লালফিতের ফাঁস এড়াতেই ১৫ অগাস্টের সময়সীমা! বিতর্কের মুখে সাফাই আইসিএমআর-এর
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এতে সাধারণের উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে...
নয়াদিল্লি: ১৫ অগাস্টের মধ্যে, অর্থাৎ মাত্র ৩৯ দিনের মাথায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে করোনার প্রতিষেধক বাজারে আনা কি আদৌ সম্ভব? আইসিএমআর-এর ডিজি-র নির্দেশ ঘিরে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। যা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশজুড়ে চাপের মুখে অবশ্য নিজের অবস্থানের ব্যাখ্যা করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। কেন্দ্রীয় সংস্থা জানিয়েছে, মেডিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে আইসিএমআর সেরা সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিষেধক ও ওষুধ শিল্পে এর ট্র্যাক রেকর্ড দেখলেই তা বোঝা যায়।
আইসিএমআর-এর তরফে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ‘কোভ্যাক্সিন’-এর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্বে সাফল্যের পর এবার ফেজ ওয়ান ও ফেজ টু’য়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাত্ মানবদেহে প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেক্ষেত্রে এই পর্যায়ে লালফিতের ফাঁসে যাতে কোনওরকম বিলম্ব না হয়, সেই কারণেই আইসিএমআর-এর ডিজি ওই চিঠি লিখেছেন। এক্ষেত্রে কোনও প্রয়োজনীর প্রক্রিয়াই এড়িয়ে যাওয়া হবে না। নিয়ম মেনে যত দ্রুত সম্ভব সেই প্রক্রিয়া শেষ করার উদ্দেশ্যেই চিঠি দিয়েছেন ডিজি।
বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবার। ওইদিন ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিকে আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গবের দেওয়া একটি চিঠি সামনে আসে। তাতে বলা হয়, দ্রুত কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শেষ করতে হবে যাতে আগামী ১৫ অগস্ট ওই ভ্যাকসিন বাজারে আনা যায়।
আইসিএমআর-এর ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ৭ জুলাই থেকে শুরু হবে এই প্রতিষেধকের ট্রায়াল। ফলে ভারত বায়োটেক ‘কোভ্যাক্সিন’ পরীক্ষার জন্য সময় পাচ্ছে ৭ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট পর্যন্ত। অর্থাত্ মাত্র ৩৯ দিন! এই চিঠি ঘিরেই দেশজুড়ে শুরু হয় প্রবল বিতর্ক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে সাধারণের উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে। এরকমভাবে সময় বেঁধে দিয়ে গবেষণা করা যায় না। এমনকী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের যে ওয়েবসাইট আছে সেখানে এক বছর তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে লেখা আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পোলিওর মতো কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও ইন-অ্যাকটিভ স্ট্রেন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন’-এর প্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয় বানরের ওপর তাতে ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে।
প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর এবার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। অর্থাত্ মানবদেহে প্রয়োগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সেফটি ট্রায়াল, এক্সপ্যান্ডেড ট্রায়াল ও এফিকেসি ট্রায়ালের পর্যায় থাকে। এই তিন পর্যায়ের ফলাফল বিশ্লেষণ করে প্রতিষেধক তৈরির ছাড়পত্র দেওয়াই নিয়ম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব শেষ করতে ন্যূনতম ছয় মাস অর্থাত্ ১৮০ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়।
বিশেষজ্ঞরাও এও বলছেন, করোনার মতো মহামারীর পরিস্থিতিতে কিছু ধাপের সময়সীমা করা যেতে পারে। কিন্তু তা বলে এতটা কম সময়ের মধ্যে কখনই নয়। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একটা টিকা তৈরির গবেষণায় সময় বেঁধে দিয়ে হয় না। ফেজ ওয়ান আছে। ফেজ টু আছে। তার কী ফলাফল হচ্ছে তা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হয়।