Gurmeet Ram Rahim: ভোটগ্রহণের চারদিন আগে প্যারোল, ধর্ষণ-খুনে দোষী রাম রহিমই কি হরিয়ানার ফলাফল পাল্টে দিলেন?
Haryana Election Results: গত ১ অক্টোবর ২০ দিনের প্যারোলে ফের জেল থেকে বেরিয়ে আসেন রাম রহিম, যা ছিল রাম রহিমের ১৫তম প্যারোল।
চণ্ডীগড়: বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে নতুন করে প্যারোল দেওয়ায় বিতর্ক বেধেছিল। সেই গুরমীত রাম রহিমই হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে BJP-র ইউএসপি হয়ে উঠলেন। বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ঠিক চার দিন আগে জেল থেকে বেরিয়ে আসেন ডেরা সাচা সওদার প্রধান রাম রহিম। আর তাতেই যাবতীয় হিসেব নিকেশ পাল্টে গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। (Gurmeet Ram Rahim)
গত ১ অক্টোবর ২০ দিনের প্যারোলে ফের জেল থেকে বেরিয়ে আসেন রাম রহিম, যা ছিল রাম রহিমের ১৫তম প্যারোল। হরিয়ানা এবং পঞ্জাবে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে রাম রহিমের। তাই ফের একবার তাঁর প্যারোল মঞ্জুর করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচন কমিশনের তরফে প্যারোল মঞ্জুর করা হয় বলে, তাদের ভূমিকাও সমালোচিত হয়। কিন্তু সেই সমালোচনা নির্বাচনের মুখে রাম রহিমের জেল থেকে বেরিয়ে আসা ঠেকাতে পারেনি। (Haryana Election Results)
ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া রাম রহিমকে প্যারোল দেওয়ায় বিজেপি-র দিকে আঙুল ওঠে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই রাম রহিমকে নির্বাচনের মুখে প্যারোল দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। তবে নির্বাচনের ফল বেরনোর পর দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র বিজেপি-ই নয়, রাম রহিমের প্যারোলে উপকৃত হয়েছে কংগ্রেসও।
এখনও পর্যন্ত যে হিসেব সামনে এসেছে, সেই অনুযায়ী, ডেরা সাচা সওদা সংগঠনের অনুগামী অধ্যুষিত হরিয়ানার ২৮টি বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি জয়ী হয়েছে ১০টি আসনে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দল দু'টি আসনে এবং নির্দল প্রার্থী একটি আসনে জয়ী হয়েছেন। ওই ২৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ৫৩.৫৭ শতাংশ, বিজেপি-র ৩৫.৭১ শতাংশ, INLD-র ৭ শতাংশ এবং নির্দল প্র্রাথীর ৩.৫৭ শতাংশ।
অর্থাৎ ডেরা সাচা অনুগামী অধ্যুষিত অঞ্চলে বিজেপি-র চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। এর মধ্যে ফতেহাবাদ, কৈথল, কুরুক্ষেত্র, সিরসা, কার্নালের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। ফতেহাবাদ, রাতিয়া, তোহানা, কালায়ক, কৈথল, শাহবাদ, থানেসর, পেহোয়া, কালানওয়ালি, সিরসা, এলেনাবাদ, আদমপুর, উকলানার মতো ডেরা সাচা সওদা অনুগামী অধ্যুষিত এলাকায় জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। ডেরা সাচা সওদা অনুগামী অধ্যুষিত হানসি, বরওয়ালা হিসার, নালওয়া, আসন্ধ, ঘরোন্ডা, কার্নাল, ইন্দ্রি, নিলোখেরি, লাদওয়া, পুন্ডরিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, গত ৩ অক্টোবর ডেরা সাচা সওদা অনুগামীদের বিজেপি-কে ভোট দিতে আহ্বান জানান রাম রহিম। সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান থেকে রাম রহিম এই বার্তা দেন। প্রত্যেক অনুগামীদের বুথে অন্তত পাঁচ জনকে নিয়ে গিয়ে বিজেপি-কে ভোট দেওয়ানোর নির্দেশ দেন তিনি। নির্বাচন কমিশন যদিও জানিয়েছিল, প্যারোলে জেল থেকে বেরোলেও সমাবেশ করতে পারবেন না রাম রহিম। তাই অনলাইন তিনি সৎসঙ্গ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে অস্পষ্ট। এমনিতে ডেরা সাচা সওদার অনুগামীর সংখ্যা প্রায় ১.২৫ কোটি। সংস্থার যে ৩৮টি শাখা রয়েছে, তার ২১টিই হরিয়ানায় রয়েছে।
ডেরা সাচা সওদা রাজনৈতিক ভাবেও প্রভাবশালী। অতীতে অকালি দল, বিজেপি এবং কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে তারা। ২০০৭ সালে পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে সমর্থন করে ডেরা সাচা সওদা। ২০১৪ সালে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে সমর্থন করে তারা। ২০১৫ সালে প্রকাশ্যে দিল্লি এবং বিহার নির্বাচনে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন জানায়। শুধু তাই নয়, ওই বছর ডেরা সাচা সওদার ৩০০০ অনুগামী বিহারে বিজেপি-র হয়ে প্রচারেও যায়। দলিত, ধর্মান্তরিত শিখও রয়েছে এদের অনুগামীর তালিকায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের ভোট বরাবর কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। নিম্নবর্গের মানুষ জন ডেরা সাচা সওদার নির্দেশ অনুযায়ী ভোট দেন। এবারের নির্বাচনে হরিয়ানার ফলাফল বিজেপি-র পক্ষে যাওয়ায় তাই ডেরা সাচা সওদার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মত তাঁদের। শুধু তাই নয়, যে কারাপালের আমলে ছ'বার প্যারোল পেয়েছেন রাম রহিম, বিজেপি-র সেই প্রার্থী সুনীল সাঙওয়ানও চরকি দাদরি থেকে জয়ী হয়েছেন।