নারদ মামলায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজিরা চার হেভিওয়েটের
আদালতে হাজিরা দিলেন নেতা, মন্ত্রী সহ কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়রের মতো চার হেভিওয়েট
কলকাতা: নারদ মামলায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজিরা দিলেন নেতা, মন্ত্রী সহ কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়রের মতো চার হেভিওয়েট। এদিন আদালতে পৌঁছেন ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আদালতে পৌঁছন মদন মিত্র, শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, শুক্রবার সকাল ১০টা ৪০ নাগাদ তাঁরা আদালতে হাজিরা দেন। নারদের মূল মামলা এই নিম্ন আদালতেই হয়। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গাড়িতে আসেন ফিরহাদ হাকিম। তারপরই আদালত চত্বরে আসে মদন মিত্রর গাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসেন শোভন ও বৈশাখী। মিনিট দশেক আদালতে ছিলেন চার হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী।
২০১৭ সালে, নারদকাণ্ডের তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হেভিওয়েট, অর্থাত্ সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়নি। গত ১৭ মে সকালে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনই ভার্চুয়াল শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেছিল নিম্ন আদালত। কিন্তু এরপরই জামিনের উপর স্থগিতাদেশ জারির আর্জি জানিয়ে আদালতে দ্বারস্থ হয় সিবিআই। আজ সেই অন্তর্বর্তী জামিনের রিটার্ন ডেট। অর্থাৎ ব্যাঙ্কশাল আদালত পরবর্তী হাজিরার দিন ধার্য করে ৪ জুন। কয়েক দফায় শুনানি শেষে গত সপ্তাহে তাঁদের অন্তবর্তী জামিন দেয় আদালত।
এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে আইনজীবী অনিন্দ্য রাউত বলেন, জামিন দেওয়ার সময়ই এই দিন হাজিরার দিন ধার্য করা হয়। সেই অনুযায়ী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায় হাজিরা ছিলেন। পরে কবে হাজিরা দিতে হবে তা জানিয়ে দেবে আদালত।
এদিকে গতকাল নারদ মামলা স্থানান্তর নিয়ে শুনানি ছিল। আগামী সোমবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে ফের নারদ মামলার শুনানি। এদিন শুনানি চলাকালীন বিচার ব্যবস্থার ক্রমবিন্যাসের গুরুত্ব সম্পর্কে সিবিআই-এর আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি। প্রথম পর্বে ৩দিন সওয়াল করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা।
বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতেই বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন,২০১৭ সালে, নারদকাণ্ডের তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হেভিওয়েট, অর্থাত্ সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়নি। গত ১৭ মে সকালে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাঁরা নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান। আপনারা হাইকোর্টে ইমেল করে অভিযোগ জানান,এরপর হাইকোর্ট জামিনে স্থগিতাদেশ দেয়। আপনারা যদি আদালতের সাধারণ নিয়ম মেনে পরের দিন বা তার পরের দিন মামলা করতেন, আর সেখানেও যদি একই নির্দেশ দিত আদালত, তাহলে আপনাদের অধিকার কীভাবে খর্ব হত ?
এরপর বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ফের প্রশ্ন করেন, আপনারা যে মেল পাঠিয়েছিলেন, সেখানে মামলার কোন্ চরিত্র মেনে অভিযোগ করেছেন, সেটা পরিষ্কার করে বলা ছিল না। এরপর, সিবিআইয়ের আইনজীবীর উদ্দেশে, বিচারপতি সৌমেন সেন প্রশ্ন করেন, যে ইমেল আপনারা পাঠিয়েছিলেন, তাকে আমরা মামলার কোন চরিত্র হিসেবে ধরব? জনস্বার্থ, জামিন খারিজ, না রিট?
উত্তরে তুষার মেহতা বলেন, আমাদের চিঠিতে একাধিক অভিযোগ ছিল যার মধ্যে জনস্বার্থ অন্যতম। এরপর বিচারপতি হরিশ টন্ডন, তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেন, আপনার কি মনে হয় না, বিচারব্যবস্থার যে ক্রম উচ্চ শ্রেণীবিন্যাস রয়েছে, সেটাও অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ? তখন সিবিআই আইনজীবী বলেন, প্রধান বিচারপতি হলেন মাস্টার অফ রস্টার, তিনি যেকোনও মামলা যেকোনও বিচারপতির কাছে শুনানির জন্য পাঠাতে পারেন।
এরপর তুষার মেহতাকে বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন এই বৃহত্তর বেঞ্চ যদি নিম্ন আদালতের নির্দেশ খারিজ করতে পারে, তাহলে কি জামিনের আবেদনেও মঞ্জুর করতে পারে? উত্তরে সিবিআই এর আইনজীবী বলেন, হাইকোর্ট মনে করলে যেমন মামলা স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারে, তেমনই জামিনের আবেদনের স্থানান্তরের নির্দেশও দিতে পারে। জামিনের আবেদন হাইকোর্টে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা নেই।এই মামলার শুনানির পর চূড়ান্ত নির্দেশ দিতে পারে হাইকোর্ট।
এরপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল বলেন, আমরা চাই এখন আগে জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হোক। তখন তুষার মেহতা বলেন, আগে জামিনের শুনানি হলে মামলার বাকি অংশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। প্রথম পর্বে ৩দিন সওয়াল করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা। এরপর হেভিওয়েটদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, সমস্ত দিক থেকেই এটা একটা অভূতপূর্ব মামলা। চার হেভিওয়েটদের গ্রেফতারির দিন তৃণমূল সমর্থকের ভিড়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, তিনি বলেন, সমস্ত বিষয় ছেড়ে CBI শুধুমাত্র মানুষের ভিড় নিয়েই চিন্তিত। CBI কখনও গোটা ঘটনার বিশদ বিবরণে যেতে চাইছে না। কারণ তাহলে তারা অসুবিধার মধ্যে পড়বে। তিনি আরও বলেন, কীভাবে বিচারক বাধাপ্রাপ্ত হলেন, কীভাবে বিচারব্যবস্থা বাধাপ্রাপ্ত হল, কীভাবে বিচারক পক্ষপাতদুষ্ট হলেন, কীভাবে মানুষের ভিড় এর জন্য দায়ী, তার কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ CBI-এর কাছে নেই। এরপরই এদিনের মতো, শুনানি শেষ হয়ে যায়।