International Day of Yoga: কমনওয়েলথে উদযাপিত হল দশম যোগ দিবস, যোগ দিল ব্রিটেনের ভারতীয় হাইকমিশনও
International Day of Yoga By Commonwealth: কমনওয়েলথের উদ্যোগে এবার উদযাপিত হল দশম যোগ দিবস। ব্রিটেনের ভারতীয় হাইকমিশন এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংক্ষিপ্ত বার্তা দিয়ে।
International Day of Yoga By Commonwealth: শনিবার কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে দশম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করল ব্রিটেনের ভারতীয় হাইকমিশন ও হার্টফুলনেস ওয়ার্ল্ডওয়াইড । মার্লবরো হাউসে এই বিশেষ যোগাসন অনুষ্ঠিত হল।
শরীরের ও মনের উন্নতি
প্রসঙ্গত, গ্লোবাল ইয়োগা ফর ইউনিটি ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবেই কমনওয়েলেথের তরফে এই বিশেষ দিনটি পালন করা হল। এই দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন হাইকমিশনের ডিপ্লোম্যাটরাও। শরীরের পাশাপাশি মনের সুস্বাস্থ্যের কথা এইদিন যোগব্যায়ামের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
২০১৪ সালে রাষ্ট্রসংঘ ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। প্রসঙ্গত, যোগ দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে অনেকটাই খাপ খায় কমনওয়েলথের স্বাস্থ্যসম্পর্কিত চিন্তাধারা। জীবনযাপনের ধারা নিয়ন্ত্রণ ও শরীরচর্চার মাধ্যমে অসংক্রমক রোগগুলিকে (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, কোলেস্টেরল) নিয়ন্ত্রণ করাই লক্ষ্য কমনওয়েলথের।
কী বললেন কমনওয়েলথ সেক্রেটারি
কমনওয়েলথে সেক্রেটারি জেনারেল আরটি হন প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কেসি তাঁর ভিডিয়ো বার্তায় বলেন, আমাদের কাজে চ্যালেঞ্জ ভরপুর। আর আমাদের কেউই শূন্য অবস্থায় নিজেদে পূর্ণ সক্ষম নই। যোগাসন নিজেদের পরখ করার একটি সুযোগ দেয়। পাশাপাশি সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের কথাও বলে। প্রাচীন এই অভ্যাস আমাদের মন ও শরীরকে সুস্থ রাখে। সারা বিশ্বের যেকোনও প্রান্তের মানুষের জন্যই যোগাভ্যাস বেশ উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অসংক্রমক রোগ যেমন সুগার, প্রেশার হার্টের রোগের মোকাবিলা করতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে যোগাভ্যাসের এই বিশেষ দিনটি ভীষণভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ।
প্রথম যোগ দিবস উদযাপন
অন্যদিকে হার্টফুলনেস ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কমলেশ ডি প্যাটেল বলেন, যোগাসন ব্যায়ামের থেকেও বেশি কিছু। এটি সম্পূর্ণতই একটি বিজ্ঞান যা আমাদেরকে বদলে দেয়। আমাদের আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। মনকে স্বচ্ছ করে, আনন্দে পরিপূর্ণ রাখে। প্রসঙ্গত, কমনওয়েলথের তরফে এই প্রথম যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপন করা হল। সেই কথা তুলে কমলেশ জানান এই ব্যাপারে তিনি বেশ আনন্দিত। দশম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের জন্য সকলের এই সমাবেশেও তিনি বেশ আপ্লুত।
ভাবনা, জীবনযাপন ও শিক্ষাকে আরও মজবুত করে তোলার লক্ষ্য
কমনওয়েলথের সাম্পতিক রিপোর্ট ‘অ্যাড্রেসিং দ্য রাইজিং বার্ডেন অব ননকমিউনিকেবল ডিজিজ ইন দ্য কমনওয়েলথ’-এ ননকমিউনিকেবল ডিজিজ অর্থাৎ অসংক্রমক রোগের প্রভাবকে তুলে ধরা হয়েছে। অসংক্রমক রোগের জেরে কমনওয়েলথ দেশগুলিতে প্রতি বছর ২.১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এই পরিসংখ্যান সারা বিশ্বের মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক। এই সমস্যা কমনওয়েলথের ২৫টি দ্বীপরাষ্ট্রে আরও বেশি সঙ্কুল। ওই দেশগুলিতে ডায়াবেটিস ও ওবেসিটির হার অনেক বেশি। যার ফলে হার্টের রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।
এই রিপোর্টে যোগাসনসহ শরীরচর্চার দিক তুলে ধরা হয়েছে। যোগাসনের মাধ্যমে চিন্তাভাবনার ক্ষমতা, নতুন কিছু শেখা ও কোনওকিছু বিচার করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। অসংক্রমক রোগগুলির হার কমাতে এগুলি বিশেষভাবে জরুরি। তাহলেই আর্থিক উন্নতি ও স্থায়ী উন্নয়নের দিকে কমনওয়েলথের দেশগুলি এগিয়ে যেতে পারবে।
স্বাস্থ্য়কর ভবিষ্য়ত, স্বাস্থ্যকর তারুণ্য
কমনওয়েলথের ইয়ার অব ইয়ুথের সঙ্গে একই দিকে পড়েছে দশম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। ইয়ার অব ইয়ুথ আদতে তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের কথা বলে। পাশাপাশি এটি যোগাসন করার জন্য উৎসাহ জোগায়। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগের মতো সমস্যাগুলিকে কমিয়ে ১৫০ কোটি মানুষের উন্নতির কথা ভাবে।
দশম আন্তর্জাতিক দিবসের শুভ সূচনা হয় শ্রদ্ধেয় নরেন্দ্র মোদীর একটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বই এখন যোগাভ্যাসকে বিশ্বের জন্য হিতকর একটি অভ্যাস হিসেবে দেখছে। যোগাসন আমাদের এই উপলব্ধি করায় যে আমাদের কল্যাণের সঙ্গে বিশ্বের কল্যাণ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।’
হাইকমিশনারের তরফে এইচই মিঃ বিক্রম কে দোরাইস্বামী তাঁর কথায় যোগাসনের বিশ্বব্যাপী গুরত্বের কথা তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, যোগাসন শরীরের ও মনের উন্নতিসাধন করে। এছাড়া বেড়াজাল ভেঙে মানুষকে একত্রিত করার একটি প্রচেষ্টা। দশম আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের থিম বা ভাবনা হল নিজের ও সমাজের জন্য যোগাসন। যা যোগাসনের বিশ্বব্যাপী গুরুত্বকেই তুলে ধরে। যোগাসনের সঠিক অভ্যাসের সাহায্যে আমরা আরও শান্তিপূর্ণ, একত্রিত ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারব।
যোগাভ্যাসের ইতিহাস
এই দিন উপস্থিত সকলেই একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের সাহায্যে যোগাভ্যাস শুরু করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে যোগাভ্যাসের প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে একটি তথ্যচিত্রের প্রদর্শন করা হয়। যোগাসনের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে তুলে ধরে সেই তথ্যচিত্র।
নামিবিয়া হাইকমিশনের এইচই মিস লিন্ডা স্কট বলেন, যোগাসনের ইতিহাস ৫০০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। বর্তমানে এটি কমনওয়েলথ দেশগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে যাতে রোজকার জীবনে এই অভ্য়াস গড়ে তোলা যায়। তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, যদি নিয়মিত যোগাসনের অভ্যাস যদি আপনার না থাকে, তাহলে আজকের অনুষ্ঠান আপনাকে সাহায্য করবে।
জুলাই মাসে কমনওয়েলথ প্যারিসে কমনওয়েলথ স্পোর্টস মিনিস্টার মিটিংয়ের আয়োজন করতে চলেছে। তাঁর আগে শনিবারের এই অনুষ্ঠান ও কমনওয়েলথ মুভ প্রোগ্রাম স্পোর্টস ও শরীরচর্চাকে ভাল থাকার চাবিকাঠি হিসেবে তুলে ধরতে চায়। সুস্বাস্থ্য জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ জুগিয়ে কমনওয়েলথ একটি মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে চায়।