Sandhya Mukherjee : বেদ-উপনিষদ আর সুরে গীতশ্রীর পরলৌকিক ক্রিয়া করল 'শুভম অস্তু', কোন কোন গাওয়া হল
Sandhya Mukherjee : সেই অনুষ্ঠানের মধ্যে আসে সনাতনী মন্ত্র, সেই সঙ্গে বিবেকানন্দর দর্শন, থাকে রবীন্দ্রনাথের গান। সেই ভাবেই প্রণাম জানানো হল শিল্পীকে।
কলকাতা : এখনও ওই ঘরে যেন অনুরণিত হয় শিল্পীর কণ্ঠস্বর। তাঁর উপস্থিতি যেন জানান দেয় ঘরের প্রতিটি কোণায়। সেই ঘর। সেই খাট। সেই তানপুরাখানি। শিল্পীর ছবিতে রজনীগন্ধার মালা। চারিদিকে সুঘ্রাণ। রয়েছে বড় প্রিয় তাঁর রেডিওখানিও। তিনি যেন এখনও আছেন, সেখানেই। পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেল গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। গতে বাঁধা শ্রাদ্ধের মন্ত্রে নয়, শিল্পীর আত্মাকে শান্তি দিতে হল রবীন্দ্রগান, বেদ-উপনিষদে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। পৌরহিত্যে ড. নন্দিনী ভৌমিক ও তাঁর শুভম অস্তু (Shubham Astu ) ।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২। সন্ধে নাগাদ এসেছিল খবরটা। প্রয়াত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee ) । থমকে গিয়েছিল বাংলা। শুধু মুখোপাধ্যায় পরিবারের কাছে নয়, সেই দিন স্বজন হারিয়েছিল তাঁর আপামোর সঙ্গীতপ্রেমী বাঙালি। তারপর কেটে গেল বেশ কয়েকটি দিন। এল নিয়ম মাফিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের দিন। নাহ্, সঙ্গীতের পূজারী এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানানো কি আর শুধু মন্ত্র-তন্ত্রতে হয়, তাঁর আত্মাকে শান্তি দিতে পারে তো সঙ্গীতই। সেই ভাবনা থেকেই সম্ভবত নন্দিনী ভৌমিক ও শুভম অস্তুকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন শিল্পী-কন্যা সৌমি। ' তাঁর অনুরোধ পেয়ে মনে হচ্ছিল, বিরাট এক সম্মান পেলাম। ' গীতশ্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন হল, বেদমন্ত্রে, উপনিষদ উচ্চারণে ও রবীন্দ্রগানে। 'আগুনের পরশমণি'তে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হল শিল্পীকে।
এবিপি লাইভকে দেওয়া ফোনালাপে নন্দিনী ভৌমিক ( Nandini Bhowmik) জানালেন, তাঁদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট ধারা আছে। সেই অনুষ্ঠানের মধ্যে আসে সনাতনী মন্ত্র, সেই সঙ্গে বিবেকানন্দর দর্শন, থাকে রবীন্দ্রনাথের গান। সেই ভাবেই প্রণাম জানানো হল শিল্পীকে। প্রায় ১০ টি গান থাকে এই নিবেদনে। নন্দিনী ভৌমিক জানালেন, ' আমাদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর চলে যায় দেহ। কিন্তু আত্মা তো অবিনশ্বর। সেই প্রসঙ্গেই আসে রবীন্দ্রগান ' আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে' । অনুষ্ঠানের মধ্যে আছে যজ্ঞও। সেই অগ্নি প্রজ্বলনের সময় আসে, আগুনের পরশমণি। রবি ঠাকুরের গান থেকে উপনিষদ, সবেতেই রয়েছে কালোকে ঘুচিয়ে দিয়ে আলোর পথে যাত্রা করার বার্তা। সেই প্রসঙ্গেই আসে গান, আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। যেখানে বলে হয়েছে ... বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা'
গীতশ্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে জড়ো হয়েছিলেন বহু মানুষ। কিন্তু সবাই নীরবতা বজায় রাখেন। অপূর্ব এক শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। 'যে মানুষটির সঙ্গীত আমাদের কৈশোর, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব - সবকালকেই সমৃদ্ধ করেছে, তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন তো বিশাল সৌভাগ্যের' জানালেন নন্দিনী ভৌমিক।