Hyderabad FC vs ATK MB: ফাইনালের পথে? গতবারের চ্যাম্পিয়নদের ডেরায় গিয়ে রুখে দিল এটিকে মোহনবাগান
ATK MB vs Hyderabad FC: গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি-কে তাদের ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্রয়ে আটকে দিয়ে আইএসএলের ফাইনালে ওঠার আশা জিইয়ে রাখল এটিকে মোহনবাগান।
হায়দরাবাদ: গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি-কে (Hyderabad FC) তাদের ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্রয়ে আটকে দিয়ে আইএসএলের ফাইনালে ওঠার আশা জিইয়ে রাখল এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan)। এই ড্রয়ের ফলে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠে মানসিক ভাবে বেশ কিছুটা এগিয়ে থেকেই হয়তো নামবে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
বৃহস্পতিবার জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে কোনও গোল করতে না পারলেও ম্যাচের সবচেয়ে সহজ দুটি গোলের সুযোগ পায় এটিকে মোহনবাগান-ই। প্রীতম কোটাল ও মনবীর সিংহ এই দুটি গোল করতে পারলে এ দিন জয়ের হাসি মুখে নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত তারা। গত মরসুমে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে যে সমস্ত ভুল করে হেরে গিয়েছিল তারা, এ বার আর সেই ভুল করেনি সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ফলে এ বার তারা ঘরের মাঠে ফিরতি সেমিফাইনালে মানসিক ভাবে এগিয়ে থেকেই মাঠে নামতে পারবে।
এ দিন প্রথমার্ধ যদি হয় হায়দরাবাদের, দ্বিতীয়ার্ধ অবশ্যই এটিকে মোহনবাগানের। বিরতির আগে পর্যন্ত হায়দরাবাদ যেখানে দুটি শট গোলে রাখে, সেখানে এটিকে মোহনবাগান একটি গোলমুখী শট নেয়। কিন্তু ম্যাচের শেষে দেখা যায় এটিকে মোহনবাগানের গোলমুখী শটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত। সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে আর মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পারে হায়দরাবাদ।
তাদের নাইজিরিয়ান গোলমেশিন বার্থোলোমিউ ওগবেচে শেষ আধ ঘণ্টা মাঠে থাকলেও তাঁকে এতটাই কড়া নজরে রাখে এটিকে মোহনবাগান ডিফেন্স যে, একটিও গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেননি তিনি। গোলে একটিও শট নিতে পারেননি ওগবেচে। হায়দরাবাদ যেখানে ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করে, সেখানে এটিকে মোহনবাগান সাতটি সুযোগ তৈরি করে নেয়। কিন্তু দুই দলেরই রক্ষণ এ দিন ক্লিন শিট রাখার উদ্দেশ্যে পুরোপুরি সফল।
প্রথম দলে একটি করে পরিবর্তন করে এ দিন মাঠে নামে দুই দলই। এটিকে মোহনবাগান আশিক কুরুনিয়ানের জায়গায় লিস্টন কোলাসোকে প্রথম এগারোয় রাখে। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এলেও ব্রেন্ডান হ্যামিলকে এ দিন ডাগ আউটে দেখা যায়। হায়দরাবাদের প্রথম একাদশে এ দিন নিম দোরজির জায়গায় ফেরেন চিঙলেনসানা সিংহ।
এ দিন শুরুর পাঁচ মিনিট এটিকে মোহনবাগানকে পরখ করে নেওয়ার পরে ক্রমশ আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে শুরু করে হায়দরাবাদ এফসি। ১১ মিনিটের মাথাতেই প্রথম গোল করে ফেলতে পারতেন জোয়েল চিয়ানিজ। বাঁ দিক থেকে হালিচরণ নারজারির ক্রসে জোরালো হেড করেন তিনি। বল গোলে ঢোকার ঠিক আগে নিজের ডানদিকে ডাইভ দিয়ে তা আটকে দেন সবুজ-মেরুন গোলকিপার বিশাল কয়েথ। এর মিনিট দুয়েকের মধ্যে হাভিয়ে সিভেরিওর হেড চলে যায় সোজা বিশালের হাতে।
এর পর থেকে আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তোলেন সিভেরিও, চিয়ানিজরা। ঘন ঘন অ্যাটাকিং থার্ডে ঢুকে আক্রমণ শানায় তারা। তাদের আটকাতে রীতিমতো কড়া পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় প্রীতম কোটাল, স্লাভকো দামিয়ানোভিচদের। এতটাই চাপে পড়ে যায় এটিকে মোহনবাগান যে মাঝমাঠে বুমৌস, পুইতিয়া, কোলাসোরা কার্যত অচল হয়ে পড়েন। কিছুটা চেষ্টা চালিয়ে যান কার্ল ম্যাকহিউ। তবে চাপ সামলাতে তাঁকে প্রায়ই নীচে নেমে খেলতে হয়। ফলে আক্রমণের ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেননি।
প্রথম আধ ঘণ্টায় প্রবল চাপ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি তারা। সেই দাপুটে মেজাজেই পাওয়া যায়নি সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। চাপের মুখে প্রচুর ভুল পাসও খেলেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা, যার ফলে আক্রমণের জায়গা তৈরি করতে পারেনি তারা।
এই চাপের মধ্যেও অবশ্য ৩৮ মিনিটের মাথায় যে সুযোগটি পায় কলকাতার দল, তা হাতছাড়া হওয়ায় বোঝা যায় দিনটা তাদের নয়। বক্সের বাইরে থেকে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের একটি হাওয়ায় ভাসানো বলে হেড করে প্রীতমকে কার্যত গোল সাজিয়ে দেন শুভাশিস বোস। প্রীতম গোললাইনের সামনে গিয়ে তাতে পা লাগালেও বল বারে লেগে ফিরে আসে।
শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে এটিকে মোহনবাগান এবং সেই পরিকল্পনা কার্যকরও করে তারা। ৫২ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে ওঠা আশিস রাই নারজারির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে সোজা গোলে শট নিলেও তা আটকে দেন হায়দরাবাদের গোলকিপার গুরমিত সিংহ। তার আগে ৪৯ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেন পেট্রাটস। কিন্তু তা সোজা কিপারের হাতে চলে যায়।
পড়েন হায়দরাবাদের ফুটবলাররাও। বলা যায় এটিকে মোহনবাগান এ দিন গোল করতে না পারলেও গোল না খাওয়ার যে প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিল, তাতে তারা পুরোপুরি সফল। ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে থেকে একটি দূরপাল্লার শট নেন পেট্রাটস। কিন্তু সহজেই বলের নাগাল পেয়ে যান গুরমিত। ঘরের মাঠে হার বাঁচিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা যায় ওগবেচেদের।