Interstellar Tunnel: মহাশূন্যের বুকে গোপন সুড়ঙ্গ, সৌরজগতের একেবারে গা ঘেঁষে, দেখাল eROSITA টেলিস্কোপ
Cosmic Tunnel: Astronomy & Astrophysics জার্নালে প্রকাশিত নয়া গবেষণায় বিষয়টি খোলসা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নয়াদিল্লি: পৃথিবীতে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব যখন প্রশ্নের মুখে, সেই সময় মহাশূন্যে বিকল্প বাসস্থানের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন একদল নভোশ্চর। 'Interstellar' ছবিতে এমনই গল্প বুনেছিলেন হলিউড পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান। শুধুমাত্র ছবির গল্প, শিল্পীদের অভিনয় গুণের জন্যই নয়, ব্রহ্মাণ্ডের রীতি-নীতি বোঝার ক্ষেত্রেও ওই ছবি মাইলফলক হয়ে উঠেছে। তবে কোনও কল্পকাহিনি নয়, এবার বাস্তবেও মহাকাশ গবেষণার জগতে অন্য মাইলফলক তৈরির সন্ধিক্ষণ উপস্থিত হল। কারণ মহাশূন্যের বুকে রহস্যময় 'আন্তঃনাক্ষত্রিক সুড়ঙ্গ'-এর সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। (Interstellar Tunnel)
রহস্যময় সুড়ঙ্গ কি পথ দেখাবে?
Astronomy & Astrophysics জার্নালে প্রকাশিত নয়া গবেষণায় বিষয়টি খোলসা করেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছে, আমাদের সৌরজগৎকে ঘিরে রেখেছে যে সুবিস্তৃত উষ্ণ গ্যাসের মেঘ Local Hot Bubble, তার অংশ হতে পারে ওই সুড়ঙ্গ। ওই সুড়ঙ্গ নেহাত কোনও মহাজাগতিক আকার নয়, বরং সেটি আসলে গোপন মহাজাগতিক পথ হতে পারে বলে মত বিজ্ঞানীদের। তাঁদের মতে, আমাদের সৌরজগৎকে অন্য নক্ষত্রমণ্ডলের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে ওই রহস্যময় সুড়ঙ্গপথ। অর্থাৎ সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করছে সেটি। (Cosmic Tunnel)
যে উষ্ণ গ্যাসের স্তর, Local Hot Bubble-এর উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা, সেট কয়েকশো আলোকবর্ষ দূর পর্যন্ত আমাদের সৌরজগৎকে ঘিরে রেখেছে। আজ থেকে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ বছর আগে, পর পর একাধিক মহাজাগতিক বিস্ফোরণের ফলে ওই উষ্ণ গ্যাসের সৃষ্টি বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। বরাবরই ওই সুবিস্তৃত উষ্ণ গ্যাসের মেঘ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তার মধ্যে ওই রহস্যময় সুড়ঙ্গটির খোঁজ মিলল এই প্রথম।
এই প্রথম এমন কিছুর খোঁজ মিলল
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তুলনামূলক ঠান্ডা গ্যাসের স্তরে অবস্থিত নক্ষত্র থেকে সেন্টোরাস নক্ষত্রমণ্ডল পর্যন্ত বিস্তৃত সুড়ঙ্গটি। Local Hot Bubble-কে ফুঁড়েই এগিয়েছে সেটি। eROSITA টেলিস্কোপ থেকে তোলা ওই মহাজাগতিক সুড়ঙ্গের 3D ছবিও প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা সাড়া ফেলে দিয়েছে। মেঘের উপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে eROSITA টেলিস্কোপটি। X-ray ডিটেক্টর ব্যবহার করে মহাকাশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছবি তোলে সেটি। ওই টেলিস্কোপই Local Hot Bubble-এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুড়ঙ্গটি আবিষ্কার করেছে বলে জানিয়েছেন গবেষক মাইকেল ফ্রেবার্গ।
৫০ বছর আগে Local Hot Bubble-এর ব্যাখ্যা দেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি ছিল, মাদের সৌরজগৎকে ঘিরে থাকা তুলনামূলক কম ঘনত্বের অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে, গ্যাসের মেঘকে অতিক্রম করে এগোতে পারে X-ray. যদিও ওই ব্যাখ্যা নিয়ে মতভেদ ছিলই। সম্প্রতি Local Hot Bubble-এর একেবারে কিনারায় নয়া নক্ষত্র জন্ম নেওয়ার পর পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ওই অঞ্চল একেবারেই শূন্য নয়, বরং অত্যন্ত সক্রিয়।
ছবি: ছবি: Astronomy & Astrophysics জার্নাল।
তবে এই রহস্যময় সুড়ঙ্গপথের আবিষ্কার আরও একাধিক প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে। Local Hot Bubble-ই শুধু নয়, আমাদের চারিদিকে আরও এমন একাধিক সুড়ঙ্গপথ লুকিয়ে রয়েছে কি না, উঠছে প্রশ্ন। আকাশগঙ্গা ছায়াপথে এমন গোপন সুড়ঙ্গের নেটওয়র্ক থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। Local Hot Bubble-এর সর্বত্র তাপমাত্রা এক নয়, বরং তারতম্য রয়েছে বলেও মত বিজ্ঞানীদের। এই তাপমাত্রার রকমফেরও নেহাত কাকতালীয় নয়, বরং এর থেকে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের সৃষ্টি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যেতে পারে বলে মত তাঁদের।
Interstellar Space কী?
রহস্যময় ওই মহাজাগতিক সুড়ঙ্গকে ইংরেজিতে 'Interstellar Tunnel' বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। মহাকাশ বিজ্ঞানে Interstelalr Space-এর অর্থ হল আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম। এই আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম আসলে মহাশূন্যের বুকে একটি সুবিশাল অঞ্ল, যা বিভিন্ন কণায় পরিপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেন (৭০ %) এবং হিলিয়াম (২৮%)। বাকি ২ শতাংশে ভারী গ্যাস, ধুলো এবং অন্য মহাজাগতিক বস্তুসমূহ রয়েছে। যে মহাজাগতিক বিস্ফোরণের দরুণ ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি, সেখান থেকে ছিটকে পড়া বস্তুও রয়েছে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে। বহুদূর বিস্তৃত আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমের কিছু অঞ্চলের ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি, কোথাও আবার ঘনত্ব মাত্র প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে একটি পরমাণু।
এই আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম নক্ষত্রের সৃষ্টি থেকে মহাজাগতিক ক্রিয়াক্রেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের সৌরজগতে সূর্য যেমন চারপাশের পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার বাইরে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বস্তুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছায়াপথ এবং তারাদের জীবনচক্র বোঝার ক্ষেত্রে এই আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমকে বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত দু'টি নক্ষত্রের মধ্যবর্তী যে অঞ্চল, তাকে বলা হয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম।