Anubrata Mondal: অনুব্রতর একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন কি শেষ? বীরভূম তাহলে কার হাতে? অভিষেকের সুপারিশ ঘিরে জোর জল্পনা
Birbhum News: বীরভূমে সংগঠনের দায়িত্বে কোর কমিটিরই থাকা উচিত বলে সম্প্রতি ব্যক্তিগত স্তরে এই মন্তব্য করেছেন অভিষেক।
ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও করুণাময় সিংহ: আগামীদিনে বীরভূমের সাংগঠনিক ক্ষমতা কার হাতে থাকবে, অনুব্রত মণ্ডল না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করে দেওয়া কোর কমিটির? সূত্রের খবর, কোর কমিটির হয়ে ইতিমধ্যেই সওয়াল করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯-এর তুলনায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে অনুব্রতহীন লালমাটির জেলায় ভাল ফল করেছে তৃণমূল। তাই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে? (Anubrata Mondal)
বীরভূমে সংগঠনের দায়িত্বে কোর কমিটিরই থাকা উচিত বলে সম্প্রতি ব্যক্তিগত স্তরে এই মন্তব্য করেছেন অভিষেক। আর তার পর থেকেই লালমাটির জেলায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমে তৃণমূলের সংগঠনে আগের মতো একচ্ছত্র আধিপত্য় কি থাকবে অনুব্রতর? না কি অভিষেক যে কোর কমিটির উপর 'ভরসা' করছেন, তারাই চালাবে তৃণমূল? (Birbhum News)
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই কোর কমিটিতেই রয়েছেন অনুব্রতর বিপরীত শিবিরের দাপুটে নেতা হিসাবে পরিচিত কাজল শেখ। আগামী ১৬ নভেম্বর, বীরভূমে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূলের জেলা কোর কমিটি, যেখানে তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রথম বার কাজলের মুখোমুখি হতে পারেন অনুব্রত। এবার অনুব্রতর অনুপস্থিতিতেই বীরভূমে লোকসভা নির্বাচন হয়েছে, যার দায়িত্বে ছিল কোর কমিটি। ফলাফল বেরোলে দেখা যায়, ২০১৯-এর তুলনায় বীরভূমে ভাল ফল হয়েছে জোড়াফুল শিবিরের। দু'টি আসন তো ধরে রেখেইছে তারা, সেই সঙ্গে জয়ের ব্য়বধানেও বেড়েছে।
বীরভূম লোকসভা আসনে ২০১৯ সালে শতাব্দী রায় জিতেছিলেন ৮৮ হাজার ৯৪২ ভোটে। ২০২৪-এ জয়ের ব্যবধান বেড়ে হয় ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬৫০। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। বোলপুর কেন্দ্রে ২০১৯ সালে অসিত মাল জয়লাভ করেন ১ লক্ষ ৬ হাজার ৪০২ ভোটে। সেখানে এবার তার জয়ের মার্জিন তিন গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৩ লক্ষ ২৭ হাজার ২৫৩। অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে দলের এই চমকপ্রদ ফলাফলের পর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল শতাব্দীকে। 'চড়াম চড়াম', 'গুড়-বাতাসা-নকুলদানা' এবং 'বোমা-বন্দুক' সংক্রান্ত অভিযোগ ছাড়াই নির্বাচন কী করে হল জানতে চাইলে, শতাব্দীর বক্তব্য ছিল, "আমার সঙ্গে অনুব্রতর যখনই সংঘাত হয়েছে, ওই শব্দ, ওই কথাগুলি নিয়েই হয়েছে। আমি তখনও সমর্থন করতাম না। আজ তো প্রমাণিত যে ওটা ছাড়াও ভোট হয়। আগামী দিনে নিশ্চয়ই সেভাবে ভোট করাবেন উনি।"
অভিষেকের আশীর্বাদধন্য় কোর কমিটিই কি তাহলে বীরভূমে তৃণমূলের শেষ কথা হতে চলেছে? কোর কমিটির সদস্য তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোর কমিটি দারুণ কাজ করেছে। আবার সিউড়ির বিধায়ক তথা কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায় চৌধুরীর মতে, অনুব্রত যা করেছেন, তার উপর ভিত্তি করেই জয় এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, যে বীরভূমে বছরের পর বছর ধরে শেষ কথা ছিলেন যে অনুব্রত, এবার তাঁর সেই আধিপত্যে কি ইতি ঘটতে চলেছে?
এ নিয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমিত চক্রবর্তী বলেন, "অনুব্রত মণ্ডল ছাড়া তৃণমূল ভাল রেজাল্ট করেছে, এটা তো ঠিক। আর সেটে কোর কমিটির নেতৃত্বেই হয়েছে। দলের এখন মনে হচ্ছে অনুব্রত কোনও ফ্যাক্টরই নয়। তাই কোর কমিটির কথা বলা হচ্ছে।" অন্য দিকে, বিজেপি-র রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "অনুব্রত ছিল না তো কী হয়েছে? ওঁর দেখানো পথেই ভোট হয়েছে। হুমকি-হুঁশিয়ারি সবই হয়েছে ভোটে। তৃণমূল মানেি হুমকি-হুঁশিয়ারি, ভোটলুঠ।"
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই অনুব্রতকে স্নেহ করেন। গরুপাচার মামলায় অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরও তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় মমতাকে। এমনকি বীরভূমে অনুব্রত বীরের মতো ফিরে আসবেন বলেও মন্তব্য করেন। অভিষেক যে সুপারিশ করেছেন, তা কি মানবেন মমতা? অনুব্রতর দাপট কি খর্ব করবেন তিনি? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।