Moscow Terror Attack: অভিভাবক সংস্থার চেয়েও নৃশংস ISKP, হঠাৎ মস্কোয় হামলা কেন জঙ্গিদের?
ISKP Attack in Moscow: পশ্চিম এশিয়ায় আগের মতো সেই বাড়বাড়ন্ত আর নেই IS-এর। নাশকতামূলক কাজকর্মে তাদের আফগান শাখাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে সক্রিয়।
নয়াদিল্লি: হামলার পর যত সময় এগোচ্ছে, বেড়ে চলেছে হতাহতের সংখ্যা। শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় জঙ্গি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫০-র কাছাকাছি। আহত ১০০-রও বেশি মানুষ। ইতিমধ্যেই হামলার দায় স্বীকার করেছে Islamic State (IS) জঙ্গি সংগঠনের আফগান শাখা Islamic State in Khorasan Province (ISKP). কিন্তু হঠাৎ করে মস্কোয় হামলা চালাতে গেল কেন তারা? আন্তর্জাতিক মহল থেকে একাধিক সম্ভাব্য কারণ উঠে এসেছে। (Moscow Terror Attack)
পশ্চিম এশিয়ায় আগের মতো সেই বাড়বাড়ন্ত আর নেই IS-এর। নাশকতামূলক কাজকর্মে তাদের আফগান শাখাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে সক্রিয়। ২০১৪ সালের শেষ দিকে পূর্ব আফগানিস্তানে এই সংগঠনটি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পাকিস্তান তালিবান এবং স্থানীয় সশস্ত্র যোদ্ধাদের নিয়ে গড়ে ওঠে সংগঠনটি। তদানীন্তন IS-প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে সকলে। সেই থেকে কট্টর মৌলবাদী নীতি এবং নৃশংসতার জন্যই পরিচিত হয়ে উঠেছে ISKP. (ISKP Attack in Moscow)
মস্কোর ক্রোকাস সিটি কনসার্ট হলে ISKP সংগঠনের এই হামলার নেপথ্যে একাধিক সম্ভাব্য কারণ উঠে আসছে, যার মধ্যে অন্যতম হল, সিরিয়ায় তাদের অভিভাবক সংস্থা IS-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে রুশ সেনা। সিরিয়ায় আমেরিকাও IS-এর বিরুদ্ধে লড়ছে। প্রতিপক্ষ শিবিরের সকলকেই শত্রু মনে করে ISKP. এর আগে, ইরানেও নাশকতা চালিয়েছে তারা। আগামী দিনে পৃথিবীর অন্য দেশগুলিতেও তাদের পদার্পণ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানের মাটিতে ঘাটি গেড়ে থাকলেও, আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালিবান সরকারের সঙ্গেও মোটে বনিবনা নেই ISKP জঙ্গি সংগঠনের।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে মুসলিমদের দমন-পীড়ণের অভিযোগকে হাতিয়ার করে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে চায় ISKP. রাশিয়াকে তাই শত্রু মনে করে তারা। পশ্চিম এশিয়ায় যেভাবে IS-কে প্রতিহত করতে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া, তাও ISKP জঙ্গিদের রাগের কারণ। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাশিয়া যেভাবে IS-কে কোণঠাসা করেছে, সেখানে মুহুর্মুহু বোমা ফেলেছে, তা-ও তাদের IS-এর শত্রুতে পরিণত করেছে। কড়া নিরাপত্তার বলয় এড়িয়ে, রাশিয়ায় ঢুকে হামলা চালাতে পারলে গোটা দুনিয়ার নজর কাড়া যাবে বলে জানত ISKP। সেই মতোই হামলা চালানো হয়েছে।
তবে এই হামলার নেপথ্যে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। সিরিয়া এবং ইরানে ধাক্কা খেয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি। IS-এর শাখা সংগঠন হয়ে টিকে থাকার পরিবর্তে IS-এর সমকক্ষ হয়ে উঠতে চাইছে তারা। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের মতো তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে যে পারস্পরিক সংঘাত রয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ISKP নিজস্ব স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে বলেও মত কারও কারও।
শুধুমাত্র ISKP নয়, ISIS-ও গোড়া থেকেই রাশিয়াকে নিশানা করে আসছে বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের। কাবুলে রুশ দূতাবাসে হামলার পর পশ্চিম এশিয়ায় জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেয় রাশিয়া। এর আগেও মস্কোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল IS-এর। এ বছর মার্চ মাসেই রুশ যুক্তরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা FSB জানায়, IS-এর হামলার ছক ভেস্তে দিয়েছে তারা।
এর আগে, ২০২১ সালে কাবুল বিমানবন্দরে হামলার দায় নেয় ISKP. ওই হামলায় ১৭৫ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়। মারা যান আমেরিকার ১৩ জন সৈনিকও। বহু মানুষ আহত হন। ২০২০ সালের মে মাসে একটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগেও হামলা চালায় ISKP. সেবার মহিলা এবং শিশু মিলিয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালেরই নভেম্বর মাসে কাবুল ইউনিভার্সিটিতে হামলা চালায় তারা। অধ্যাপক এবং পড়ুয়া মিলিয়ে ২২ জন মারা যান। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাবুলে রুশ দূতাবাসেও হামলা চালানো হয়।
২০২৩ সালে দু’-দু’টি হামলার জন্য ISKP সংগঠনকে কাঠগড়ায় তোলে ইরান। দক্ষিণ শিরাজে শিয়া মসজিদে হামলা চালানো হয়, তাতে ১৪ জন মারা যান। আহত হন ৪০ জন। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ইরানের ফের হামলা চালায় ওই জঙ্গি সংগঠন, তাতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়। সেই সময় আমেরিকা জানায়, ISKP হামলার ছক কষছে বলে আগেই ইঙ্গিত পেয়েছিল তারা।
তবে মস্কোয় এই প্রথম হামলা হল না। এর আগে, ২০০২ সালে চেচেন সশস্ত্র গোষ্ঠী মস্কো থিয়েটারে ৯০০-র বেশি মানুষকে পণবন্দি করে। চেচনিয়া থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ সমাপ্তির দাবি জানিয়ে ওই ঘটনা ঘটানো হয়। রুশ সেনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নামলে ১৩০ জনের মৃত্যু হয় গোলাগুলিতে। শেষে বিশেষ গ্যাস ব্যবহার করে হামলাকারীদের অচেতন করে দেয় রুশ সেনা। ২০০৪ সালেও চেচেন সশস্ত্র গোষ্ঠী বেসলান স্কুলে বহু মানুষকে পণবন্দি করে। চেচনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে সেবার ওই হামলা চালানো হয়, যাতে ১৮৬ শিশু-সহ ৩৩৪ জনের মত্যু হয়।