Malda News: ভাঙন-দুর্গতদের সঙ্গে বচসা! কোন কথা শুনেই গ্রেফতারির হুমকি TMC বিধায়কের?
Ganga Erosion: রতুয়ায় ভাঙনের ফলে বাড়ছে আশঙ্কা। সেই এলাকা দেখতে গিয়েই হয় সমস্যা।
করুণাময় সিংহ, মালদা: দুর্যোগের ভ্রুকুটি না থাকলেও, মালদার মানিকচকে ভাঙল গঙ্গার বাঁধ। হু-হু করে জল ঢুকছে ভূতনির কেশরপুর এলাকায়। স্থানীয়দের দাবি, কয়েক বছর আগে জলের তোড়ে ভেঙে যায় স্থায়ী নদী বাঁধ। বালির বস্তা দিয়ে অস্থায়ী রিং বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। গতকাল রাতে সেই বাঁধও ভেঙে যায়। ভূতনির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা।
মালদার রতুয়া ও মানিকচকে শুরু হয়েছে গঙ্গা ভাঙন। এই পরিস্থিতিতে রতুয়ায় ভাঙন দেখতে গিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে মেজাজ হারালেন তৃণমূল বিধায়ক। তর্কাতর্কি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে ভাঙন-দুর্গতকে গ্রেফতারের নির্দেশও দিয়ে দেন তিনি। শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিলেন মহকুমা শাসক।
ভাঙন নিয়ে সমস্যায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন রতুয়ার তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে প্রায় তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায় গ্রামবাসীদের একাংশের। তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'চিফ ইঞ্জিনিয়ার এসেছেন। SDO সাহেব এসেছেন। মহানন্দা ইরিগেশন এসেছে, তারা টেকনিক্যাল। তুমি টেকনিক্যাল অ্যাডভাইস দিতে পার না। বুঝেছ?' তখন পাল্টা এক গ্রামবাসীকে বলতে শোনা যায়, 'আমরা থাকছি না তাহলে চলে যাচ্ছি। চলো, আমরা সব পাবলিক চলে যাই। ওঁরা যা ইচ্ছে তাই করুন।' তখনই রেগে যান বিধায়ক। তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'ওকে অ্যারেস্ট করুন। অ্যারেস্ট করুন তো।' সেইসময়েই অবস্থা সামাল দিতে যান চাঁচলের মহকুমা শাসক। তিনি বলতে থাকেন, 'আপনার বয়স হয়েছে, রাগবেন না, রাগবেন না।'
প্রতি বছর মালদার এই এলাকায় গঙ্গা ভাঙনে জেরবার হন গ্রামবাসীরা। এবারও একই ছবি। এখন মালদায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে গঙ্গা। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে রতুয়া ও মানিকচকে শুরু হয়েছে ভাঙন। রতুয়ার শ্রীকান্তটোলা এলাকায় নদী গিলে খাচ্ছে চাষের জমি। গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে ঘরবাড়ি। রবিবার প্রশাসনিক কর্তা ও সেচ দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে ভাঙন পরিদর্শনে যান রতুয়ার তৃণমূল বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। তাঁদের সামনে সমস্যার কথা তুলে ধরেন গ্রামবাসীরা। আর তখনই মেজাজ হারান তৃণমূল বিধায়ক। ভাষার সংযমও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
চাঁচলের মহকুমাশাসক বলছিলেন, 'ফুলহার বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল। ওখানে কিন্তু ভাঙনটা বন্ধ হয়ে গেছে। সেই কাজটাই এখানে করা হবে।' তখন এক গ্রামবাসী বলেন, 'বাঁশ লাগবে স্যর, বাঁশ লাগবে।' সেই সময়েই রেগে যান রতুয়ার বিধায়ক। তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'কী হয়েছে? শাট আপ...চোপ...চোপ।' রতুয়ার ওই বাসিন্দা বিষ্ণুপ্রসাদ শরাফ বলেন, 'আমি দাবি তুলেছিলাম এখানে বস্তা দিলে হবে না...বাঁশ দিলে কিছুটা রক্ষা পাবে। MLA সাহেব রেগে গেল, চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে বলছিলাম।' রতুয়ার আরেক বাসিন্দা শচীন মণ্ডলের অভিযোগ, '২-৩টে গ্রাম নষ্ট হয়ে গেল, কেন হল না? এখন বলছে এ বাঁধব এ ফেলব...কেন এখন হচ্ছে?'
চাঁচলের মহকুমা শাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, 'আজকে থেকে কাজ শুরু হবে, যতটা পারা যায় প্রোটেকশন দেওয়ার কাজ শুরু করবে। যতটা পারা যায় রক্ষা করার ব্যবস্থা হবে।'
বিধায়কের মেজাজ হারানোর ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। মালদা উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর কটাক্ষ, 'বিপদগ্রস্ত মানুষ বলতেই পারেন। তাঁদেরকে গ্রেফতারের হুমকি দিতে হবে কেন? ভয় দেখানোর কী আছে?'
মানিকচকেও পাড় ভাঙছে গঙ্গার। অস্থায়ী রিং বাঁধ ভেঙে শনিবার রাত থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে ভূতনির কেশরপুর এলাকায়। বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসীরা।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।