Arvind Kejriwal: আইনি শর্তপূরণ হয়েছে কি? কেজরিওয়ালের গ্রেফতারিতে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ ED, জবাব দিতে চাইল সময়
Delhi Liquor Case: ED-র গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কেজরিওয়াল।
নয়াদিল্লি: আবগারি দুর্নীতি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে (Arvind Kejriwal) গ্রেফতার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। নির্বাচনী আদর্শ আচরণ বিধি চালুর পর, একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই (Delhi Liquor Case)। এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছে আম আদমি পার্টি। কোনও রকম জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। সেই নিয়ে বুধবার তপ্ত হয়ে উঠল দিল্লি হাইকোর্ট। ধারাল প্রশ্নে ED-কে বিদ্ধ করলেন কেজরিওয়ালের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। (Abhishek Manu Singhvi)
ED-র গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কেজরিওয়াল। বুধবার আদালতে সেই নিয়ে শুনানি চলছিল। সেখানে ED-কে তীব্র আক্রমণ করেন সিঙ্ঘভি। প্রথমেই গ্রেফতারির সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, "গণতন্ত্রে সকলের সমান সুযোগ পাওয়াই রীতি। অর্থাৎ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কাম্য। কোনও ভাবে যদি এক্ষেত্রে অসাম্যের সৃষ্টি হয়, তাতে গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলিই খর্ব হয়। নির্বাচনের মুখে এই গ্রেফতারির একটাই লক্ষ্য, যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রচার আটকানো যায়, তাঁর দলকে ধাক্কা দেওয়া যায় এবং ভোটগ্রহণের আগে কিছু নম্বর তুলে নেওয়া যায়। অবশ্যই একজন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু গ্রেফতারির সময় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।"
ED-র গ্রেফতারি প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট গলদ রয়েছে, বেআইনি ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন কেজরিওয়াল। তাঁকে উদ্ধৃত করে সিঙ্ঘভি বলেন, "এখনও মুক্তি চেয়ে আবেদন জানাচ্ছি আমি। কারণ যে কারণ দেখিয়ে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা ত্রুটিপূর্ণ। অপরাধ আইনের দোহাই দেওয়া হলেও, মূল কাঠামোতেই গলদ রয়েছে। নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার পর এক জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনও রকম তদন্ত ছাড়া, কোনও রকম নথিপত্র ছাড়া...আমার গ্রেফতারির নেপথ্যে একটাই কারণ, একতরফা ভাবে মাঠের দখল নেওয়া। কিন্তু তাতে সংবিধানের কাঠামোয় আঘাত হানা হচ্ছে সরাসরি।”
VIDEO | Here’s what Delhi Minister Atishi (@AtishiAAP) said on Delhi High Court refusing to interfere with the arrest of CM Arvind Kejriwal by the ED.
— Press Trust of India (@PTI_News) March 27, 2024
“Today Delhi High Court took cognisance of the fact that this arrest may be illegal, undemocratic and politically motivated.… pic.twitter.com/evqTDJ7zqz
আরও পড়ুন: কোর্টে অন্তর্বর্তী স্বস্তি পেলেন না কেজরিওয়াল, আরও একটি রাত অন্তত জেলেই, কাল হেফাজতের মেয়াদ শেষ
ED-র রিম্যান্ড নোট প্রসঙ্গে কেজরিওয়ালকে উদ্ধৃত করে সিঙ্ঘভি আরও বলেন, "ওঁরা বলছেন, অপরাধের বিরুদ্ধে বাকি তদন্ত প্রক্রিয়া পূরণ করতে আমাকে চান। বলছেন, ‘আপনি বয়ান দিচ্ছেন না বলে আপনাকে জেলে ভরছি’। এমন চলে তো বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি উল্টে যাবে? আমি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কোন কাজে অসুবিধা হচ্ছিল আমাদের? যদি ধরেও নিই আপনাদের কাছে গ্রেফতারির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত নথি রয়েছে। কিন্তু আপনাদের কাছে যা রয়েছে, তা হল এক সাক্ষীর বয়ান, যা আমাকে গ্রেফতার করার ভিত্তি হতে পারে না।”
কেজরিওয়ালের হয়ে আদালতে সওয়াল করা অভিজ্ঞ আইনজীবী অমিত দেসাই বলেন, “কেজরিওয়াল অপরাধ করেছেন বলে গ্রেফতার করা হয়েছে, এর সপক্ষেই কোনও প্রমাণ তুলে আনা যায়নি। তথ্য লুকনো, বিশাল সম্পত্তির মালিকানা, অপরাধের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনও কারণের সপক্ষেই প্রমাণ দিতে পারেনি ED. আবেদনকারীকে যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া গ্রেফতার করা হয়েছে, এতে একটা জিনিস স্পষ্ট যে, পরিকল্পনা মাফিকই গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের থেকে একতরফা ভাবে মাঠ ছিনিয়ে নিতেই এই কাজ করা হয়েছে।”
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে ধারা প্রয়োগ নিয়েও ED-কে কার্যত তুলোধনা করেন সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, "ধারা ১৯-এ তিনটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, এখনও পর্যন্ত কী পাওয়া গিয়েছে, কী কারণ উঠে এসেছে এবং কেন অপরাধ বলে গন্য হচ্ছে। যে কোনও গ্রেফতারির ক্ষেত্রে এই তিনটি শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। কাগজে-কলমে রেকর্ড থাকতে হবে। জামিন পাওয়া কঠিন বলেই এতগুলি শর্ত রাখা হয়েছে এক্ষেত্রে। আপনার গ্রেফতার করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তার সপক্ষে যথেষ্ট কারণ থাকতে হবে। ধারা ১৯-এর আওতায় সবক'টি শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। দিনের দিন গ্রেফতারির প্রয়োজন কী পড়ল, তাতেই প্রশ্ন।"
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছে ED. সেই প্রসঙ্গে কেজরিওয়ালকে উদ্ধৃত করে সিঙ্ঘভি বলেন, "ওরা বলছে আমি সহযোগিতা করিনি। ED সক্রিয় হওয়ার পর এই অসহযোগিতা শব্দটির সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয়ে আসছে। আপন অপরাধের বিরুদ্ধে অধিকার প্রয়োগ করতেই গ্রেফতারি কি বলতে পারেন? এ তো ২০ এবং ২১ নং ধারার মাথায় আঘাত করার সমান! অর্থাৎ আমি যদি বলি, কিছু জানি না, বা আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বল, আইন বলবে নিজেকে অপরাধী হিসেবে তুলে ধরছ না বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে।"
হেফাজতে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের যে আর্জি জানিয়েছে ED, তাতে অসহযোগিতার উল্লেখ রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে কেজরিওয়ালকে উদ্ধৃত করে সিঙ্ঘভি বলেন, "আমার ভূমিকা নিয়ে নাকি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায়। নির্বাচনের আগে আমার ভূমিকা নিয়ে যদি তদন্ত শুরু করেন, তা কি গ্রেফতারির প্রয়োজনীয়তার পরিপন্থী নয়?" অভিষেক আরও জানান, আম আদমি পার্টির আর এক নেতা সঞ্জয় সিংহকে গ্রেফতারির আগে ন'জনের বয়ান রেকর্ড করে ED. কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে একজনেরও বয়ান নেই। গ্রেফতারির পর এক বয়ান দিয়ে, পরে বয়ান বদল করায় সাতখুন মাফ হয়ে গিয়েছে, আবগারি দুর্নীতি মামলায় এমন নজিরও রয়েছে বলে জানান সিঙ্ঘভি।
PTI Exclusive: If President's Rule is imposed in Delhi, it would be clear case of political vendetta, says Atishi
— PTI News Alerts (@PTI_NewsAlerts) March 27, 2024
Edited video is available on PTI Videos (https://t.co/L2D7HH309u) #PTINewsAlerts #PTIVideos @PTI_News pic.twitter.com/ibl6Dw9SGc
এক্ষেত্রে আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরবর্তীতে রাজসাক্ষীতে পরিণত হওয়া শরৎচন্দ্র রেড্ডির প্রসঙ্গই টেনেছেন সিঙ্ঘভি। ২০২২ সালে আবগারি দুর্নীতি মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ED. সেই সময় কেজরিওয়ালের সঙ্গে কখনও কথা হয়নি, AAP-এর সঙ্গে সংযোগ নেই বলে তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। AAP-এর দাবি, এর পরই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। কিন্তু কয়েক মাস পর বয়ান বদল করে আবগারি নীতি নিয়ে কেজরিওয়ালের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে জানান শরৎ। এর পরই তড়িঘড়ি জামিন পেয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে নির্বাচনী বন্ড মারফত বিজেপি-কে প্রায় ৫২ কোটি টাকা চাঁদা দেয় তাঁর সংস্থা।
কেজরিওয়ালের আবেদনের প্রেক্ষিতে এর পর ED-র কাছে জবাব চায় আদালত। কিন্তু ED-র হয়ে আদালতে সওয়াল করা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু আদালতে জবাব দিতে তিন সপ্তাহ সময় চান। কেজরিওয়ালের হয়ে একাধিক আইনজীবী সওয়াল করছেন কেন, এখন কেন খেলার মাঠে সমান সুযোগের দাবি খাটছে না, প্রশ্ন তোলেন তিনি। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু জানান, কেজরিওয়ালের আবেদনের প্রতিলিপি গতকালই হাতে পেয়েছেন তাঁরা। সবকিছুর জবাব দিতে সময় দরকার। এর বিরোধিতা করেন কেজরিওয়ালের এর এক আইনজীবী শাদান ফরাসত। তিনি জানান, শনিবার আবেদন জমা দেওয়া হয়। সব প্রক্রিয়া সেরে ED-কে প্রতিলিপি পাঠানো হয় তাঁদের তরফে। তার পর যথেষ্ট সময় ছিল তদন্তকারীদের হাতে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে জবাব দিতে দেরি করছে তারা, যাতে আরও বেশিদিন জেলে রাখা যায় কেজরিওয়ালকে। আদালতের তরফে যদিও ২ এপ্রিল পর্যন্ত ED-কে সময় দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার কেজরিওয়ালের হেফাজতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানাতে পারে ED.
VIDEO | Here’s what Delhi Minister Atishi (@AtishiAAP) told @pti_news on the arrest of CM Arvind Kejriwal by the ED.
— Press Trust of India (@PTI_News) March 27, 2024
“The current situation is not just about the AAP and its campaign. The arrest of Delhi CM Arvind Kejriwal is an attack on democratic institutions in this… pic.twitter.com/cGOJwNokX0
সেই নিয়ে এদিন আবারও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন দিল্লির মন্ত্রী অতিশী। তিনি বলেন, "কেজরিওয়ালের গ্রেফতারিতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির সুবিধাই হবে। কারণ সব স্তর থেকে সমবেদনা পাচ্ছে।" কেজরিওয়াল এই মুহূর্তে জেল থেকেই সরকারি কাজকর্মের নির্দেশ দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার আশঙ্কাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। তবে অতিশীর বক্তব্য, "কেজরিওয়ালের গ্রেফতারিতে যদি দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়, তাহলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিষয়টি জলে মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।"
Delhi Liquor policy case | ED summons AAP Goa president Amit Palekar, Ramarao Wagh, Datta Prasad Naik and president of Bhandari Samaj - Ashok Naik, asking them join the investigation tomorrow.
— ANI (@ANI) March 27, 2024
দু'বছর ধরে যে আবগারি দুর্নীতির তদন্ত করছে ED, আদালতে কেজরিওয়ালের আইনজীবীদের প্রশ্নের একটিরও তারা জবাব দিতে পারল না কেন, এই প্রশ্নও তুলেছেন অতিশী। যদিও এর মধ্যেই গোয়ায় আম আদমির সভাপতি অমিত পালেকর, রামারাও ওয়াঘ, দত্তপ্রসাদ নায়েককে ডেকে পাঠিয়েছে ED. তলব করা হয়েছে ভাণ্ডারী সমাজের সভাপতি অশোক নায়েককেও। আগামী কাল তদন্তে যুক্ত হতে বলা হয়েছে তাঁদের।