ISL: আজ আরও একটা আইএসএল ফাইনাল, শেষবার খেতাবি লড়াইয়ে মোহনবাগান-মুম্বই দ্বৈরথে কী হয়েছিল?
Mohun Bagan vs Mumbai City: আইএসএলে দুই দলের প্রথম চারবারের মুখোমুখিতেই জেতে মুম্বই। তার মধ্যে ছিল সেই ঐতিহাসিক দুই ম্যাচ, যেগুলিতে হেরে লিগশিল্ড ও কাপ দুইই হাতছাড়া করে তৎকালীন এটিকে মোহনবাগান।
কলকাতা: সেটা ছিল ২০২০-২১ মরশুম। এ বার যেমন মোহনবাগানের কাছে হেরে লিগশিল্ড হাতছাড়া হয় মুম্বইয়ের, সেবার মুম্বইয়ের কাছে হেরে লিগশীর্ষের দৌড় থেকে ছিটকে যায় এটিকে মোহনবাগান। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচ বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে। শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট পাওয়ার জন্য সে দিন মুম্বই সিটি এফসি-র সামনে জয় ছাড়া কোনও রাস্তা ছিল না। এটিকে মোহনবাগান ড্র করলেই সেই সম্মান অর্জন করে নিতে পারত।
কিন্তু তুমুল লড়াই করেও মুম্বইয়ের দু’টি গোল শোধ করতে পারেননি রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসরা। সাত মিনিটের মাথায় সেনেগালিজ ডিফেন্ডার মুর্তাদা ফল গোল করে এগিয়ে দেন মুম্বইকে। ৩৯ মিনিটের মাথায় সেই ব্যবধান বাড়ান নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড বার্থোলোমিউ ওগবেচে। দু’জনেই হেডে গোল করেন।
এই হারের পর সেমমিফাইনালে এটিকে মোহনাবাগান খেলে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। এবং অন্য সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় মুম্বই ও গোয়া। এ বারের মতোই। সেমিফাইনালের লড়াই জিতে ২০২১-এর ১৩ মার্চ খেতাবের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয় গঙ্গাপাড়ের ক্লাব ও আরব সাগরপাড়ের ক্লাব। ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে টানটান উত্তেজনায় ভরা সেই ফাইনালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ফল ১-১ থাকার পরে বিপিন সিংয়ের গোলে ফাইনাল জিতে নেয় মুম্বই।
১৮ মিনিটের মাথায় ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে যাওয়ার পরে তাঁরই সতীর্থ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার তিরির নিজ গোলে সমতা আনে মুম্বই সিটি এফসি। সব শেষে মণিপুরী মিডফিল্ডার বিপিনের গোলে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় এবং শেষ হাসি হাসেন তিনি ও তাঁর সতীর্থরাই।
মুম্বই শুরু থেকে অযথা ঝুঁকি নিতে না চাইলেও এটিকে মোহনবাগান কিন্তু শুরু থেকেই বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা শুরু করে। গঙ্গাপাড়ের দল শুরু থেকেই যতটা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে পছন্দ করে, সাগরপাড়ের দল কিন্তু ধীর-স্থির ভাবে প্রতিপক্ষকে পরখ করে নিয়ে তার পরে তাদের এলাকায় হানা দেওয়া বেশি পছন্দ করে।
দু’টি আগ্রাসী আক্রমণের পরে আরও চনমনে হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান এবং ১৮ মিনিটের মাথায় ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এগিয়ে যায় কলকাতার দল। নিজেদের গোল এরিয়ায় অমেয় রানাওয়াডে ব্যাকপাস করেন মুর্তাদা ফলকে। তিনি গোলকিপার অমরিন্দরকে ব্যাক পাস করেন এবং সেই বল ছিনিয়ে নিয়েই বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেন ডেভিড।
তাদের এই উল্লাস অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এবং তা পুরোপুরি নিজেদের ভুল বোঝাবুঝির ফলেই। ২৯ মিনিটের মাথায় আহমেদ জাহুর পা থেকে একটি লং বল উড়ে যায় এটিকে মোহনবাগানের বক্সের দিকে, বিপিন সিংয়ের উদ্দেশ্যে। বিপিনের সামনে ছিলেন তিরি। তিনি হেড করে বলটি ক্লিয়ার করতে যান। কিন্তু তাঁর মাথার পিছনে লেগে বল গোলে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পরেই মাঠের মধ্যে এক দূর্ঘটনা ঘটে যায়। শুভাশিস বসুর সঙ্গে প্রবল সঙ্ঘর্ষে গুরুতর চোট পান অমেয় রানাওয়াডে এবং তিনি সাময়িক অচৈতন্য হয়ে পড়েন। সম্ভবত মাথায় চোট লাগে তাঁর। অনেকক্ষণ তিনি মাঠে পড়ে ছিলেন এবং প্রায় ৭-৮ মিনিট খেলা বন্ধ রেখে তাঁর চিকিৎসার পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রথমার্ধ যে গতিতে শুরু করেছিল এটিকে মোহনবাগান, দ্বিতীয়ার্ধ সেই গতিতেই শুরু করে মুম্বই সিটি এফসি। তবে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগানও। ফলে দুই দলের প্রতিদ্বন্দিতায় তীব্রতা আরও বাড়ে। কিন্তু গোলসংখ্যা বাড়াতে পারেনি কোনও পক্ষই। মনবীর সিং এবং হাভিয়ে হার্নান্ডেজ দু’জনেই সেরা ফর্মে ছিলেন সে দিন। কিন্তু তা সবুজ-মেরুন বাহিনীর কাজে লাগেনি।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে যে ভাবে জয়সূচক গোলটি করেন বিপিন, তাকে অভাবনীয় বললেও কম বলা হয়। গোলকিপার অরিন্দম একটি লং বল বুক দিয়ে রিসিভ করতে বক্সের বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি তিনি। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে যান ওগবেচে। ক্ষিপ্র ওগবেচেকে আটকাতে গিয়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন অরিন্দম। সন্দেশ ঝিঙ্গনও তাঁকে বাধা দিতে যান। কিন্তু তাঁকেও বোকা বানিয়ে কাট করে পিছনে, ডানদিকে সরে গিয়ে ওগবেচে প্রায় গোল সাজিয়ে দেন বিপিন সিংয়ের জন্য। সে মরশুমের একমাত্র হ্যাটট্রিকের নায়ক বিপিন তাঁর কাজটি করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি। সোজা গোলে শট নেন।
গোলশোধের জন্য মরিয়া এটিকে মোহনবাগান চার মিনিটের স্টপেজ টাইমে পরপর দু’বার কর্নার আদায় করলেও শেষ পর্যন্ত সেগুলো কাজে লাগিয়ে ফের সমতা আনতে পারেনি। তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল