেন।"
এদিনই সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক প্রশ্ন তোলেন, কী ভাবে একজন নাগরিককে এভাবে হেফাজতে নিতে পারে পুলিশ? এতদিন যে হেফাজতে রাখা হয়েছে নিরাপদকে, কে ক্ষতিপূরণ দেবে, প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি।
নিরাপদর বিরুদ্ধে FIR দায়েরের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি বলে দেখানো হয়েছে। অথচ ১০ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ জমা পড়ে বলে জানা যায়। তাই অভিযোগ দায়ের হওয়ার আগেই কোন যুক্তিতে নিরাপদকে গ্রেফতার করা হল, সেই নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন বিচারপতি বসাক। এর পর, মঙ্গলবারই নিরাপদকে ছেড়ে দিতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারপতি। আদালত জানায়, আজ নিরাপদকে মুক্তি দেওয়া না হলে, আদালত অবমাননার নোটিস দেওয়া হবে পুলিশকে। এর পরই সন্ধে ৬টা নাগাদ জেল থেকে বেরিয়ে আসেন নিরাপদ।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করা হয় সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদকে। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, সেদিন সকালে বাঁশদ্রোণীর ভাড়াবাড়ি থেকে নিরাপদ সর্দারকে নোটিস ছাড়াই তুনে আনে পুলিশ! দুপুর ২টো বেজে ৫০ মিনিটে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। প্রথমে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক। পরে ১৩ দিন ছিলেন জেলে। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।