Sikkim Flood: হিমাচল-উত্তরাখণ্ড-সিকিমের বিপর্যয়ের নেপথ্যে বেআইনি, বেহিসেবি নির্মাণ দায়ী?
Sikkim Incident: বিপর্যয় ভুলে জীবনের ছন্দে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সিকিম। কিন্তু পারছে কই। বিপর্যয়ের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও। এখনও স্বাভাবিক হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থা
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: কেন ফেটে গেল দক্ষিণ লোনক লেক? হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের পর কেন বিপর্যয় নেমে এল উত্তর সিকিমে? নদী ও প্রকৃতির ক্ষতি করে গড়ে ওঠা বেআইনি, বেহিসেবি নির্মাণই কি দায়ী? তেমনই অনুমান বিশেষজ্ঞদের। কতটা বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে থাকা পশ্চিমবঙ্গ? সিকিম বিপর্যয় উসকে দিয়েছে অনেক প্রশ্ন।
বিপর্যয় ভুলে জীবনের ছন্দে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করছে সিকিম। কিন্তু পারছে কই। বিপর্যয়ের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও। এখনও স্বাভাবিক হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থা, এখনও স্বাভাবিক স্রোতে ফিরতে পারেনি উত্তর সিকিমের জীবন।
মাস দুয়েক আগেই ভয়ানক বিপর্যয় দেখেছে হিমালয়ের দুই রাজ্য উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশে। মেঘভাঙা বৃষ্টি, ধস, বন্যার মতো ঘটনায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে ওই দুই রাজ্যের বহু এলাকা। মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। সেই ক্ষত এখনও সেরে ওঠেনি। তার মধ্যেই আরও একটি পাহাড়ি রাজ্যে নেমে এল ভয়ানক বিপর্যয়।
গত ৩ অক্টোবর, গভীর রাত থেকে উত্তর সিকিমের দক্ষিণ লোনক লেকের ওপর শুরু হয় মেঘভাঙা বৃষ্টি। জলের চাপ বাড়তে বাড়তে ভোরের দিকে ফেটে যায় লেক। যার জেরে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে জল। ভেঙে যায় চুংথাম ড্যাম। উত্তর সিকিমের ঘুম ভাঙার আগেই হড়পা বান নেমে আসে তিস্তায়।
ভোরের অন্ধকারে নেমে আসে ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলের স্রোত। ভাসিয়ে নিয়ে যায় রাস্তা, ঘর, বাড়ি, গাড়ি— সব কিছু। উত্তর সিকিমের সিংতামের কাছে বরদাংয়ের সেনাছাউনিতে কাদাজলের নীচে চাপা পড়ে যায় সেনাবাহিনীর ৪১টি গাড়ি। ডুবে যায় সেনা ছাউনি। ভেসে যান জওয়ানরা।
কী করে ফেটে গেলে লেক?
দক্ষিণ লোনক হ্রদের ভাঙনের পিছনে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ। যেমন, হিমবাহ গলে গিয়ে ধস, মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিকম্প।
কেন এত ভয়াবহ হল বিপর্যয়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তার গতিপথ রুদ্ধ করে তৈরি হওয়া একাধিক বাঁধ এবং দুই পাড়ের বেআইনি নির্মাণই দায়ী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত ভাবে বাঁধ দেওয়া, জলের গতি আটকানো, মেঘভাঙা বৃষ্টির পরেও জলের চাপ ছিলই। দুইয়ের প্রভাবেই এই ক্ষতি। না হলে কম ক্ষতি হত। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রঞ্জন রায় বলেন, 'যেখানে সেখানে নির্মাণ বিপজ্জনক। নদীর গতিপথ রুদ্ধ হওয়া একটা কারণ, রাস্তায় কেন ধস নামে।'
শিমলা-মানালি হোক বা উটি, দার্জিলিং-কালিম্পং হোক বা গ্যাংটক-পেলিং। পাহাড়ের কোলে নির্মাণের সারি! অভিযোগ, নিয়ম না মেনেই চলছে নির্মাণকাজ। শুধু তাই নয়, সেবক থেকে রংপো রেল পথের জন্য তৈরি হচ্ছে একের পর এক টানেল।
এই প্রেক্ষিতে সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কতটা বিপজ্জনক জায়গায় রয়েছে হিমালয়ের পাদদেশে থাকা পশ্চিমবঙ্গ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভঙ্গিল পর্বত হিমালয়ে প্রতি মুহূর্তে ভাঙাগড়া চলছে। এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ। তাই বিপদের আশঙ্কা আছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধান পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, 'নবীন পর্বত.... পাথরের চরিত্র আলাদা। যেখানে বাঁধ বানানোর উপযুক্ত কিনা না দেখে নির্মাণ করে দেওয়া হয়। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি হলে কোনও পরিমাপ করা নেই জল কতটা উঠতে পারে। সেই উচ্চতা পর্যন্ত নির্মাণ করা যাবে না। তাহলে জল বেরিয়ে যেত। সেটা আমাদের এখানে দেখা হয় না।'
মেঘভাঙা বৃষ্টিতে আক্ষরিক অর্থে মেঘে কোনও ‘বার্স্ট’ বা ‘বিস্ফোরণ’ হয় না। বিশেষ কোনও জায়গায় অল্প সময়ে প্রবল বৃষ্টিকেই মেঘভাঙা বৃষ্টি বলা হয়।
গত কয়েক বছরে উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশের মতো পাহাড়ি রাজ্যে এমন বিপর্যয় ঘটেছে বার বার। তারপর সরকারি স্তরে নানা পরিকল্পনা হয়েছে, ভুলত্রুটি শোধরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যে তার প্রতিফলন বেশি ঘটেনি, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সিকিম।