(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Rath Yatra: জগন্নাথ-দর্শন মাত্রই দু’চোখে আনন্দাশ্রু, রথের রশিতে ভেদাভেদ ভুলিয়েছিলেন চৈতন্যদেব
Rath Yatra Puri: চৈতন্যচরিতামৃত থেকে জানা যায়, কৃষ্ণপ্রেমে পাগল শ্রীচৈতন্যের পুরীতে আসার সবথেকে বড় কারণ ছিল প্রভু জগন্নাথদেব। জগন্নাথ দর্শনের পরই প্রেমাবিষ্ট হয়ে শ্রীচৈতন্যের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু।
কলকাতা: জগন্নাথদেবের রথযাত্রাকে ঘিরে উন্মাদনার অন্ত নেই। ভক্তিস্রোতের বানভাসি এই রূপ দেখেনি গোটা বিশ্ব। একসময় যা ছিল জাত-পাত বেড়াজালের মধ্যে, নবীন সন্ন্যাসী নিমাইয়ের অংশগ্রহণে অনির্বচনীয় দৃশ্যে সৃষ্টি হয়েছিল শ্রীক্ষেত্রে। শূদ্র থেকে রাজকূল- রথের রশি হাতে তুলে দিয়েছিলেন সমাজের সর্বস্তরের, সর্বক্ষেত্রে। ভেদাভেদ মিশিয়ে সেই ছিল সর্বধর্মসমম্বয়ের ডাক।
চৈতন্যচরিতামৃত থেকে জানা যায়, কৃষ্ণপ্রেমে পাগল শ্রীচৈতন্যের পুরীতে আসার সবথেকে বড় কারণ ছিল প্রভু জগন্নাথদেব। জগন্নাথ দর্শনের পরই প্রেমাবিষ্ট হয়ে শ্রীচৈতন্যের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। দারুবিগ্রহকে আলিঙ্গন করে মন্দিরেই মূর্ছা গিয়েছিলেন নিমাই। ভক্তিমার্গের দিশা দেখিয়ে পুরীর রথযাত্রাকে এক ভিন্ন আঙ্গিক দিয়েছিলেন চৈতন্যদেব। বলা হয়ে থাকে, পুরীর রথযাত্রার আজ যে এত খ্যাতি তার প্রধান কারণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। তাঁকে নিয়ে রচিত একাধিক গ্রন্থে সে কথা বর্ণনা করা হয়েছে বারংবার।
এমনকী ষোড়শ শতকের বঙ্গদেশের বাঙালিরা পথের বিপদ-আপদ তুচ্ছজ্ঞান করে পুরীর রথযাত্রায় যোগদান করেছেন একমাত্র মহাপ্রভুর আকর্ষণে, এমনটাও বলা হয়েছে একাধিক গ্রন্থে। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজে পুরীর রথে যোগ দিতে ছুটে গিয়েছেন বারংবার। হরিনামের ডাককে জীবনের মূল মন্ত্র করে বিপদসংকুল পথ নির্ভয়ে অতিক্রম করে পুরীর রথে শামিল হয়েছেন সে যুগের মহিলারাও।
বলা হয়ে থাকে, চৈতন্যদেবের নিত্যলীলা এই নীলাচলেই। রথযাত্রার দিন ব্রাহ্মমুহূর্তে ভাবরসে ঢুবে ছিলেন তিনি। সেই সময় রাজা প্রতাপরুদ্র সোনার ঝাড়ু দিয়ে জগন্নাথদেবের যাত্রাপথ পরিষ্কার করতে শুরু করেছেন। ন্দন মিশ্রিত জলে পথ ধোওয়ানো হচ্ছে। মহাপ্রভুর তখন দিব্যোন্মাদ অবস্থা। ভক্তদের কপালে চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিলেন তিনি। পাশে ছিলেন ভারতী ব্রহ্মানন্দ, অদ্বৈত আচার্য, নিত্যানন্দপ্রভু। হরির নামে জয়ধ্বনি দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রা। একাধিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাজা প্রতাপরুদ্রকে বুকে টেনে নেন শ্রীচৈতন্য। শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে রয়েছে, ‘নাচিতে নাচিতে প্রভুর হৈল ভাবান্তর/ হস্ত তুলি শ্লোক পড়ে করি উচ্চস্বর।’ আবার কোথাও এও বলা হয়েছে, ‘উদ্দণ্ড নৃত্যে প্রভুর অদ্ভুত বিকার।/ অষ্ট সাত্ত্বিক ভাবোদয় হয় সমকাল।।/ কভু স্তম্ভ কভু প্রভু ভূমিতে পড়য়।/ শুষ্ককাষ্ঠসম হস্ত পদ না চলয়।’
লোকারণ্য শ্রীক্ষেত্র। সব ভুলে দু'হাত তুলে এগিয়ে চলেছেন মহাপ্রভু। রথের পাশে লোকসমাগম। জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথ যেন সেই সব কিছুকে পেরিয়ে নিমাইয়ের পথেই কৃষ্ণক্ষেত্রে বিরাজিত। আজও। অনন্তধরে...