এক্সপ্লোর
রান তাড়া করায় বারবার বিপত্তি, উদ্বিগ্ন মর্গ্যানও, লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যর্থতাই প্রশ্ন তুলছে ইংল্যান্ডের কাপ-ভবিষ্যৎ নিয়ে
দুই পরাজয়ের পর ইংল্যান্ডের ট্রফি জয়ের স্বপ্নই যেন কিছুটা ধাক্কা খেল। সেই সঙ্গে জোরাল প্রশ্ন উঠে গেল, ওয়ান ডে ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল কি চাপের মুখে কেঁপে যায়?

লিডস: আয়োজক দেশ। চেনা পরিবেশে খেলার সুবিধা। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক দুরন্ত ফর্ম। দলে একাধিক ম্যাচ উইনার। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই টুর্নামেন্টে অন্যতম ফেভারিট মনে করা হচ্ছিল ইংল্যান্ডকে। অথচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০৭ রানে অল আউট হয়ে যাওয়া পাকিস্তান দাপটের সঙ্গে হারিয়ে দিয়েছে। আর শুক্রবার হারতে হল শ্রীলঙ্কার কাছে। সেই শ্রীলঙ্কা, অতি বড় সমর্থকও যাদের বিশ্বকাপের শেষ চারে ওঠা নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নয়। দুই পরাজয়ের পর ইংল্যান্ডের ট্রফি জয়ের স্বপ্নই যেন কিছুটা ধাক্কা খেল। সেই সঙ্গে জোরাল প্রশ্ন উঠে গেল, ওয়ান ডে ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল কি চাপের মুখে কেঁপে যায়? বিশেষজ্ঞরা অন্তত সেরকমই মনে করছেন। বলা হচ্ছে, রান তাড়া করার সময় অঙ্ক কষে এগতে পারছেন না ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানেরা। যে কারণে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিরুদ্ধেও বিপত্তি এড়ানো যাচ্ছে না। পরিসংখ্যানও সেই তত্ত্বকে আরও পোক্ত করছে। দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে ১৪টি ওয়ান ডে ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ড হেরেছে ৪টিতে। প্রত্যেকবারই রান তাড়া করে। যার প্রথমটি কলম্বোয় গত অক্টোবরে। শ্রীলঙ্কার ৩৬৬/৬ তাড়া করতে নেমে ১০৭/৪ থেকে ১৩২ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। শেষ ৬ উইকেট পড়েছিল মাত্র ২৫ রানের ব্যবধানে! চলতি বছরে ইংল্যান্ড যে তিনটি ম্যাচ হেরেছে, প্রত্যেকটিই রান তাড়া করে। এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই একই ব্যাধি। লোয়ার মিডল অর্ডার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তো পারেইনি, উল্টে চাপের মুখে বারবার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৮৯/৬ তাড়া করতে নেমে ২৬ রানে হেরে গিয়েছিলেন অইন মর্গ্যানরা। সেই ম্যাচে ৩৫ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ৩৪৮/৮ তাড়া করতে নেমে একটা সময় ৪ উইকেটে ২৪৮ তুলে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। তবে ৮৬ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাক বোলারদের কাছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শুক্রবার লক্ষ্য ছিল অপেক্ষাকৃত সহজ। জেতার জন্য ২৩৩ রান তাড়া করতে নেমে এক সময় ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ১৪৪/৪। সকলে কার্যত ধরেই নিয়েছিলেন যে, ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের দিকে আরও এক কদম এগিয়ে যাবে ইংল্যান্ড। সেখান থেকে ৬৮ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট পড়ে যায় মর্গ্যানদের। হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদারদের। যা দেখার পর বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, একাধিক বিগহিটার থাকলেও ক্রিজ কামড়ে ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো ক্রিকেটারের অভাব রয়েছে ইংল্যান্ড দলে। অনেকেই তুলে ধরছেন মঈন আলির একটি মন্তব্য। মঈন সম্প্রতি বলেছিলেন, ড্রেসিংরুমে তাঁদের মধ্যে আলোচনা চলে কে কত দূরপাল্লার আর কত বেশি ছক্কা মারতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, এই অতিরিক্ত আগ্রাসী মনোভাবই ভরাডুবি ডেকে আনছে। চাপের মুখে বরফশীতল মস্তিষ্ক আর অঙ্ক মেনে রান তাড়া করার মতো একজন প্রকৃত ফিনিশারের অভাব রয়েছে ইংল্যান্ড দলে। টুর্নামেন্ট যত এগবে, এই সমস্যা ইংল্যান্ডকে আরও বেকায়দায় ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রাক্তন ক্রিকেটারদের অনেকেরই। অধিনায়ক মর্গ্যান নিজেও উপলব্ধি করছেন যে, রান তাড়া করতে গিয়ে বারবার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সে লক্ষ্য বড়-ছোট যাই হোক না কেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারের পর মর্গ্যান বলেছেন, ‘রান তাড়া করে সফল হওয়ার প্রাথমিক শর্ত হল পার্টনারশিপ। আমাদের সেটাই হচ্ছে না। হলেও বড় পার্টনারশিপ হচ্ছে না। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ রান করছে। তবে সেটা সব সময় যথেষ্ট হয় না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বেশ কয়েকটা উইকেট দ্রুত চলে যাওয়ায় ম্যাচের মোড় ঘুরে গেল। যদিও আমাদের ছয় নম্বরে যে নামে তার ব্যাটিং গড় ৪০ আর সাতে যে নামে তার গড় ৩০। প্রত্যেকটা উইকেটই মূল্যবান। এই প্রাথমিক ব্যাপারটাই আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’ শ্রীলঙ্কার জয় দেখে আবার স্বস্তি ফিরেছে মাহেলা জয়বর্ধনের। আইসিসি-র ওয়েবসাইটে নিজের কলামে জয়বর্ধনে লিখেছেন, ‘এই জয় আশা করছি শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। বিশ্বের অন্যতম সেরা দলকে হারিয়েছে। এবার নিজেদের দক্ষতায় ভরসা রাখতে হবে।’ জয়বর্ধনে আরও লিখেছেন, ‘মাঝে-মধ্যে মনে হচ্ছিল ওরা ভয় নিয়ে খেলছে। এই জয় সেই ছবিটা আশা করছি পাল্টাবে।’
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও পড়ুন






















