Census: ১৫১ বছরে এই প্রথম, আবারও পিছিয়ে গেল জনগণনা, সীমানা পুনর্বিন্যাসও নয় এখনই, লোকসভা নির্বাচনের আগে চিঠি রাজ্যগুলিকে
India Census:প্রতি ১০ বছর অন্তর এতকাল জনগণনা হওয়াই রীতি ছিল। ২০১১-র পর তাই ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল।
নয়াদিল্লি: পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তার জেরে আবারও পিছিয়ে গেল দেশের সার্বিক জনগণনা। আপাতত ২০২৪-'২৫ বর্ষে জনগণনার লক্ষ্য়মাত্রা রাখা হয়েছে। তবে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তা নিয়েও কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। এই মর্মে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে চিঠি পাঠাল রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (RGI). জেল, তেহসিল এবং প্রশাসনিক সীমানা পুনর্বিন্যাসের সময়সীমাও বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনও ভাবেই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে জনগণনা সম্ভব নয় ভারতে।
প্রতি ১০ বছর অন্তর এতকাল জনগণনা হওয়াই রীতি ছিল। ২০১১-র পর তাই ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা লাগাতার পিছিয়েই গিয়েছে। এবার আরও পিছিয়ে ২০২৪-'২৫ সালের লক্ষ্য রাখা হল। সাধারণত প্রশাসনিক এলাকার নিরিখে সীমানা পুনর্বিন্যাসে কয়েক মাস পরই জনগণনা শুরু হয়। এর আগে ২০২৩ অথবা ২০২৪ সালে জনগণনা হতে পারে বলে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের গোড়তেই লোকসভা নির্বাচন রয়েছে বলেই তা আরও পিছনো হল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের লোকজন।
বার বার জনগণনা পিছনো কোনো দেশের পক্ষে মোটেই শুভ লক্ষণ নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু ওয়ািকবহাল মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, জনগণনার সঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকে জুড়ে দেওয়াই লক্ষ্য কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের, যা নিয়ে বিতর্ক গোড়া থেকেই। বিরোধীদের দাবি, NPR-এর নামে আসলে দেশের 'অস্বাভাবিক' জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে বাদ দিতে চাইছে মোদি সরকার। কিন্তু অসমে জনসংখ্যাপঞ্জি তৈরি করতে গিয়েই বিস্তর সমস্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলেও, সব সম্প্রদায়ের ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ে যায়।
তাই NPR-এর সঙ্গে জনগণনাকে জুড়ে দিতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হতে পারে কেন্দ্রকে। লোকসভা নির্বাচনের আগে তার প্রভাব পড়তে পারে ভোটবাক্সেও। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে জনগণনা প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সেই কারণেই ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে প্রথমে ২০২৩ সালের ৩০ জুন এবং এখন যাবতীয় প্রক্রিয়াকে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হল বলে অভিযোগ সকলের।
ভারতের ইতিহাসে প্রথম জনগণনা হয় ১৮৭২ সালে। তার পর প্রতি ১০ বছর অন্তর নিয়ম মাফিক সেই প্রক্রিয়া চলে এসেছে ২০১১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই সেই নিয়মে ছেদ পড়েছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য় এভাবে জনগণনা স্থগিত রাখার নজির আর কোনও দেশে নেই। প্রথমে কোভিডকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়। এবার লোকসভা নির্বাচনে উপলক্ষ্য।
জনগণনার জন্য ২০২৩-'২৪ সালের বাজেটে বরাদ্দও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়। আগে যেখানে ৩,৬৭৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল, এবার তা কমিয়ে আনা হয়েছে ১,৫৬৪ কোটি টাকায়। এ বছর মে মাসে সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, সংসদে শীঘ্রই একটি বিল আনবে কেন্দ্রীয় সরকার, যার আওতায় নাগরিকদের জন্ম-মৃত্যু, ভোটার তালিকায় নথিভুক্তিকরণ-সহ অন্য তথ্য রেকর্ড করে রাখার কথা বলা হয়। তাতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে জানান শাহ। গত বছর মার্চ মাসে জনগণনা আইনেও বদল আনতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেন্দ্র। কিন্তু জনগণনা বার বারা এভাবে পিছিয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে সব মহল থেকেই।