Iran-Russia-China Drill: সাগরে যৌথ মহড়া রাশিয়া-ইরান-চিনের, ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে বদলাচ্ছে ভূরাজনীতির সমীকরণ?
Joint Naval Drill: মঙ্গলবার পশ্চিম এশিয়ায় যৌথ মহড়ায় অংশ নেয় ইরান, রাশিয়া এবং চিন।

নয়াদিল্লি: আমেরিকার মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। আর সেই আবহেই একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির সমীকরণ। একদিকে, দীর্ঘদিনের সতীর্থ কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে আমেরিকার মতানৈক্য বাড়ছে যখন, ঠিক সেই সময় ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে ইরান, রাশিয়া এবং চিনের। ঘনিষ্ঠতা এতটাই বাড়ছে যে ধারাবাহিক ভাবে যৌথ মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে তিন দেশ। (Iran-Russia-China Drill)
মঙ্গলবার পশ্চিম এশিয়ায় যৌথ মহড়ায় অংশ নেয় ইরান, রাশিয়া এবং চিন। পারস্য উপসাগরের সঙ্কীর্ণ প্রবেশদ্বার, যেখান দিয়ে পৃথিবীর মোট অপরিশোধিত তেলের এক পঞ্চমাংশ সরবরাহ করা হয়, সেখানে হরমুজ প্রণালীর কাছে, ওমান উপসাগরে তিন দেশের নৌবাহিনী যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়। এই যৌথ মহড়ার নাম রাখা হয় 'Maritime Security Belt 2025'. হরমুজ প্রণালীর কাছে ওই জলভাগে এর আগে একাধিক বার বাণিজ্যিক জাহাজ বাজেয়াপ্ত করার অভিযোগ ওঠে ইরানের বিরুদ্ধে। (Joint Naval Drill)
চিনের CGTN জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইরানের চবাহার বন্দরের কাছে যৌথ মহড়া শুরু হয়। তিন দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলতেই এই যৌথ মহড়া। সমুদ্রে অব্যর্থ নিশানায় আঘাত হানা, বিপদ সামাল দেওয়া, যৌথ অনুসন্ধান এবং যৌথ অভিযানই এই মহড়ার লক্ষ্য বলে জানানো হয়। দু'দিন ধরে চলে যৌথ মহড়া। দিনের বেলা মহড়া চলে যেমন, রাতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার প্রশিক্ষণ চলে। যাত্রীবিহীন নৌকা, ড্রোন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়ার Interfax News. ইরানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আজেরবাইজান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, কাজাখস্তান, পাকিস্তান, কাতার, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী মহড়া পর্যবেক্ষণ করে।
চিন এবং রাশিয়া সাধারণত পশ্চিম এশিয়ার জলভাগে মহড়া দেয় না। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেখানকার জলভাগের সামরিকীকরণ ঘটেছে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠন Houthi লোহিত সাগরে ইজরায়েলি জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরুকরে। প্যালেস্তাইনের প্রতি সমব্যথী হওয়ার দরুণই হামলা বলেজানায় তারা। ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে Houthi-ও হামলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ইজরায়েল যদি গাজায় খাবার, ওষুধ, জরুরি পণ্য পৌঁছতে না দেয়, সেক্ষেত্রে ফের তারা হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
লোহিত সাগরে আমেরিকা-সহ অন্য পশ্চিমি দেশগুলির উপস্থিতিও বাড়ছে লাগাতার। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে Houthi-র মোকাবিলা করতে সেখানে ১০ দেশ সেনা নামাতে সম্মত হয়। বাহরিনে শিবির রয়েছে আমেরিকার নৌবাহিনীরও। তবে এবারের এই যৌথ মহড়া আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দফায় ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান ট্রাম্প। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফিরে ফের আলোচনা শুরু করতে চিঠি দিয়েছেন তিনি। যদিও ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেই জানিয়েছেন, আমেরিকার 'গুন্ডামি'র সামনে মাথা নোয়ানোর প্রশ্ন ওঠে না।
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে সরে দাঁড়ান ট্রাম্প। আমেরিকা সরকারের আগের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপান। এর পর ইরানও চুক্তির শর্তাবলীর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। ইজরায়েলের কাছে যেখানে প্রায় ৯০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে, ইরানের কাছে একটিও রয়েছে বলে খবর নেই। তাই আমেরিকার দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এমনকি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতার ধারেকাছেও ইরানকে পাওয়া যায় না।
২০২৩ সালের জুন মাসে Stockholm International Peace Institute-এর পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের গোড়ার দিক পর্যন্ত নয়টি দেশের কাছে ১২,৫১২টি ওয়ারহেড রয়েছে। মোট পরমাণু অস্ত্রের ৯০ শতাংশেরই মালিক আমেরিকা এবং রাশিয়া। এর মধ্যে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা ৪৪৮৯, আমেরিকার ৩৭০৮, চিনের ৪১০, ফ্রান্সের ২৯০, ব্রিটেনের ২২৫, পাকিস্তানের ১৭০, ভারতের ১৬৪, ইজরায়েলের ৯০, উত্তর কোরিয়ার ৩০। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই এই যৌথ মহড়া।
এই নিয়ে পঞ্চম বার যৌথ নৌমহড়া চালাল ওই তিন দেশ। ব্রিটেনের তরফে সেই নিয়ে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। ব্রিটিশ সেনার United Kingdom Maritime Trade Operations Center জানায়, তাদের GPS-এ হরমুজ প্রণালির কাছে প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়ে। বেশ কয়েক ঘণ্টা সেই পরিস্থিতি বজায় ছিল। ফলে অন্য উপায়ে যাত্রা করতে হয় বাকিদের। EOS Risk Group-এর শন রবার্টসন বলেন, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি খর্ব করতে GSP জ্যামিং করা হয়ে থাকতে পারে। আগেও সেনা মহড়ার জেরে ওই অঞ্চলে দিক নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় বলে জানান তিনি।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
