(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Independence Day Special: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম পীঠস্থান বরিশালের শঙ্কর মঠ
Independence Day 2021: বরিশালের শঙ্কর মঠের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই মঠের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
কলকাতা: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর, হাওড়া, কলকাতা, জলপাইগুড়ির মতো জেলাগুলির পাশাপাশি তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকার ভূমিকাও অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ছিল। বরিশালে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কেন্দ্র ছিল শঙ্কর মঠ। এই মঠকে কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন। সেই সময় অনেক তরুণ ও যুবকই শঙ্কর মঠে থাকতেন। তাঁরা শিবমন্দিরের মধ্যে বসে আন্দোলনের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাতেন। এখনও বরিশালের শঙ্কর মঠে সেই শিবমন্দির এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
বরিশালের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব নলিনী দাস, নিরঞ্জন সেনগুপ্ত, তারকেশ্বর সেনগুপ্ত, ফণিভূষণ দাশগুপ্ত, প্যারীমোহন দাস, প্রাণকুমার সেন। এছাড়া শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন ব্রজমোহন দত্ত, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, অবলা বসু, সীতানাথ সিদ্ধান্তবাগীশ, প্যারীলাল রায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। বরিশালে কয়েক শতাব্দী আগেই শিক্ষার প্রসার ঘটে। ফলে তরুণ ও যুবকদের মধ্যে সচেতনতা এবং ব্রিটিশ-বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। তার ফলে গত শতাব্দী শুরু হওয়ার আগে থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। কালীপ্রসন্ন ঘোষের নেতৃত্বে বিদেশি জিনিসপত্র বর্জন এবং স্বদেশী জিনিস গ্রহণের ডাক দেওয়ার মাধ্যমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়। এরপর ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন বাংলার অন্যান্য প্রান্তের মতো বরিশালেও ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়।
ঐতিহাসিকরা বরিশালের নবজাগরণের সময় হিসেবে ১৯৫৮ থেকে ১৯০০ সালকে চিহ্নিত করেছেন। এই সময় বরিশালের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন ভাবনা গড়ে ওঠে যা পরবর্তীকালে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বরিশালের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।
বরিশালে ব্রজমোহন কলেজ ও রামকৃষ্ণ মিশনের কাছেই অবস্থিত শঙ্কর মঠ। ১৯১০ সালে এই মঠ প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, যিনি কাশীতে গিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী নামে পরিচিতি লাভ করেন। এই মঠে আধ্যাত্মিক চেতনার পাশাপাশি স্বদেশী আন্দোলনের চর্চাও শুরু হয়। বিপ্লবীরা যেমন এই মঠে আশ্রয় পান, তেমনই আবার মঠ থেকে অনেক তরুণ বিপ্লবীও তৈরি করেন স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ। এই মঠ গড়ে তোলা এবং ব্রিটিশ-বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্য করেন অগ্নিযুগের অপর এক বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ। শুরুতে পূজা-অর্চনার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও, কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটিশ পুলিশ জানতে পারে, মঠে বিপ্লবীরা একত্রিত হয়ে জায়গাটিকে আন্দোলনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এই আন্দোলন রোখার উদ্দেশে শঙ্কর মঠের ঠিক সামনে ব্রিটিশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দফতর স্থাপন করা হয়।
স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী ১৯২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে দেহ বরিশালে নিয়ে গিয়ে শঙ্কর মঠে সমাধিস্থ করা হয়।
স্বাধীনতা এবং দেশভাগের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অস্থিরতার ফলে দীর্ঘদিন শঙ্কর মঠ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। মঠের বিশাল জমি দখলেরও চেষ্টা হয়েছিল। তবে তা সফল হয়নি। বরিশালের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই মঠকে নতুন করে গড়ে তুলেছেন। এখন মঠে পুরনো শিবমন্দির ছাড়াও নতুন করে দুর্গা, কালী ও মনসা মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে। মঠে বেশ কয়েকজন ছাত্র থাকে। বড় মাঠ ও একটি পুকুর আছে মঠে। এই মঠেরই জমিতে ইসকন মন্দির তৈরি করা হয়েছে।