WB Election 2021: নাম ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট, ভোটের আগে নিজের দল ঘোষণা ফুরফুরা শরিফ পীরজাদার, নিশানা বিজেপি-তৃণমূলকে
'একসময়ে মমতাকে ভরসা করেছিলাম। পরে দেখেছি, সব আশা পূরণ হয়নি', বললেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি
অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীপক ঘোষ: রাজনীতির ময়দানে নিজের দল নামিয়েই তৃণমূল-বিজেপিকে একসঙ্গে নিশানা করলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি।
কয়েকদিন ধরেই কখনও আসাদউদ্দিন ওয়েসির মিম, কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করে জল মাপছিলেন আব্বাস। অবশেষে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে, নিজের দল ঘোষণা করলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা। নাম ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট।
আব্বাস সিদ্দিকি বলেন, বিজেপিকে আটকাতে হচ্ছে। এই কারণে অন্য দলের ওপর বিশ্বাস করতে পারছি না। একসময়ে মমতাকে ভরসা করেছিলাম। পরে দেখেছি, সব আশা পূরণ হয়নি। তাই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছি না।
সম্প্রতি আব্বাসের দলের সঙ্গে বাংলার ভোটে জোটের ঘোষণা করেছিলেন মিমের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ৩ জানুয়ারি ফুরফরা শরিফে এসে আব্বাসের প্রতি আস্থার কথাও জানান ওয়েসি। এই প্রেক্ষিতে, তৃণমূলের দাবি, সম্প্রতি বিহার কিংবা তার আগে উত্তরপ্রদেশে মিম যেভাবে সংখ্যালঘু ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে, এরাজ্যে আব্বাস সিদ্দিকিও সেই উদ্দেশেই দল নামাচ্ছেন।
তৃণমূল নেতা ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, আব্বাসের দলকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। বিহারে মিমের মতো দল বিজেপিকে জিতে আসতে সাহায্য করেছে। বাংলায় এসব চলবে না। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, মিম-শিম যেই আসুক, কিছু করতে পারবে না। বাংলার মানুষ সচেতন।
ভাইপো আব্বাসের রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্তে তিনি ক্ষোভ লুকিয়ে রাখেননি কাকা ত্বহা সিদ্দিকি। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা বলেন, এটা আমাদের লজ্জা। ফুরফুরার পীর সাহেবদের লজ্জা। পীর সাহেব বংশের কোনও ছেলে এই পথে হাঁটেনি। মুসলিমদের ভোট ভাগ করার জন্য বিজেপি ও আরএসএস থেকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে ভাগ করতে পারবে না। আরেক পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি বলেন, মুসলিম ভোট ভাগের প্রশ্ন কেন করেন। হিন্দু ভোট নিয়ে তো প্রশ্ন হয় না।
এদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গেও আব্বাস সিদ্দিকি একাধিকবার আলোচনায় বসেছেন। সূত্রের খবর, সোমেন মিত্রের ছেলে রোহনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আব্বাস। কংগ্রেসের তরফে আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানও। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম ভোট প্রায় ৩০ শতাংশ।
২০১১ থেকে এই ভোটব্যাঙ্কের প্রায় পুরোটাই তৃণমূলের দখলে। কিন্তু, আব্বাস সিদ্দিকির দল গঠনের পর কি এই সমীকরণ বদলাবে? ইতিহাস বলছে, অতীতে মুসলিমভিত্তিক কোনও দল বাংলায় সেভাবে জমি শক্ত করতে পারেনি।
১৯৭০ সালে অজয় মুখোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় মুসলিম লিগ ছিল। কিন্তু, পরে সেই দলের অস্তিত্ব আর দেখা যায়নি। সিদ্দিকুল্লাহ্ চৌধুরী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া নামে দল তৈরি করে ভোটে লড়েও সুবিধা করতে পারেননি।
ভোটে জিততে তাঁকে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে হয়েছে। মুর্শিদাবাদে ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং সোশাল ডেমোক্রাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া নামে দু’টি ‘মুসলিম’ ভিত্তিক পার্টি ভোটে লড়ে। কিন্তু, কোনওদিনই এই দুই দল কোনওদিনই সার্বিকভাবে মুসলিমদের মধ্যে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি।
আব্বাস উদ্দিনের দল কী পারবে? তারা ভোটে নেমে কার সুবিধা করে দেবে? এটাই বড় প্রশ্ন।