Delhi Elections 2025: 'এত অহঙ্কার, পৃথিবী যখন করোনার সঙ্গে লড়ছিল...', এটাই কি কারণ হল দিল্লিতে AAP-এর পরাজয়ের ?
Arvind Kejriwal: এক যুগ আগে যে মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করেছিলেন দিল্লির বাসিন্দারা। সেখানে আজ তাঁরাই কেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরোধীদের আসনে পাঠিয়ে দিলেন ?

নয়াদিল্লি : মহিলাদের মাসে ২ হাজার ১০০ টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে, অটো-ট্যাক্সি চালকদের জীবনবিমা। বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কেন দিল্লি হাতছাড়া হল আম আদমি পার্টির ? কেন কেজরিওয়ালকে আর কুর্সিতে দেখতে চাইলেন না দিল্লিবাসী ? কেন তাঁরা ভরসা রাখলেন ডবল ইঞ্জিন সরকারে ? দিল্লির ভোটের ফলাফল নিয়ে চলছে বিস্তর কাটাছেঁড়া।
১০ বছরের উপর শাসক থেকে এক ধাক্কায় বিরোধী আসনে। কিন্তু, এক যুগ আগে যে মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করেছিলেন দিল্লির বাসিন্দারা। সেখানে আজ তাঁরাই কেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরোধীদের আসনে পাঠিয়ে দিলেন ? কেন কার্যত ঝাড়ুকে যমুনার জলে ছুড়ে ফেলে, হাতে পদ্ম তুলে নিলেন দিল্লিবাসী ?
এই প্রশ্নের উত্তরে সবার প্রথমেই যে ইস্যুটাকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা রাখছেন, তা হল - 'দুর্নীতি'। একজন উচ্চশিক্ষিত, সাদামাটা মানুষ...সাধারণ মানুষের হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের মতোই চালচলন, কথাবার্তা...ঠান্ডা লাগার ভয়ে গলায় সবসময় জড়িয়ে রাখতেন মাফলার...। দলের নাম রাখলেন আম আদমি পার্টি। এসব দেখেই ২০১৩ সালে, মুখ্যমন্ত্রীর আসনে মানুষটাকে বসিয়েছিলেন দিল্লিবাসী। চোখ বন্ধ করে ভরসা করেছিলেন। কিন্তু সেই অরবিন্দ কেজরিয়ালের নামের সঙ্গেই একটা সময় জুড়ে গেল দুর্নীতি। আবগারি মামলায় গ্রেফতার হলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে, জেল খাটলেন। শুধু তো তিনি একা নন, একই পরিণতি হয়েছে তাঁর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের।
তবে জেল থেকে মুক্তি পেলেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। সৌজন্যে তাঁর প্রাসাদোপম অট্টালিকা। যেটি ৪৫ কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যা নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী, সবারই হাতে আপের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এত অহঙ্কার, যখন পৃথিবী করোনার সঙ্গে লড়ছিল, তখন এই আপদা শিশমহল তৈরি করছিলেন। নিজেদের দুর্নীতি লুকোতে নানা ফন্দি এঁটেছেন। গ্যারান্টি দিচ্ছি, প্রথম অধিবেশনেই সিএজি রিপোর্ট রাখা হবে। দুর্নীতির তদন্ত হবে। যেই লুটেছে তাঁকে ফেরত দিতে হবে।"
যাঁর দলের নাম - আম আদমি, তিনি কী করে এই অট্টালিকায় থাকতে পারেন ? এই সব কারণেই কি আম আদমির থেকে দূরে সরে গেলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ? এই কারণেই কি তাঁকে আর চাইল না দিল্লিবাসী ? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দিল্লির আবগারি দুর্নীতিকাণ্ডের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভোটের ফলেও। যে কারণে একসময় জেল খাটা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ শিসোদিয়া ও সত্যেন্দ্র জৈন - প্রত্যেককেই হারতে হল।
এমনকী যে অন্না হাজারে একটা সময় অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দেশবাসীর সামনে এনেছিলেন, এদিন তিনিও দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় সরব হয়েছেন। বলেছেন, "দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া মানুষ ভালভাবে নেয়নি। আমি প্রথম থেকেই বলে এসেছি, ভোটের লড়ার সময় আচার-বিচার শুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। জীবন কলঙ্কমুক্ত হওয়া প্রয়োজন।"
আবগারি দুর্নীতি আবহকে কাজে লাগিয়ে গতবছর লোকসভা নির্বাচনে, দিল্লির সাতটি আসনেই জেতে বিজেপি। এবার বিধানসভা নির্বাচনেও সেই জয়ের ধারা বজায় রাখল নরেন্দ্র মোদির দল। তবে ঠিক কী কারণে বিজেপির এই বিপুল জয়? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একদিকে যেমন, দুর্নীতি ইস্যুতে আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। পাশাপাশি শহরের অপরিচ্ছন্নতা, দূষণকেও হাতিয়ার করেছে তারা। এমনকী মধ্যবিত্তদের হয়ে আপ অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও, বিজেপির প্রতিশ্রুতির উপর বেশি ভরসা করেছে দিল্লিবাসী। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নিজে ঘোষণা করেছিলেন, দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় এলেও আপ সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে না।
গত কয়েক বছর ধরে দিল্লি সরকার এবং কেন্দ্র নিযুক্ত দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়ন থমকে থেকেছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে দিল্লিবাসী মনে করছেন 'ডবল ইঞ্জিন' সরকার এলে এই বিবাদ মিটবে। এমনকী দিল্লির ভোটের আগে আগে কেন্দ্রীয় বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর করছাড়ের ঘোষণাও রাজধানীর বাসিন্দাদের মন জয় করেছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবার 'ডবল ইঞ্জিন' সরকার দিল্লিবাসীর আশা আকাঙ্খা কতটা পূরণ করতে পারে, সেদিকেও নজর থাকবে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
