Earliest Galaxies: দেশ-কালের সীমা অতিক্রম করল বিজ্ঞান, ক্যামেরায় ধরা পড়ল সৃষ্টির আদি রহস্য
NASA Updates: গত বছর ২৫ ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি মহাশূন্য়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রায় একমাস ছুটে চলার পর পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের গন্তব্যে পৌঁছয়।
নয়াদিল্লি: ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিতত্ত্ব খোঁজার প্রচেষ্টাকে আক্ষরিক অর্থেই শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA)। তাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়ব মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা, যা এক ঝলকে দেখলে শিল্পীর তুলিতে ফুটে ওঠা দীপাবলির রাত বলে মনে হতে বাধ্য। কিন্তু আতশবাজি নয়, ঘন কালো ক্য়ানভাসে যে আলোর ঝিকিমিকি দেখা গিয়েছে, তা আসলে গ্রহ-নক্ষত্র সমেত গুচ্ছ গুচ্ছ ছায়াপথ। তবে এর মধ্যেই রয়েছে আসল চমক। নতুন কোনও ব্রহ্মাণ্ড নয়, সময়ের চাকা কার্যত ঘুরিয়ে ১৩৮০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের সূচনাপর্বের (Earliest Galaxies) ছবি ধরা পড়েছে ক্যামেরার লেন্সে। অর্থাৎ মহাশূন্য থেকে সৃষ্টির আদিপর্বকেই কার্যত তুলে এনেছে নাসা।
সূচনা পর্বে কেমন ছিল ব্রহ্মাণ্ড
গত বছর ২৫ ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি (James Webb Space Telescope) মহাশূন্য়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রায় একমাস ছুটে চলার পর পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের গন্তব্যে পৌঁছয়। মহাশূন্যের যাবতীয় ঘটনাবলীর উপর নজরদারি চালানোর কার্য সঁপে দেওয়া হলেও, ওই টেলিস্কোপের মূল লক্ষ্য দু'টি, ব্রহ্মাণ্ডে জ্বলে ওঠা আদি নক্ষত্রগুলির ছবি তোলা এবং দূর-দূরান্তের গ্রহগুলি প্রাণধারণের উপযোগী কিনা, তদন্ত চালানো। এর মধ্যে প্রথমটিতে সফল হয়েছে সেটি। সোমবার হোটাইট হাউস থেকে তার ঘোষণা করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ওই টেলিস্কোপে সাড়ে ছয় মিটার চওড়া একটি স্বর্ণাভ আয়না রয়েছে। অবরোহিত রশ্মি ধরে নেওয়ার উপযুক্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও বসানো রয়েছে তাতে। তাতেই বিকৃত ছায়াপথ ধরা পড়েছে, বিগ ব্যাং-এর পর ৬০ কোটি বছর আগেও যেগুলির অস্তিত্ব ছিল মহাশূন্যে। আজ থেকে ৬০ কোটি বছর আগে যেগুলির। নাসা, তাদের সহযোগী ইউরোপিয়ান এবং কানাডিয়ান মহাকাশ সংস্থা মিলে মঙ্গলবার আরও একাধিক ছবি প্রকাশ করা হবে। তবে বাইডেনের হাতে প্রকাশিত প্রথম ছবিটিই সাড়া ফেলে দিয়েছে। কারণ ব্রহ্মাণ্ডের একেবারে সূচনাপর্বের ছবি ধরা পড়েছে তাতে।
আরও পড়ুন: Google pay: UPI আইডি বদলাতে চান, এই কয়েকটি সহজ ধাপে পাবেন সমাধান
যে ছায়াপথের ছবি ধরা পড়েছে টেলিস্কোপের ক্যামেরায়, পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ। কিন্তু এত স্পষ্ট, এত উজ্জ্বল ছবি আগে পাওয়া যায়নি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ১৩৮০ কোটি বছর আগে ব্রহ্মাণ্ডের সূচনাপর্বের অবস্থা ফুটে উঠেছে ছবিতে। নাসা-র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলশনের কথায়, "প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতিবেগ ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। তাই বর্তমানে নক্ষত্রের যে আলো আমরা দেখি, তা আসলে ১৩০০ বছরের যাত্রা পার করে আমাদের কাছে এসে পৌঁছচ্ছে। এটি প্রথম ছবি হলেও, আরও পিছনে যাচ্ছি আমরা। ব্রহ্মাণ্ডের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। একেবারে সূচনাপর্বেই ফিরছি আমরা।"
এই অভিযানের কথা বিশদে বর্ণনা করতে গিয়ে নাসা জানিয়েছে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পড়তে আট মিনিট সময় লাগে। অর্থাৎ আমরা সূর্যকে আট মিনিট আগের অবস্থায় দেখি। সূর্য হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলে, তা-ও আট মিনিট পর বুঝতে পারব আমরা। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। সেই নিরিখে আরও দূর-দূরান্তে যে সমস্ত নক্ষত্র রয়েছে, সেখান থেকে আলো এসে পৌঁছতে কয়েক বছর সময় লাগে। অর্থাৎ আমরা যখন সেই নক্ষত্রকে দেখি, কয়েক বছর আগের অবস্থায় তাকে দেখতে পাই।
মঙ্গলবার আরও ছবি প্রকাশ করা হবে
আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে যে সমস্ত নক্ষত্র রয়েছে, তার মধ্যে প্রক্সিমা সেন্টৌরির দূরত্ব পৃথিবীর চেয়ে সবচেয়ে কম। সেখান থেকে আলো এসে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় চার বছর। তাই বিগ ব্যাং-এর পর প্রথম যে নক্ষত্র সৃষ্টি হয়, তার আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছতে কোটি কোটি বছর সময় লাগার কথা। মহাশূন্য থেকে তাদের সেই সূচনাপর্বের অবস্থানই ধরা পড়েছে টেলিস্কোপে, এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা।