Post Covid Symptom : করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর দীর্ঘদিন নাকে শুধুই বিকট গন্ধ ! অদ্ভুত সমস্যা নিয়ে ENT বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ বহু
করোনা থেকে সেরে ওঠার পর পারভার্টেড স্মেল বা গন্ধ বিকৃতি। আলোচনায় ইএনটি (ENT) বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর দত্ত (Dr. Dipankar Datta)

কলকাতা : কোভিড হলে স্বাদ-গন্ধ চলে যাওয়া - এই লক্ষণ তো আর কারও অজানা নয়। করোনাকালে (Coronavirus) তাই কারও স্বাদ বা গন্ধ পেতে সমস্যা হলেই একজন ধরে নিয়েছেন তিনি পজিটিভ। অনেকে তো আবার পরীক্ষা না করিয়েই নিজেকে আইসোলেট করেছেন। কয়েকদিনের মাথায় আবার হারানো স্বাদ-গন্ধ ফিরে পেয়েছেন মানুষ। এমনটাই ঘটছে স্বাভাবিক ভাবে। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউতে ভয়ঙ্কর ভয় ধরিয়েছে কোভিড পরবর্তী ঘ্রাণ সংক্রান্ত আরও একটি সমস্যা। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর বেশ কিছু মানুষের অভিজ্ঞতা হয়েছে এমন। তাঁরা প্রবল টেনশন নিয়ে ছুটে গিয়েছেন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের কাছে। পারভার্টেড স্মেল বা গন্ধ বিকৃতি। এই সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এই ব্যতিক্রমী সমস্যা নিয়ে এবিপি লাইভের ( ABP Live ) সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইএনটি (ENT) বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর দত্ত (Dr. Dipankar Datta)।
কী এই অসুখ ?
- কোভিড নেগেটিভ হয়ে যাওয়ার পর স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে এলেও সঠিক গন্ধ তাঁরা পাচ্ছেন না (perverted sense of smell)। হয়ত সবসময় রসুনের গন্ধ পাচ্ছেন। বা সারাদিন যাবৎ তাঁর নাকে ভাসছে ভ্যাট বা ডাস্টবিনের পচা গন্ধ। অন্য কোনওরকম গন্ধের অনুভূতি তিনি পাচ্ছেন না। শুধুই ওই এক বিচিত্র গন্ধ! সবথেকে অবাক কাণ্ড, পেশেন্টরা পাচ্ছেন খারাপ কোনও গন্ধই, কেউ বেল বা জুঁই ফুলের গন্ধ পাচ্ছেন, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। অতিষ্ঠ ও চিন্তিত হয়ে তাঁরা ছুটে আসছেন চিকিৎসকের কাছে। এই সমস্যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হচ্ছে ক্যাকসমিয়া বা প্যারসমিয়া (Cacosmia বা Parosmia)। সেই সমস্যা কিন্তু ২-১ সপ্তাহে কমছে না। কারও কারও লেগে যাচ্ছে ২-৩ মাস। ডা. দত্তের অভিজ্ঞতায় তাঁর এক রোগীর এই সমস্যা থেকে বের হতে লেগে গেছে ৩-৪ মাস। মে মাসে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর অগাস্ট মাসে স্বাভাবিক গন্ধ ফিরে পেয়েছেন তিনি।
কোভিডে এঁরা কি বেশি কাবু হয়েছিলেন ?
চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে, তেমনটা কিন্তু একেবারেই নয়। ডা. দত্ত আশঙ্কা করছেন, এই সমস্যা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই ঘটছে কি না ! যদিও এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো স্টাডি হয়নি বা পাবলিকেশন হয়নি। কিন্তু ঘটনা হল প্রথম ঢেউয়ে এমনটা গন্ধ বিকৃতি কিন্তু ঘটেনি। বরং প্রথম ঢেউতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বেশ কিছু মানুষ কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘ্রাণ-বিকৃতির ঘটনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরেই চিকিৎসকরা বেশি পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন :
ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজটি নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ না নিলে কী হবে? দেরি হলেই বা ক্ষতি কি?
গন্ধের সঙ্গে সাইকোলজির সম্পর্ক ...
গন্ধের সঙ্গে মনস্তত্ত্বের এক গভীর সম্পর্ক। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় উল্লেখ আছে শিশিরের গন্ধের, আছে খুদকুরো চালের গন্ধের। ডাঃ দত্তের কথায়, আমাদের জীবনের বিভিন্ন সময় ও অনুভূতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গন্ধের অনুভূতি। আমাদের চেতনায় একেকটি গন্ধের একেকরকম সংজ্ঞা। সেটি যখন ধাক্কা খায়, তখনই মানুষের মাথার ঠিক থাকে না। কোভিড থেকে সেরে ওঠার স্বস্তিও অনুভব করতে পারে না মানুষ। সেই সমস্যা তো সহজে কাটছেই না, উপরন্তু একটা ভয়ঙ্কর গন্ধ সারাদিন তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
গন্ধ-বিকৃতির কারণ কী?
ডাঃ দীপঙ্কর দত্ত মনে করছেন, এটি হয়ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব। আসলে গন্ধ হল একটি কেমিক্যাল সেন্স। সেটি যখন বিপর্যস্ত হয়, তখন কিছু খাওয়ার ইচ্ছেও চলে যায়। কারণ গন্ধ ও স্বাদ ভীষণভাবে সম্পর্কিত।
কী কী পদ্ধতিতে হচ্ছে চিকিৎসা ...
- এই ধরনের সমস্যা নিয়ে আসা প্রতিটি মানুষের ভালো করে কোভিড history নেওয়া হয়েছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ক্লিনিক্যাল চেক আপ করা হয়েছে। আগে প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই ও করানো হয়েছে। ডাক্তাররা সুনিশ্চিত হতে চেয়েছেন, এই গন্ধ বিকৃতির কারণ কোনও ব্রেন টিউমার কিনা দেখতে। কিন্তু সেইরকম ফল কিন্তু কারও ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। কোভিড থেকে সেরে উঠেই প্রত্যেকের এই সমস্যাটি হয়েছে। তাই এটি যে কোভিডেরই প্রভাব তা নিশ্চিত হতে পেরেছেন চিকিৎসকরা। এমনটি নাকে টেলিস্কোপ ক্যামেরা ঢুকিয়ে পরীক্ষাও করা হয়েছে (Endoscopy)এটা দেখার জন্য যে, নাকের মধ্যে কোনও পলিপ বা টিউমার হয়েছে কিনা। তাও কিন্তু পাওয়া যায়নি। ডাক্তাররা দেখেছেন, এই রোগীরা কেউই মানসিক রোগী নন। বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে এই সমস্যা হচ্ছে।
- চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে স্যালাইন ন্যাজাল ওয়াশ দিয়ে বারবার নাক পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়ে। যা যে কোনও ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়। বাড়িতে বানিয়েও নেওয়া যায়। এছাড়া খাবার সোডা ও লবণের রেডিমেড মিক্সার দিয়েও নাক পরিষ্কার করানো হয়েছে। যাতে অলফ্যাক্টরি নার্ভগুলিকে চাঙ্গা করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
- নিউরো ভিটামিন সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। নাকের নার্ভগুলি যদি কোনও কারণে ঝিমিয়ে পড়ে থাকে, তা চাঙ্গা করার জন্য ।
- ন্যাজাল স্টেরয়েড স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছে।
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ও দেওয়া হয়েছে রোগীকে ।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেওয়া হয়েছে।
- অলফ্যাক্টরি নার্ভের সেন্সরি ট্রেনিং ও দেওয়া হয়েছে কিছু পেশেন্টকে। এই পদ্ধতিতে কফি বা হিং এর মতো তিনটি তীব্র ও স্বতন্ত্র্য এবং চেনা গন্ধের জিনিস রেখে প্রত্যেককে শোঁকানো হয়। এই গন্ধগুলির একেবারে আলাদা এক একটা চরিত্র আছে। সেইগুলি বিভিন্নভাবে শুঁকিয়ে শুঁকিয়ে স্বাভাবিক গন্ধে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুন :করোনার পর ঝাপসা দেখা ! ভাবাচ্ছে রেটিনায় রক্ত জমাট বেঁধে দৃষ্টিহীন হওয়ার ঘটনা
নানাভাবে চিকিৎসা করে দেখা হয়েছে কোনটা কাজ করে। এর মধ্যে ঠিক কোন চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীরা সাড়া দিলেন, তা এখনও পর্যন্ত চিকিৎসকরা নিশ্চিত নন। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (Delta) যে ঘ্রাণশক্তির উপর সরাসরি ধাক্কা দিয়েছে , তার প্রমাণ এই কোভিড পরবর্তী সমস্যা।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
