Hindmotor: এক ঘণ্টার জন্য জল-আলো কোয়ার্টারে, হাসি ফুটল হিন্দমোটরের শ্রমিকদের মুখে
Hindmotor: এক সময়ের এশিয়ার বৃহত্তম গাড়ি কারখানায় তালা ঝুলেছে ঢের আগেই। কিন্তু এখনও অনেক পরিবার শ্রমিক আবাসনেই বসবাস করে। তাদের হঠাতে বহু দিন আগেই জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া: কারখানা লকআউটের পর পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল হিন্দুস্থান মোটরের (Hindustan Motors) শ্রমিক আবাসনের জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা। তার মধ্যেই অন্ধকার কোয়ার্টারে বিগত আট বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। আচমকাই শনিবার এক ঘণ্টার জন্য পরিষেবা ফিরে পেয়ে হাসি ফুটল তাঁদের মুখে। কারণ ওই এক ঘণ্টাতেই জ্বলে উঠল ঝুল মেখে কালো হয়ে যাওয়া বাল্ব। সুইচ টিপতে টানায় ঝুলের গোছা আটকে ঘুরল পাখাও। শ্যাওলা পড়ে সবুজ হয়ে যাওয়া কল থেকে পড়ল জলও। আর তাতেই একনাগাড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের মুখে ক্ষণিকের জন্য হলেও হাসি ফুটল।
এক সময়ের এশিয়ার বৃহত্তম গাড়ি কারখানায় তালা ঝুলেছে ঢের আগেই। কাজ হারিয়েছেন শ্রমিকরা। শ্রমিক আবাসন থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু এখনও অনেক পরিবার শ্রমিক আবাসনেই বসবাস করে। তাদের হঠাতে বহু দিন আগেই জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। জল এবং বিদ্যুতের দাবিতে পথেও নামেন শ্রমিকেরা। শ্রম দফতর থেকে পুরসভা, জেলা প্রশাসন, অভিযোগ জানানো হয় সর্বত্র। কিন্তু লাভ হয়নি কিছুতেই। তাই এক ঘণ্টার জন্য হলেও, বিদ্যুৎ পরিষেবা পেয়ে খুশি শ্রমিকেরা।
এ নিয়ে সিটু (SITU) নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন,‘‘বেআইনি ভাবে সাসপেনশন অফ ওয়র্ক করা হয়েছিল হিন্দুস্থান মোটরে। তার বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে পর্যন্ত গিয়েছি। জল-বিদ্যুৎ মানুষের নূন্যতম চাহিদা, সেটাও বন্ধ করে দেয় কোম্পানি। তা নিয়েও থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। ॥শ্রমিকরা প্রচুর স্বার্থ ত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমাদের আন্দোলন সফল হয়নি। আজ কিছু ক্ষণের জন্য হলেও জল এবং বিদ্যুৎ পেয়েছেন শ্রমিকরা। আমরা খুশি।’’
হিন্দমোটরের (Hindmotor) শ্রমিক চন্দ্রভূষন সিংহ বলেন,‘‘আমরা চাই ২৪ ঘণ্টা জল-আলো থাকুক।’’
তবে মনের পরিবর্তন থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হয়নি। এক দিন আগে শ্রমিকরা সংস্থার দুই কর্মীকে আটক করাতেই এক ঘণ্টার জন্য হলেও বিদ্যুর পরিষেবা মিলেছে। শুক্রবার হিন্দুস্থান মোটরের দু’জন কর্মীকে ধরে নিয়ে আসেন শ্রমিকেরা যাতে তাঁরা কী কষ্টে থাকেন, তা দেখানো যায়। বেশ খানিক ক্ষণ ওই দু’জনকে বসিয়ে রাখা হয়। খোঁজ নিতে কারখানার কর্তৃপক্ষের কানেও তা পৌঁছয়। তার পর দিনে এক ঘণ্টা করে জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সেই মতোই শনিবার দুপুর ১টা থেকে ২টো পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হয়। তবে শ্রমিকদের দাবি, জল এবং বিদ্যুতের বিল মেটাতে রাজি তাঁরা। কিন্তু তাতেও ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ায় মন গলেনি কর্তপক্ষের।
এ ব্যাপারে, বিজেপি (BJP) নেতা পঙ্কজ রায় বলেন,‘‘আমরা আট বছর ধরে আন্দোলন করছি। এখন চাপে পড়ে এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ দিয়েছে। আমাদের দাবি ২৪ ঘণ্টার । সামনে পুরসভা ভোট। দেখছে, বিদ্যুৎ-জল নিয়ে সমস্যা হতে পারে। তাই এক ঘণ্টার জন্য চালু করেছে।’’
তবে কানাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আচ্ছালাল যাবদের বক্তব্য, ‘‘পুরসভা ভোটে হিন্দুস্থান মোটর ম্যানেজমেন্ট লড়বে না। ভোট লড়বেন পৌরপিতা এবং তাঁর বিরোধীরা। তাঁদের ক্ষমতা নেই বিদ্যুৎ দিয়ে দেওয়ার। ম্যানেজমেন্টের আয়ত্তের মধ্যে থাকলে নিশ্চই এক ঘন্টার জন্য দিয়েছে। সেটা বাড়ানোও হতে পারে।’’
শ্রীরামপুরে তৃণমূলের (TMC) সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সবেতেই রাজনীতি দেখে বিজেপি। তৃণমূল সবসময়ই মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে। ম্যানেজমেন্ট বিদ্যুৎ দিয়েছে। সরকার সব সময় মানুষের পাশে থাকে। বিজেপি শুধু রাজনীতি করে।’’