এক্সপ্লোর

Sadhguru : ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আশীর্বাদ হবে নাকি অভিশাপ ?

সদগুরু: এই মুহূর্তে, মানব সমাজের প্রায় নব্বই শতাংশ বা তারও বেশি মানুষ জীবন ধারণ করেন তাদের দৈহিক শক্তি এবং বুদ্ধির ক্ষমতার উপরে নির্ভর করে। কিন্তু যা-কিছু আপনি এখন করতে পারেন, ভবিষ্যতে সে-সবই একটা যন্ত্র আপনার হয়ে করে দেবে। যা-কিছু আপনি করছেন স্মৃতিতে সঞ্চয় করে, স্মৃতিশক্তিকে ব্যবহার করে, স্মৃতিতে সঞ্চিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং এই স্মৃতির অভিব্যক্তির মাধ্যমে এবং নিজের বুদ্ধি যেটাকে আপনি নিজের সত্তা বলে ভাবছেন সেটাকে কাজে লাগিয়ে যা-কিছুই আপনি করছেন, একটা সময় বাদে সেই সবকিছুই একটা যন্ত্র করে দিতে পারবে।

যখন যন্ত্রই সব কিছু করতে পারবে, তখন অনিবার্যভাবেই আপনি চাইবেন “আপনি আসলে যা” “তার” গভীরতর স্তরগুলোকে অন্বেষণ করতে। এবং সেই দিনটা এক অসাধারণ দিন হবে, কারণ এর অর্থ হল তখন কাজ নেই, ছুটি। আমরা জীবন ধারণের জন্য কাজ করব না। তখন আমরা জীবনকে সম্পূর্ণ এক অন্য দৃষ্টিতে দেখতে পারব।

স্মৃতির ওপারে রয়েছে যে স্তর 

যাকে আপনি নিজের শরীর ও নিজের মন বলে জানেন, তা হল এক রকম সঞ্চিত স্মৃতি। আপনার স্মৃতিই আপনার আজকের অস্তিত্বটা গড়ে তুলেছে। যেমন ধরুন, যদি একজন পুরুষ মানুষ এক টুকরো পাউরুটি খায়, তাহলে সেই পাউরুটি-টা পুরুষ মানুষে পরিণত হয়। আবার যদি কোনও মহিলা ওই টুকরোটি খান, তাহলে তা মহিলায় পরিণত হয়ে যায়। ওই একই টুকরো যদি একটি কুকুর খায়, তো সেটা কুকুরে পরিণত হয়। পাউরুটিটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে! কিন্তু কৃতিত্বটা পাউরুটির নয়, বরং আমাদের শরীরের গঠনতন্ত্র যে স্মৃতি ধারণ করে আছে, সেই স্মৃতিই পাউরুটি-কে পুরুষ, মহিলা অথবা কুকুরে রূপান্তরিত করছে।

আপনার শরীরের গঠনটাই স্মৃতির একটি বিশেষ মাত্রার প্রকাশ। স্মৃতি নিজেও আসলে একটি নির্ধারক সীমা। কিন্তু বুদ্ধির একটি বিশেষ স্তর রয়েছে যাকে আমরা বলি চিত্ত, কিংবা আধুনিক কালের পরিভাষায়, একে সাধারণভাবে চেতনা বা চৈতন্য বলা যেতে পারে। বুদ্ধির এই স্তরটিতে কোনও স্মৃতি নেই। আর যেহেতু এর স্মৃতি নেই, তাই এটার কোনও নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতাও নেই।

মানুষের বুদ্ধি হল একটা দ্বীপ। বুদ্ধির মাধ্যমে যা-কিছু সৃষ্টি বা উৎপাদন বা উদ্ভাবন করেন তা সবই হল একেকটি ছোট ছোট দ্বীপ, এমনকি টেকনোলজি বা প্রযুক্তিও। চৈতন্য হল সেই মহাসাগর, যার মধ্যে আমরা রয়েছি। চৈতন্য হল এমন এক বুদ্ধিমত্তা যা “আমি”, “তুমি”, “এটা”, “ওটা” এই জাতীয় পরিচয়ের সাথে জড়িত নয়। এটা হল বুদ্ধিমত্তার সেই মাত্রা যার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই।

আমাদের প্রযুক্তিগত ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে, আমাদের এই প্রচেষ্টাও করতে হবে যাতে করে  মানুষকে আরও উন্নত মানের বানানো যায়। যাতে তাঁরা বুদ্ধির সীমাবদ্ধতাকে পেরিয়ে যেতে পারেন এবং বুদ্ধিমত্তার এক গভীরতর স্তরে পৌঁছাতে পারেন যা আমাদের ভিতরেই থাকা জীবনের স্বয়ং উৎস।

চেতনার পরিকাঠামো

যদি কোনও কিছুকে বাস্তবে সম্ভব করে তুলতে হয়, তাহলে তার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমান মানব শক্তি, সময় ও সম্পদ লাগাতে হয়। অর্থাৎ, আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে চৈতন্য-বোধ বা সচেতনতার উপর। এখনও পর্যন্ত আমরা কেবলমাত্র আমাদের আত্মরক্ষা বা জীবন-ধারণ বা টিকে থাকাকে নিশ্চিত করতেই বিনিয়োগ করে এসেছি। কিন্তু যখন এই সব প্রযুক্তিগুলো এক এক করে বাস্তবে পরিণত হতে থাকবে, বেচেঁ থাকাটা তখন আর কোনও সমস্যাই হবে না। আত্মরক্ষা যখন আর সমস্যা হবে না, তখন নিশ্চিত ভাবেই আমরা বিনিয়োগ করতে আরম্ভ করব সেই দিশায়। কিন্তু যত শীঘ্র চেতনা বোধ-এ বিনিয়োগ করা যায় ততই প্রযুক্তি নতুন নতুন সম্ভাবনা খুলে দিলে ও আমরা সেই সম্ভাবনাগুলোতে সরে আসতে শুরু করলে, তখন এর ফলে আমরা কম বিপথে গমন করব।

প্রযুক্তি সব সময়ই একটা দুমুখো তলোয়ার। “আপনি কে” তার উপর নির্ভর করছে আপনি কোন দিকে এটাকে চালাবেন সেটা। আপনার ব্যক্তিত্ব এবং অভিজ্ঞতা “সবাইকে আপন করে নেয় এমন” না কি আপনার ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা “বিভেদকারী বা সবাইকে পর করে দেখে এমন”, সেটাই নির্ধারণ করবে যে এই তলোয়ারটি কোন দিকে আন্দলিত হবে।

তো মানব সমাজে চৈতন্যকে বড় আকারে বিকশিত করার জন্য আমাদের কী করতে হবে? প্রত্যেক প্রজন্মেই, খুবই সচেতন সত্তাদের উপস্থিতি থেকে এসেছে। কিন্তু কিছু প্রজন্মে এবং কোনও কোনও সমাজে এনাদের কথা শোনা হয়েছে। অন্যান্য সমাজে এনারা উপেক্ষিত হয়েছেন। এই চেতনা বোধ, যা মাত্রাহীন, ব্যাপ্তিহীন, তাকে নির্দেশ করে যে স্বর এবং যে-সব প্রক্রিয়াগুলো সচেতন হতে সাহায্য করে _ সেই স্বরকে, সেই প্রক্রিয়াগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার এবং সহজলভ্য করে তোলার সময় এবার এসেছে। 

অন্তরজগতের কল্যাণ সাধনের জন্য প্রযুক্তি

আমাদের চারপাশের কল্যাণ সাধনের জন্য যেমন টেকনোলজি বা প্রযুক্তি আছে, তেমনি আমাদের ভিতরেও একই জিনিস করার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রয়েছে। এই এতো পরিমান টেকনোলজি উপলব্ধ থাকা সত্ত্বেও আপনি যদি কীভাবে থাকতে হয় তা না জানেন, তাহলে আপনি এখনও ভাল নেই। আমরা যত আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছি তা মানবজাতির ইতিহাসে আগেকার কোনও প্রজন্ম দেখেনি। কিন্তু আমরা কি এটা দাবী করতে পারি যে আমরাই সবথেকে হাসি-খুশী আর অনন্যসাধারণ একটি প্রজন্ম? না!,.... মানুষ ভারসাম্য হারাচ্ছেন। আমি বলছিনা যে, আমাদের অবস্থা আগের অন্যান্য প্রজন্মদের থেকেও খারাপ, কিন্তু, আমরা যা চাই তা পাওয়ার জন্য অন্য সকল প্রাণীদের জীবনে যে পরিমান ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগ নিয়ে এসেছি, সেই তুলনায় বিচার করলে, আমরা অসাধারণ ভাল যে আছি তাও কিন্তু নয়।  

এই সব প্রযুক্তি আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে পারে, কিন্তু প্রকৃত মঙ্গল এনে দেয় না। তাই এটাই সময়, ভিতরের কল্যাণের দিকে মনোযোগ দেওয়ার। এই মুহূর্তে আপনার ভাল থাকাটা, আপনার চারপাশে কী আছে তার উপর নির্ভরশীল, আপনার ভিতরে কী আছে তার উপর নয়।

যদি আপনার শরীর আর মস্তিষ্ক আপনার নির্দেশ মেনে চলত, তাহলে কি নিজেকে জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে স্বাস্থ্যবান আর পরমানন্দময় রাখতেন না? আপনার হাতে যদি সুযোগটা থাকত, তাহলে অবশ্যই রাখতেন। আপনি যদি প্রতি মুহূর্তে আনন্দময় হয়ে না ওঠেন, তার মানে অবশ্যই আপনার শরীর এবং মস্তিষ্ক, আপনার নির্দেশ মেনে চলছে না। এর মানে, আপনি যথেষ্ট সচেতন নন।

সুতরাং আমাদের ওই দিকে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের শহরগুলোতে হাসপাতাল, স্কুল, শৌচাগার আর সমস্ত কিছুই রয়েছে। কিন্তু মানুষ বসে ধ্যান করবে, এমন কোনও জায়গা আছে কি? যখন টেকনোলজি আমরা এখন যা যা করছি তার বেশিরভাগটাই করে দিতে শুরু করবে, আর আপনি কী করতে, কিসের দরকারে বেঁচে আছেন তা ভেবে পাবেন না, ঠিক তখনই ভিতরের ভাল-থাকার দরকারটা সাংঘাতিক জরুরী হয়ে উঠবে। তো আমরা যদি সেই দিনটার জন্য তৈরি থাকতে চাই, তাহলে এটা খুবই জরুরী যে ভৌতিক পরিকাঠামো নির্মাণের সাথে সাথে, আমরা বিনিয়োগ করি মানুষ গড়ার পরিকাঠামোতেও, যা মন দেয় আমাদের অস্তিত্বের গভীরতম মর্মস্থল-এ।

সদগুরু একজন যোগী, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্ট সেলিং লেখক। তিনি ভারতবর্ষের প্রথম ৫০ জন প্রভাবশালী মানুষদের মধ্যে একজন। ২০১৭ সালে ভারত সরকার সদগুরুকে ব্যতিক্রমী এবং বিশিষ্ট সেবার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ বার্ষিক বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম গণ-অভিযান, কনশাস প্ল্যানেট – সেভ সয়েল (Conscious Planet - SaveSoil)-এর প্রতিষ্ঠাতা, যা পৃথিবী জুড়ে ৩৯০ কোটিরও বেশি মানুষকে স্পর্শ করেছে।

 

বিঃদ্রঃ - প্রতিবেদনটি এবিপি লাইভ কর্তৃক সম্পাদিত নয়

আরও দেখুন

ওপিনিয়ন

Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

West Bengal News Live : আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের জের, অভিনেত্রীকে সোশাল মিডিয়ায় ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের জের, অভিনেত্রীকে সোশাল মিডিয়ায় ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
Jawhar Sircar : 'যখন আমি দুর্নীতির কথা বলেছিলাম, তৃণমূলের ভাল লাগেনি, এখন অভিষেক...', ফিরহাদের OSD-প্রসঙ্গে সরব জহর
'যখন আমি দুর্নীতির কথা বলেছিলাম, তৃণমূলের ভাল লাগেনি, এখন অভিষেক...', ফিরহাদের OSD-প্রসঙ্গে সরব জহর
RG Kar News: আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
Sagore Dutta Hospital : 'সরকারি কর্মচারী হতে গেলে যে মার খেয়ে মরতে হবে?' সাগর দত্ত মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি
'সরকারি কর্মচারী হতে গেলে যে মার খেয়ে মরতে হবে?' সাগর দত্ত মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

RG Kar News: ৭৫তম বর্ষে অনাড়ম্বরভাবেই পুজোর আয়োজন করছে, সোদপুরের বিজয়পুর সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি | ABP Ananda LIVEKiran Rao: লাপতা লেডিজের উড়ান থেকে কলকাতায় এসে তাঁর ছবি তৈরির পরিকল্পনা, একান্ত আড্ডায় অকপট কিরণ | ABP Ananda LIVEJukti Takko (পর্ব ২) : কতদূর যায় নাগরিক-স্বর, বুঝিয়ে দিল আর জি কর।পথে প্রতিবাদের ঝড়, ভাঙতে পারবে দানব-গড়? | ABP Ananda LIVEJukti Takko (পর্ব ১) : কতদূর যায় নাগরিক-স্বর, বুঝিয়ে দিল আর জি কর।পথে প্রতিবাদের ঝড়, ভাঙতে পারবে দানব-গড়? | ABP Ananda LIVE

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
West Bengal News Live : আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের জের, অভিনেত্রীকে সোশাল মিডিয়ায় ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদের জের, অভিনেত্রীকে সোশাল মিডিয়ায় ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
Jawhar Sircar : 'যখন আমি দুর্নীতির কথা বলেছিলাম, তৃণমূলের ভাল লাগেনি, এখন অভিষেক...', ফিরহাদের OSD-প্রসঙ্গে সরব জহর
'যখন আমি দুর্নীতির কথা বলেছিলাম, তৃণমূলের ভাল লাগেনি, এখন অভিষেক...', ফিরহাদের OSD-প্রসঙ্গে সরব জহর
RG Kar News: আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ
Sagore Dutta Hospital : 'সরকারি কর্মচারী হতে গেলে যে মার খেয়ে মরতে হবে?' সাগর দত্ত মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি
'সরকারি কর্মচারী হতে গেলে যে মার খেয়ে মরতে হবে?' সাগর দত্ত মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি
'দেব কি দলকে জানিয়ে 'প্রধান' তৈরি করেছিলেন?' ছবি-বিতর্কে প্রশ্ন তুললেন রাজন্যা
'দেব কি দলকে জানিয়ে 'প্রধান' তৈরি করেছিলেন?' ছবি-বিতর্কে প্রশ্ন তুললেন রাজন্যা
NASA DART Mission: আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত পৃথিবী, ধাক্কা মেরে গ্রহাণুকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভিডিও সামনে এল
আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রস্তুত পৃথিবী, ধাক্কা মেরে গ্রহাণুকে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভিডিও সামনে এল
Monalisa Maity On Jukti Takko :  'তুমি মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু পরাজিত করতে পারো না', যুক্তি-তক্কোর মঞ্চে বললেন মোনালিসা মাইতি
'তুমি মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু পরাজিত করতে পারো না', যুক্তি-তক্কোর মঞ্চে বললেন মোনালিসা মাইতি
Viral News: কানের মধ্যেই বিস্ফোরণ ইয়ারবাডসে, চিরদিনের মত শ্রবণক্ষমতা হারালেন মহিলা
কানের মধ্যেই বিস্ফোরণ ইয়ারবাডসে, চিরদিনের মত শ্রবণক্ষমতা হারালেন মহিলা
Embed widget