Nepal Protests: রাজতন্ত্র ফেরানোর সঙ্গে হিন্দুরাষ্ট্রের দাবি, অশান্ত নেপালে ঘটল প্রাণহানিও, মিছিলে দেখা গেল যোগী আদিত্যনাথের পোস্টার
Nepal Pro-Monarchy Protests: নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছে।

কাঠমাণ্ডু: গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঘিরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নেপালে। দফায় দফায় সংঘর্ষ, প্রাণহানি ও গ্রেফতারির খবর সামনে আসছে। পরিস্থিতি সামাল নিতে গতকালই কার্ফু জারি করা হয় বিস্তীর্ণ এলাকায়। কিন্তু তার পরও হিংসা, তাণ্ডব এড়ানো যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে পড়শি দেশে। এখনও পর্যন্ত ১০০-র বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর। রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির নেতা রবীন্দ্র মিশ্র এবং ধবল শামশের রানাকেও পুলিশ আটক করেছে। বিক্ষোভে নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহের পাশাপাশি, ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পোস্টারও চোখে পড়ে বিক্ষোভে। (Nepal Protests)
নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে ঘিরে হিংসা ছড়িয়েছে। শুক্রবার কোটেশ্বরের কাছে তিনকুনেতে বিক্ষোভ হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। দেদার ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুঠের ঘটনা সামনে আসে। হিংসার কবলে পড়ে প্রাণ হারান দু'জন। আহত হয়েছেন অনেকে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটালে সাধারণ মানুষের সম্পত্তিতেও আগুন ধরানো হয় বলে অভিযোগ। এমনতি আগুন নেভাতে গেলে দমকলকর্মীদের বাধা দেওয়া হয়, আগুন জ্বলতে দেওয়া হয় বলেও দাবি সামনে এসেছে। (Nepal Pro-Monarchy Protests)
বিক্ষোভ নিয়ে খবর করতে গিয়ে সুরেশ রজক নামের এক সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন নেপালে। যে বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা, তার ছাদ থেকে বিক্ষোভের ছবি দেখাচ্ছিলেন সুরেশ। আর একজন গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান তিনি। তাঁকে ২৯ বছর বয়সি সাবিন মহারাজন বলে শনাক্ত করেছে কীর্তিপুর পুরসভা। বিক্ষোভ হঠাতে পুলিশ রবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভ যে হিংসাত্মক আকার ধারণ করে, তাতে অন্য উপায় ছিল না তাদের কাছে।
ছবি: https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1209405087216807&set=pb.100044419807972.-2207520000&type=3
জেলা প্রশাসনের তরফে শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কাঠমাণ্ডুতে কার্ফু জারি করা হয়। পরে তা আরও বাড়িয়ে শনিবার সকাল পর্যন্ত কার্ফু জারি রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঠমাণ্ডু পুলিশ জানিয়েছে, সাধারণ নাগরিকের বাড়ি, দলীয় কার্যালয়, গাড়ি-বাইক, দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সুপারমার্কেটে ঢুকে চালানো হয় লুঠ। অন্নপূর্ণা মিডিয়া নেটওয়ার্কের অফিসে ভাঙচুর চলে। পাথর ছোড়া হয় কান্তিপুর টেলিভিশনের অফিসে। অন্নপূর্ণা মিডিয়া নেটওয়ার্কের অফিসও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলি। তাদের বক্তব্য, 'রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দলের নামে বিক্ষোভকে ঢাল করে যে জঘন্য নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, যেভাবে হিংসা চালানো হয়েছে, সাধারণ মানুষ, সরকারি এবং সংবাদমাধ্যমের সম্পত্তির উপর হামলা চালানো হয়েছে, তা কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়'। অপরাধীদের কঠোর সাজা দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে বিবৃতিতে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও একযোগে হামলার তীব্র নিন্দা করেছে।
শুধু তাই নয়, বিক্ষোভ চলাকালীন জাতীয় মানবাধিকার রক্ষা কমিশনের সদস্যদের উপরও হামলা হয়। সংগঠনের মুখপাত্র টিকারাম পোখারেল জানিয়েছেন, হামলাকারীরা তাঁদের একটি দলের উপর চড়াও হয়, যাতে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। টিকারাম বলেন, "শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মানবাধিকারের অন্তর্গত। কিন্তু হিংসা, অন্যের অধিকার খর্ব কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না।"
এই গোটা পরিস্থিতির জন্য নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকেই দায়ী করছেন অনেকে। তিনিই হিংসায় উস্কানি দিয়েছেন বলে দাবি করছেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল প্রচণ্ডও। তিনি বলেন, "পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এর পিছনে জ্ঞানেন্দ্র শাহ রয়েছেন। ওঁর অভিসন্ধি অপরাধমূলক। আগেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, আবারও হচ্ছে। সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে এবং জ্ঞানেন্দ্র শাহকেও রেহাই দেওয়া যাবে না।"
এই বিক্ষোভের নেপথ্যে নেপালের পঞ্চম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে এই বিক্ষোভকে সমর্থন করে দক্ষিণপন্থী দলটি। শুধু তাই নয়, জ্ঞানেন্দ্র ঘনিষ্ঠ, ব্যবসায়ী দুর্গা প্রসাইয়ের ভূমিকাও এই মুহূর্তে আতসকাচের নীচে। জানা যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহেই দুর্গার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জ্ঞানেন্দ্র। এর পরই দুর্গার নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও হিংসার সূচনা। গত মাসে জ্ঞানেন্দ্রর একটি ভাষণও হিংসায় উস্কানি জুগিয়েছে বলে উঠছে অভিযোগ।
নেপালে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতেই এই বিক্ষোভের সূচনা। রাজতন্ত্রের সমর্থক একাধিক হিন্দু সংগঠন একছাতার নীচে জড়ো হয়েছে। গত ৯ মার্চ পোখরায় জ্ঞানেন্দ্রকে স্বাগত জানাতেও যায় তারা। নেপালের রাজা তথা সর্বেসর্বা থাকাকালীন জ্ঞানেন্দ্রর বিরুদ্ধে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখেন তিনি। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। গণ আন্দোলনই তাঁকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে এবং ২০০৮ সালে সরকারি ভাবে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে।
কিন্তু রাজতন্ত্রের অবসানর সঙ্গে সঙ্গেই দেশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি। ২০০৮ সালেই সংসদে আটটি আসনে জয়ী হয় তারা। ২০১৩ সালে আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ১৩। ২০১৭ সালে খরা দেখা দিলেও, ২০২২ সালে ফের ১৪টি আসনে জয়ী হয় তারা। রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি বরাবর রাজতন্ত্র এবং হিন্দুরাষ্ট্রের সমর্থক। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, নেপালের মোট জনসংখ্যার ৮১.১৯ শতাংশ হিন্দু। নেপালকে হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করার পক্ষে সওয়াল করতে শোনা যায় ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও। ২০১৫ সালে নেপাল সফরে গিয়ে একটি সভা করেন যোগী। সেখানে নেপালকে হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।
নেপালের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী সুনীল কৈরালাকে চিঠিও লেখেন যোগী। চিঠিতে গোমাংস নিষিদ্ধ থেকে ধর্মান্তরণ নিষিদ্ধ করা আর্জি জানান। পাশাপাশি, নেপালকে পুনরায় হিন্দুরাষ্ট্রের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও লেখেন তিনি। লখনউয়ে একাধিক বার জ্ঞানেন্দ্রকে আপ্যায়নও করেন যোগী। সেই নিয়ে নেপালের বিশিষ্ট নাগরিকরা একটি বিবৃতিও জারি করেন সম্প্রতি যাতে বলা হয়, "নেপালের সিংহাসনে ফিরতে ভারতের রাজনীতিকদের কাছে হত্যে দিয়েছেন জ্ঞানেন্দ্র শাহ। নয়াদিল্লির রাজনীতিকরা লাগাতার প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে চলেছে"।
রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে, হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে যেমন বিক্ষোভ চলছে নেপালে, তেমনই রাজতন্ত্র বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনও রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। শুক্রবার কাঠমাণ্ডুতে মিছিল করে সোশ্যালিস্ট ফ্রন্ট। স্লোগান ওঠে, 'রাজতন্ত্র নিপাত যাক', 'গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক'। কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল, CPN-Unified Socialist রাস্তায় নামে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
