Arambagh Snakebite Case: আরামবাগে বাড়িতেই সাপের ছোবল মহিলাকে, ওঝার কাছে ফেলে রেখেছিল পরিবার, উদ্ধার করল প্রশাসন
Hooghly News: হুগলির আরামবাগের অন্তর্গত মায়াপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের ডিহিবায়রা গ্রাম থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে।

বাপন সাঁতরা, আরামবাগ: বাড়িতেই বিষধর সাপের কামড় মহিলাকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, রোগিণীকে নিয়ে ওঝার কাছে হাজির পরিবার। খবর পেয়েই ছুটে এল প্রশাসন। ওঝার কাছ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হল রোগিণীকে। সটান নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হল হাসপাতালে। আর তাতেই প্রাণরক্ষা হল ওই মহিলার। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। সতর্ক করা হয়েছে ওই ওঝাকেও। (Arambag Snakebite Case)
হুগলির আরামবাগের অন্তর্গত মায়াপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের ডিহিবায়রা গ্রাম থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে সংসারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন প্রতিমা পাত্র নামের এক মহিলা। সেই সময় বিষধর একটি সাপ তাঁর হাতে কামড়ে দেয়। ছোবল বসিয়ে সরে যায়নি সাপটি, একেবারে হাত কামড়ে ধরে থাকে । কোনও রকমে সাপের মুখ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে সফল হন ওই মহিলা। কিন্তু শরীর অবসন্ন হয়ে পড়তে শুরু করে তাঁর। (Hooghly News)
বিষয়টি জানতে পেরে বাড়ির লোকজন তো বটেই, প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন। সকলে মিলে প্রতিমাকে নিয়ে পাড়ারই এক ওঝার বাড়িতে পৌঁছন। সেখানে জলপোড়া দিয়ে প্রতিমাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা শুরু করেন ওঝা। বেশ খানিক ক্ষণ সেখানে কেটে যায়। এর পর স্থানীয়দের মধ্যে থেকেই কেউ পঞ্চায়েতে খবর দেন। খবর পাওয়া মাত্রই গাড়ি নিয়ে ওঝার বাড়িতে উপস্থিত হন পঞ্চায়েতের প্রধান এবং অন্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। ওঝার বাড়ি থেকে প্রতিমাকে গাড়িতে তুলে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। আপাতত প্রতিমার অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসক জানিয়েছেন, খুব দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই প্রতিমাকে হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়। সেই কারণেই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি।
পঞ্চায়েত প্রধান অলোক সাঁতরা জানিয়েছেন, স্থানীয়দের মারফত তাঁর কাছে খবর পৌঁছয়। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান তিনি। সরকারের তরফে সচেতনতা তৈরিকে একাধিক পদক্ষেপ করা হলেও, সাপের কামড়ে এখনও কুসংসস্কার চোখে পড়ে। তড়িঘড়ি ওষুধ-ইঞ্জেকশনের পরিবর্তে, গ্রামের দিকে ওঝার বাড়ি নিয়ে গিয়ে জলপোড়া দেওয়ায় চল রয়েছে আজও। এই কুসংস্কার দূর করতে তাঁদের তরফে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন অলোক। ওই ওঝাকেও সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সাপে কামড়ানো রোগী এলে তিনি যেন হাসপাতালে যেতে বলেন, জলপোড়া দিতে না যান।
সাপের কামড়ে প্রতি বছরই বহু মানুষ মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর সাপের কামড়ে ৮১০০০ থেকে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যান। এমন পরিস্থিতিতে কুসংস্কারকে আঁকড়ে থাকার পরিবর্তে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি আস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন চিকিৎসকরা। সাপে কামড়ালে তৎক্ষণাৎ কী কী করণীয়, সেই পরামর্শও দিয়েছেন। তাঁদের মতে-
- সাপে কামড়ালে যত শীঘ্র সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। বেশি দেরি করলে হবে না। এমনকি অন্ধকারে কিছু কামড়েছে বলে যদি সন্দেহ হয়, সেক্ষেত্রেও তড়িঘড়ি হাসপাতালে যাওয়া উচিত।
- সর্পদংশনের ক্ষেত্রে রুল অফ হান্ড্রেড মেনে চলেন চিকিৎসকরা। অর্থাৎ সাপে কামড়ালে ১০০ মিনিটের মধ্যে যদি ১০০ মিলিলিটার অ্যান্টিভেনম রোগীর শরীরে ঢোকানো যায়, তাহলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। তাই সাপে কামড়ালে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই, তার আগে হলে আরও ভাল, যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালেে পৌঁছতে হবে।
- সাপে কামড়ালে একেবারে দৌড়াদৌড়ি বা হাঁটাচলা করা উচিত নয়। চুপ করে বসে যেতে হবে এক জায়গায়। কাউকে ডেকে জানাতে হবে। বেশি দৌড়াদৌড়ি করলে বিষ তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে যাবে।
- সাপে কামড়ালে শক্ত বাঁধন দেওয়ার চল রয়েছে গ্রামে। কিন্তু বাঁধন দিতে নিষেধ করেন চিকিৎসকরা। তাঁদের মতে, বাঁধন দিয়ে বিষ আটকানো যায় না। বরং বাঁধন শক্ত হলে হাত-পা পচে যেতে পারে।
- কেটে বা চিরে বিষ বের করার ধারণাও ভুল বলে মত চিকিৎসকদের। শিকড়-পাতা বেটে খাওয়া, কবচ-তাবিজ, কিছুতেই সাপের কামড় সেরে যায় না। বরং এতে সময় নষ্ট হয়।
- হাসপাতালে সাপ ধরে আনার চেষ্টা না করাই ভাল। সাপ দেখে নয়, সাপের লক্ষণ দেখে চিকিৎসা হয়। তাই সাপ ধরতে গেলে সময় লাগতে পারে যেমন, অন্য কেউই সাপের কামড় খেতে পারেন।
- বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিড রাখলে সাপ ঢুকবে না বলে যা ধারণা, তাও ভুল। অ্যাসিড যেখানে সেখানে ছড়ালে নিজের পা পুড়তে পারে। বরং বাড়িকে জঞ্জালমুক্ত রাখুন। ঘরের ভিতর ইঁদুর-ব্যাঙ যেন না ঢোকে। কারণ মানুষকে কামড়াতে সাপ ঘরে ঢোকে না, খাবারের খোঁজে ঢোকে।
- বাড়িতে দেশি পোষ্য রাখলে আগে থেকে সাপের প্রবেশ বুঝতে পারে তারা। অনেকের পোষ্যে আপত্তি রয়েছে। তবে টিকা দিয়ে রাখলে জলাতঙ্কের আতঙ্ক থাকে না, আবার জন্মও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- কেউটে, গোখরো, কালাচের কামড়ে যা হওয়ার একদিনেই হবে। দীর্ঘমেয়াদি কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। চন্দ্রবোড়ার ক্ষেত্রে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডায়ালিসিস হলেও অনেক সময় কার্যক্ষমতা কমে যায় কিডনির। শরীরে নানা উপসর্গ থেকে যায় রোগীদের। মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করাতে হয়।
- বিষধর হলে ছোট বা বড়, সব সাপেরই বিষ থাকে। আকারে কিছু যায় আসে না। বিপদ সমান। তবে সাপে কামড়ানোর অর্থই প্রাণ চলে যাবে এমন নয়। অনেক সময় কামড়ের দাগ থাকলেও, বিষ শরীরে ঢোকে না। সেগুলিকে ড্রাই বাইট বলা হয়। ওঝারা এসব নিয়েও কেরামতি দেখাতে যান। তাতে বিপদ হতে পারে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
