Supreme Court: নাবালিকার স্তন খামচে ধরা ধর্ষণের চেষ্টা নয়? এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ, কেন্দ্র ও রাজ্যের জবাব তলব সুপ্রিম কোর্টের
Allahabad High Court: উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার এবং কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের জবাবও তলব করা হয়েছে।

নয়াদিল্লি: নাবালিকার স্তন খামচে ধরা, পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দেওয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা বলে মানতে রাজি হয়নি এলাহাবাদ হাইকোর্ট। তাদের সেই রায়ের উপর এবার স্থগিতাদেশ দিল দেশের সুপ্রিম কোর্ট। এলাহাবাদ যে মন্তব্য করেছে, তাতে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে বলেও জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। গোটা ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার এবং কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের জবাবও তলব করা হয়েছে।
বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিনের বেঞ্চ এলাহাবাদ হাইকোর্টের ওই বিতর্কিত রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এলাহাবাদ হাইকোর্টর তীব্র সমালোচনা করে আদালত বলে, "যিনি রায় দিয়েছেন, তাঁর মধ্যে সংবেদনশীলতার অভাব দেখে আমরা মর্মাহত। মুহূর্তের উত্তেজনায় এমন মন্তব্য করা হয়নি। বরং চার মাস ধরে বিষয়টি আটকে রেখে, তার পর ওই রায় দেওয়া হয়। অর্থাৎ যথেষ্ট মাথা খাটানো হয়েছিল। মামলা এই পর্যায়ে থাকলে সাধারণত স্থগিতাদেশ দিই না আমরা। কিন্তু রায়ের ২১, ২৪ এবং ২৬ নম্বর প্যারাগ্রাফে যে যে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে, তা আইনের বাইরে এবং তা থেকে অমানবিক আচরণই ফুটে ইঠেছে। তাই ওই পর্যবেক্ষণগুলি স্থগিত রাখছি।"
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি জানান, কিছু রায় স্থগিত রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিচারপতি গাভাই তাতে বলেন, "বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। বিচারপতির অসংবেদনশীলতা চোখে পড়ার মতো। সমন পাঠানোর সময় হয়েছিল। বিচারপতির বিরুদ্ধে এমন শব্দ ব্য়বহার করতে হচ্ছে, সত্যিই দুঃখিত আমরা।"
এলাহাবাদ হাইকোর্টের ওই বিতর্কিত রায় নিয়ে 'We the Women of India' নামের একটি সংগঠন সরব হওয়ার পর, সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। নির্যাতিতার মা-ও এর পর শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। যে রায় নিয়ে বিতর্ক, গত ১৭ মার্চ এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর মিশ্র সেটি শোনান। নিম্ন আদালতের সমনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্তরা। সেই আবেদনের শুনানিতেই বিতর্কিত মন্তব্য করেন বিচারপতি মিশ্র।
যে মামলাকে ঘিরে এই বিতর্ক, সেটি ২০২১ সালের। সেবছর উত্তরপ্রদেশের কাসগঞ্জে ১১ বছরের এক বালিকার উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বালিকার উপর নির্যাতন চালানো হয় বলে দায়ের হয় অভিযোগ। জানা যায়, পবন এবং আকাশ নামের দুই যুবক মেয়েটির স্তন খামচে ধরে। মেয়েটি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তার পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দেয় অভিযুক্তরা। এর পর মেয়েটিকে টেনে হিঁচড়ে তারা সাঁকোর নীচে যাওয়ার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল থেকে চম্পট দেয়।
সেই মামলায় প্রথমে পবন এবং আকাশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়। কাসগঞ্জ ট্রায়াল কোর্টের নির্দেশে মামলা দায়ের হয় POCSO আইনের ১৮ নম্বর ধারাতেও। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের বেঞ্চ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩৫৪-বি (জোরপূর্বক বিবস্ত্র করার চেষ্টা) এবং POCSO আইনের ৯/১০ ধারায় (যৌন নির্যাতন) মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
লঘু আইনে মামলা দায়ের করা হবে কেন প্রশ্ন উঠলে আদালত বলে, "অভিযুক্ত পবন এবং আকাশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এবং বাস্তবে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা খাটে না। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা দায়ের করতে গেলে সরকারি কৌঁসুলিকে প্রমাণ দিতে হবে, যে ধর্ষণের দিকেই এগোচ্ছিল ঘটনা। অপরাধ ঘটানোর প্রস্তুতি এবং প্রকৃত প্রচেষ্টার পার্থক্য রয়েছে, যা বৃহত্তর সঙ্কল্পের মধ্যে নিহিত।"
অভিযুক্তদের মধ্যে একজনের আইনজীবী যুক্তি দেন, ট্রায়াল কোর্টে চার্জগঠনের ক্ষেত্রে তদন্তে প্রাপ্ত প্রমাণপত্র খতিয়ে দেখার কথা নয় ট্রায়াল কোর্টের। অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে প্রাথমিক একটি মামলা দায়ের করলেই হয়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে আদালত বলে, "অভিযুক্তদের কারণেই নির্যাতিতাকে নগ্ন হতে হয় বা তাঁর পোশাক খুলে যায় বলে সাক্ষীদের কেউই জানাননি। অভিযুক্তরা অন্তর্স্পর্শী যৌন অপরাধ ঘটাতে যাচ্ছিলেন বলেও নেই অভিযোগ।"
মামলার শুনানি চলাকালীন আদালত আরও জানায় যে, অভিযুক্তরা নির্যাতিতাকে ধর্ষণ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল বলে ধারণা মেলে না রেকর্ডে থাকা তথ্য় থেকে। আকাশের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ভাবে যে অভিযোগ রয়েছে, তা হল, সে নির্যাতিতাকে সাঁকোর নীচে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল এবং তার পাজামার দড়ি ছিঁড়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই কারণেই নির্যাতিতা নগ্ন হয়ে যায় বা তার পোশাক খুলে যায় বলে জানাননি সাক্ষীদের কেউ। নির্যাতিতার উপর অন্তর্স্পর্শী যৌন নির্যাতন চালানোর চেষ্টা হচ্ছিল বলে নেই কোনও অভিযোগ।" এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই রায় নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। শেষ পর্যন্ত ওই রায়ে এদিন স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
