Kashi Vishwanath Dham: মহাদেব এখানে স্বয়ম্ভূ, মনের ইচ্ছে পূরণ করতেই কাশী বিশ্বনাথে ছুটে আসেন ভক্তরা
Kashi Vishwanath Temple:কাশী বিশ্বনাথের মন্দির বিশ্বেশ্বর মন্দির নামেও পরিচিত। কাশীতে মৃত্যু হলে এই জন্ম মৃত্যুর বৃত্তাকার চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
কলকাতা: দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি তীর্থস্থান কাশী বিশ্বনাথ মন্দির (Kashi Viswanath Temple), আজ কাশী-বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই মন্দির অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। প্রতি বছর লক্ষাধিক পূণ্যার্থী বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করতে বারাণসী বা কাশীতে আসেন। মহাদেব (Mahadev) এখানে বিশ্বনাথ নামে পরিচিত। হিন্দু পুরাণে এই মন্দিরটির উল্লেখ পাওয়া যায়। মন্দিরটি শৈবধর্মের প্রধান কেন্দ্রগুলির অন্যতম। অতীতে বহুবার এই মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়েছে।
কাশী বিশ্বনাথের মন্দির বিশ্বেশ্বর মন্দির নামেও পরিচিত। এই মন্দিরটি মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয় বলে কথিত আছে। কাশীতে মৃত্যু হলে এই জন্ম মৃত্যুর বৃত্তাকার চক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। এখানে যাঁর মৃত্যু হয়, স্বয়ং মহাদেব তাঁর কানে তারক মন্ত্র দেন বলে প্রচলিত বিশ্বাস। কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে পার্থনা করলে সব মনোকামনা পূরণ হয় বলে ভক্তেরা বিশ্বাস করেন।
গঙ্গা নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বিশ্বনাথের এই বহু প্রাচীন মন্দির। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এই বিশ্বনাথের মন্দির। মনে করা হয় বিশ্বনাথের মন্দিরই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম লিঙ্গ। পুরাণে কথিত আছে যে স্বয়ং মহাদেব একবার ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে কলহ থামাতে একটি আলোর শিখায় স্বর্গ, মর্ত্য এবং পৃথিবীকে বিদ্ধ করেছিলেন। সেই আলোর শিখা থেকেই এই জ্যোতির্লিঙ্গের সৃষ্টি। এই জ্যোতির্লিঙ্গের সৃষ্টি করে মহাদেব প্রমাণ করে দেন যে সকল দেবতার থেকে তিনিই সেরা, তিনি দেবাদিদেব।
কাশীতে বিশ্বনাথের মন্দিরে যাওয়ার যে রাস্তা, তা বিশ্বনাথ লেন নামে পরিচিত। এই পথ ধরে সোজা এগিয়ে গেলেই বিশ্বনাথ মন্দিরে পৌঁছে যাওয়া যায়। মন্দিরটির গঠনশৈলীও অসাধারণ। এর চূড়াটি ১৫.৫ মিটার পুরু সোনার পাত দিয়ে বাঁধানো। সেই কারণে এটি স্বর্ণ মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরের গর্ভগৃহে রয়েছে শিবলিঙ্গটি।
আরও পড়ুন, রহস্যময় এই শিব মন্দিরে প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ হয় ভক্তদের! স্ট্যাম্প পেপারে মহাদেবের কাছে জমা পড়ে আবেদন
শিবপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণু তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে বিবাদে রত হন। তাদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে ভেদ করে জ্যোতির্লিঙ্গ নামে এক বিশাল অন্তহীন আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা এই লিঙ্গের উৎস অনুসন্ধান করতে যান। ব্রহ্মা যান উপর দিকে এবং বিষ্ণু নামেন নিচের দিকে। কিন্তু তারা কেউই এই লিঙ্গের উৎস খুঁজে পাননা। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি উৎসটি খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু তার পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব তখন একটি দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে অনুষ্ঠানে তার কোনো স্থান হবে না। অন্যদিকে সত্য কথা বলার জন্য তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ করে বলেন যে সৃষ্টির অন্তিমকাল পর্যন্ত তিনি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সেই অখণ্ড সর্বোচ্চ সত্যের প্রতীক, যার অংশ শিব নিজে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলিতে শিব স্বয়ং অগ্নিময় আলোকস্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শিবের ৬৪টি রূপভেদ রয়েছে। তবে এগুলির সঙ্গে জ্যোতির্লিঙ্গকে এক করা হয় না। প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের নির্দিষ্ট নাম আছে – এগুলি শিবের এক এক রূপ। প্রতিটি মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক এক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কাছে মণিকর্ণিকা ঘাট শাক্তদের পবিত্র তীর্থ অন্যতম শক্তিপীঠ। শৈব সাহিত্যে দক্ষযজ্ঞের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা শক্তিপীঠের উৎস-সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক আখ্যান। কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর শিব মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্রতম মন্দিরগুলির অন্যতম। আদি শঙ্করাচার্য, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ, গোস্বামী তুলসীদাস, স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী, গুরু নানক প্রমুখ ধর্মনেতারা এই মন্দির দর্শনে এসেছিলেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে এই মন্দির দর্শন করলে মোক্ষ লাভ করা সম্ভব।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে