Pathan Brothers Exclusive: পৌঁছে দিচ্ছেন রেশন, অক্সিজেন, ওষুধ, নীরবেই কাজ করে চলেছেন ইউসুফ-ইরফান
ইউসুফ ও ইরফান পাঠানের তো রাতের ঘুম উড়েছে। আর্তদের সেবায় নিজেদের নিমজ্জিত করে ফেলেছেন পাঠান ব্রাদার্স। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল হয়েছেন দুই সদ্য প্রাক্তন ক্রিকেটার। যদিও পুরো কাজটাই প্রচারবিমুখ হয়ে করছেন তাঁরা।
কলকাতা: এক সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে ক্রিকেট মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছেন দুই ভাই। একজনের বড় শট নেওয়ার দক্ষতার জন্য বল করার সময় বোলাররা উদ্বেগে থাকতেন। প্রথম আইপিএলে শেন ওয়ার্নের রাজস্থান রয়্যালসকে চ্যাম্পিয়ন করার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর। অন্যজন শুধু যে ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য় সমস্ত শট খেলতে পারতেন তাই নয়, বল হাতে তাঁর বিষাক্ত স্যুইং বিপক্ষ শিবিরে কাঁপুনি ধরাত। দুজনই ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে ফের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে নেমে পড়েছেন দুজনে। কারণ, প্রতিদ্বন্দ্বী যে এবার প্রবল পরাক্রমশালী। যার অভিশাপ গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে।
ইউসুফ ও ইরফান পাঠানের তো রাতের ঘুম উড়েছে। আর্তদের সেবায় নিজেদের নিমজ্জিত করে ফেলেছেন পাঠান ব্রাদার্স। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামিল হয়েছেন দুই সদ্য প্রাক্তন ক্রিকেটার। যদিও পুরো কাজটাই প্রচারবিমুখ হয়ে করছেন তাঁরা।
রবিবার বেলার দিকে বারবার ডায়াল করেও ইরফান পাঠানের মোবাইল ফোন স্যুইচড অফ আসছিল। ভাই কি শহরের বাইরে? দুপুরের দিকে বঢোদরা থেকে মোবাইল ফোনে এবিপি লাইভ-কে দাদা ইউসুফ বললেন, 'না, ও ঘুমোচ্ছে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। এত মানুষ সাহায্যপ্রার্থী। তাই এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।'
বঢোদরায় হাজার হাজার লোকের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন ইউসুফ ও ইরফান। সেই সঙ্গে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন দুই ভাই মিলে। ইউসুফ অবশ্য এসব নিয়ে নির্লিপ্ত। বলছেন, 'আমাদের সাধ্যের মধ্যে যা রয়েছে করছি। ঈশ্বর আমাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে যা দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কারও ওষুধ, ইঞ্জেকশন, অক্সিজেন বা রক্ত-প্লাজ়মা দরকার হলে সেগুলো খতিয়ে দেখে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ট্যুইটারে কেউ সাহায্য চাইলে চেষ্টা করছি যতটা করা যায়।'
তবে এসব নিয়ে বেশি লেখালিখি চাইছেন না সিনিয়র পাঠান। ইউসুফ বলছেন, 'আমরা প্রচার চাই না। লোকে মুখে মুকে শুনে জেনে গিয়েছে। মনে হয় না এমন কিছু মহৎ কাজ করছি। তবে আমরা গর্ব অনুভব করি বিপদের মধ্যে মানুষষের পাশে থাকতে পারছি বলে। আমাদের পরিবারের সকলেও ভীষণ খুশি।'
করোনাকালে শুধু বঢোদরায় নয়, গোটা দেশের প্রায় ১৮-২০টি শহরে কাজ শুরু করেছেন ইউসুফ ও ইরফান। 'আমাদের ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (ক্রিকেট অ্যাকাডেমি অফ পাঠানস বা ক্যাপ) ১৮-২০টি শাখা রয়েছে। সেই ক্যাপের শাখা থেকে ফুড প্যাকেট বিলি করেছি। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। দিল্লি, নয়ডা, বেঙ্গালুরু. হায়দরাবাদ, গুজরাত, কাশ্মীর, সর্বত্র ক্যাপের মাধ্যমে কাজ করছি,' বলছিলেন ইউসুফ। যোগ করলেন, 'কারও হাসপাতালে বেড প্রয়োজন হলে সে ব্যাপারেও সাহায্য করছি। আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে সেই কাজগুলিও শুরু করে দিতে পারব।'
প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইরফান পরে ফোনে বললেন, 'আমি ও দাদা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে যা টাকা রোজগার করেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন থেকে যা উপার্জন হয়েছে, সব করোনার ত্রাণে দিয়ে দিচ্ছি। দুজনে একসঙ্গে কাজ করছি। এখনও পর্যন্ত নিজেদের রোজগারের টাকায় করছি। তবে ইচ্ছে রয়েছে আমাদের ফাউন্ডেশনকে (মেহমুদ খান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট) আরও বড় করে যত বেশি সম্ভব মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, সেই জায়গাটা তৈরি করতে।'
কীভাবে কাজ করছেন? চারিদিকে এত মানুষের হাহাকার... ইরফান বলছেন, 'আমরা প্রথমে জেনে নিচ্ছি করোনা আক্রান্ত কোনও পরিবারে কতজন সদস্য রয়েছেন। সেই অনুযায়ী এক মাসের রেশন পৌঁছে দিচ্ছি বাড়িতে। পাশাপাশি লকডাউনে যে সমস্ত মানুষ কাজ হারিয়েছেন, তাঁদের বাড়িতেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।'
বঢোদরা আরও দুই তারকা ক্রিকেটার হার্দিক ও ক্রুণাল পাণ্ড্যর সঙ্গে ত্রাণ বিলি নিয়ে কোনও কথা হয়েছে? ইউসুফ বলছিলেন, 'প্রত্যেকে নিজের নিজের মতো করে কাজ করছে। তবে বাকিরা কে কী করছে তা জানি না। আমরা কোনও প্রচার চাই না। কোনও দুঃস্থ মানুষকে সাহায্য করার সময় ছবি তুলে রাখলাম, ওভাবে আমরা পারি না। করছিও না।'
দুই ভাই মিলে বঢোদরা এবং অন্যত্রও বাড়ি বাড়ি মাস্ক, স্যানিটাইজার পৌঁছে দিয়েছেন। ইউসুফ-ইরফানের আবেদন, 'আমরা সব জায়গায় পৌঁছতে পারছি না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাই মিলে বিপন্ন মানুষের পাশে না দাঁড়ালে সমাজ বাঁচবে কী করে।'