Covishield Vaccine: কোভিশিল্ডে শরীরে বিরল রোগ-পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অ্যাস্ট্রাজেনেকার 'দায় স্বীকারে' বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য
Covishield Explained: কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে খুব বিরল থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস) হতে পারে, এমনই দাবি
নয়া দিল্লি: বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারিকে ঠেকাতে ভরসা ছিল ভ্যাকসিনই। লকডাউন ও কোভিড ভাইরাসে মৃত্যুমিছিল যখন অব্যাহত ছিল, সেই সময় আশা ভরসা ছিল করোনা টিকায়। সেই সময়ই ত্রাতা হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি AZD1222। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় কোভিশিল্ড নামে সেই টিকা তৈরি করে বাজারে এনেছিল। এবার সেই কোভিশিল্ডের নামেই উঠল ভয়ঙ্কর অভিযোগ, এবার সেই অভিযোগের দায় স্বীকার করল অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থাটি। এরপরই শোরগোল পড়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে।
কী জানান হয়েছে?
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফর্মুলায় তৈরি কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই টিকার ডোজে বিরল রোগের সম্ভাবনা আছে। থ্রম্বোসিস-থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস) থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি, কোভিশিল্ডে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আদালতে এমনটাই স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
করোনার সেই সময় একদিকে ছিল মৃত্যুমিছিল, আরেকদিকে ছিল লকডাউনের আতঙ্ক। সেই সময় কোভিশিল্ড অনেকটাই আশার আলোও দেখিয়েছিল। ট্রায়াল রানে ইতিবাচক রিপোর্ট যেমন ছিল তেমন বেশ কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবরও উঠে এসেছিল সেই ট্রায়ালের সময়ই। বেশ কিছু সময়ের জন্য সেই ট্রায়ালও বন্ধ রাখা হয়েছিল।
আইনি জটিলতায় কোভিশিল্ড!
এরপর রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এগোতে থাকে ট্রায়ালের কাজ। তবে ২০২৩ এ অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করেছিলেন জেমি স্কট। তাঁর অভিযোগ ছিল ২০২১ এর এপ্রিলে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় এবং তা জমাট বাঁধতে শুরু করে। এর জেরে মস্তিষ্কে স্থায়ী ক্ষতও তৈরি হয়। এর জেরে তাঁর মস্তিষ্কজনিত কার্যক্ষমতাও কমে গিয়েছে। এরই মধ্যে আদালতে ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে যে কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। দ্য টেলিগ্রাফের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি আইনি নথি জমা দেয়। সেখানে বলা হয়েছে এই কোভিড ভ্যাকসিনের জেরে 'বিরল রোগ টিটিএস'-ও হতে পারে। সেই সময়ই আইনজীবীরা আদালতে দাবি করেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন 'ত্রুটিযুক্ত'। যদিও সেই সময় অ্যাস্ট্রাজেনেকা এই দাবি অস্বীকার করেছিল।
তবে সংবাদসংস্থা দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে ৫১টি মামলা দায়ের হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে। কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হোক কিংবা আক্রান্তের পরিবার অনেকেই মামলা দায়েরের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণও দাবি করেছে। প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের দাবি।
কী এই বিরল রোগটি?
কোভিড ভ্যাকসিনের কারণে বিরল রোগ থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম (টিটিএস) হতে পারে। এই রোগ হলে মানুষের রক্তে প্লেটলেট কমে যায় এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায়। চিকিৎসকদের কথায়, এই রোগটি বিরল কারণ একই সঙ্গে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধা এবং প্লেটলেট কমে যাওয়ার উপসর্গ হয়। যা স্বাভাবিক নয়। কারণ, আমরা জানি, প্লেটলেট রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে। কিন্তু এক্ষেত্রে শরীরে উল্টোটা ঘটছে। অর্থাৎ প্লেটলেট কমছে, কিন্তু একই সঙ্গে রক্তও জমাট বাধছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী, এটি তখনই হয় যখন প্লেটলেট স্বাভাবিকের থেকে কমে যায় অন্যদিকে শরীরে ইমিউন রেসপন্স তৈরি হওয়ায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলি শরীরে প্রোটিন তৈরি করে সেই সকল উপাদানগুলিতে আক্রমণ করে ব্লাড ক্লট করে দিচ্ছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে যেহেতু ভেক্টর হিসেবে অ্যাডিনোভাইরাসকে ব্যবহার করা হয়, তা থেকেও এই বিরল রোগ শরীরে তৈরি হতে পারে।
এই রোগের প্রাথমিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী?
টিটিএস বা থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম এর উপসর্গ বলতে শরীরের নানা স্থানে রক্ত জমাট বাধতে থাকে। পাশাপাহসি রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমায় ফ্যাকাশে দেখাতে পারে শরীর। প্রথমে মাথাব্যথা, পেটে ব্যথা, পায়ে ফোলাভাব, শ্বাস নিতে সমস্যা, চিন্তাভাবনায় ছেদ এবং হাত পা কাঁপার মতো সমস্যা দেখা যায়।
কোভিশিল্ডে কীভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটছে?
গবেষকরা মনে করছেন, কোভিশিল্ড দেওয়ার পর ঠিক কীভাবে এই বিরল রোগটি হচ্ছে তা এখনই বুঝতে পারা যাচ্ছে না। তবে গবেষকদের ধারণা এই ভ্যাকসিনটি শরীরে একটি ইমিউন রেসপন্সকে ট্রিগার করে। যা প্লেটলেট অ্যাক্টিভেশন করে রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, autoimmune heparin-induced thrombocytopenia।
এটি প্রচলিত থ্রম্বোসিস রোগের থেকে কতটা আলাদা?
গবেষকদের মতে, সব সময় যে ভ্যাকসিন থেকেই থ্রম্বোসিস হয় তা নয়, নন ভ্যাকসিন থ্রম্বোসিসও রয়েছে। যেমন সার্জারি হলে অনেকক্ষেত্রে থ্রম্বোসিসের সমস্যা হয়। এছাড়াও যারা ধূমপান করেন বা অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যায় ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রেও থ্রম্বোসিস হয়। কিন্তু টিটিএস -এই বিরল রোগে রক্ত জমাট হওয়ার পদ্ধতিটি আলাদা।
মামলাকারীদের ঠিক কী দাবি?
জেমি স্কটের স্ত্রী কেট স্কট সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক আগে থেকেই VITT- (vaccine induced immune thrombosis with thrombocytopenia) রোগের উল্লেখ রয়েছে যা ভ্যাকসিনের কারণেই হয়ে থাকে। একমাত্র অ্যাস্ট্রাজেনেকা এই নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তিন বছর লেগে গেল এই স্বীকারোক্তির। ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি ক্ষতিপপূরণেরও দাবি জানিয়েছি। সত্য আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কী দাবি?
আইনি জটিলতার মধ্যেই কার্যত 'দায় স্বীকার' করেছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তাঁদের তরফে বলা হয়েছে, যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, স্বাস্থ্য সমস্যায় রয়েছেন, আমাদের সহানুভূতি রয়েছে তাঁদের ও পরিবারের প্রতি। রোগীর নিরাপত্তা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। ভ্যাকসিন সহ সমস্ত ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট এবং কঠোর মান রয়েছে।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )