Independence Day 2021: সংরক্ষিত হোক বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতি বিজড়িত ছেঁদাপাথর গ্রাম, দাবি বাসিন্দাদের
১৯০৮ সাল নাগাদ বাঁকুড়ার ছেঁদাপাথরের জঙ্গলে স্বয়ং ক্ষুদিরাম বসু বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেছিলেন। সেখান থেকেই নাকি অস্ত্রশিক্ষাও দিতেন দলের অন্যান্য সদস্যদের।
পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: ইতিহাসে আগ্রহী মানুষদের কাছে বেশ পরিচিত একটি নাম হল ছেঁদাপাথর। সৌজন্যে অবশ্যই বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। বারিকুল-ঝিলিমিলি রাস্তার পাশের শাল-পলাশ আর মহুয়ার জঙ্গলে ঘেরা ছোট্ট একটি জনপদ ছেঁদাপাথর।
প্রচলিত আছে, ১৯০৮ সাল নাগাদ এই ছেঁদাপাথরের জঙ্গলেই স্বয়ং ক্ষুদিরাম বসু বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেছিলেন। ওই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেখানকার জঙ্গলের কোনও এক পাহাড়ি গুহায় এসে লুকিয়ে ছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। সেখানে তিনি কেবল গা-ঢাকা দিয়েছিলেন তাই নয়, সেই গুহার ভিতরে বসেই তিনি বোমা বাঁধতেন এবং গোপন বৈপ্লবিক কাজকর্ম করতেন বলেও বক্তব্য বাসিন্দাদের। এমনকী সেখান থেকেই দলের অন্যান্য সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণও দিতেন বলে জানা যায়। আর এই গোটা সময় জুড়ে তাঁদের খাদ্য, অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতেন স্থানীয় অম্বিকানগর রাজবাড়ির অন্যতম সদস্য রাজা রাইচরণ ধবলদেব। তিনি ওই এলাকায় এখনও 'বিপ্লবী রাজা' নামেই পরিচিত।
কিন্তু জঙ্গল মহলের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ কীভাবে পেলেন ক্ষুদিরাম বসু? অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মুগবেড়িয়ার সুবিখ্যাত 'নন্দ' পরিবারের জমিদারি ছিল এই ছেঁদাপাথর গ্ৰামে। ওই নন্দ পরিবারের সঙ্গে বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বলাই বাহুল্য, এই নন্দ পরিবারের সৌজন্যেই ক্ষুদিরাম বসু ওই নির্দিষ্ট জায়গার খোঁজ পান এবং সেখানেই আত্মগোপন করে নিভৃতে সশস্ত্র বিপ্লবের কাজকর্ম পরিচালনা করতে থাকেন।
এখন সরকারের কাছে ওই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতি বিজড়িত ওই সকল জায়গাগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণ করে একটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হোক। এর ফলে বাইরে থেকে পর্যটকেরা এলে তাঁরাও ছেঁদাপাথর গ্রামের ইতিহাস জানতে পারবেন। একইসঙ্গে তাঁদের দাবি, ওই অঞ্চলে পর্যটকরা এসে যাতে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করলে ওই স্থানের অনেকটাই উন্নতি হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দারাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
অন্যদিকে অযত্ন ও অবহেলায় দিন কাটছে 'বিপ্লবী রাজা' রাইচরণের কর্মভূমি অম্বিকানগর। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানাচ্ছেন, বিগত বাম আমলে বিপ্লবী রাজার অবদানকে সম্মান জানিয়ে তৈরি করা হয় স্মৃতিসৌধ। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই সৌধের চারপাশ ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। এমনকী সৌধের একাংশে ভেঙেও পড়েছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ সংস্কার বা সংরক্ষণ কোনও কাজই হয়নি এতদিনে।