Earth Slowing Down: ক্রমশ গতি শ্লথ হচ্ছে পৃথিবীর, পাল্টে যেতে পারে ব্রহ্মাণ্ডের সমীকরণই, মানুষকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা
Climate Change Slowing Down Earth: National Academy of Sciences জার্নালে নয়া গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
নয়াদিল্লি: সময়ের সঙ্গে দিনের দৈর্ঘ্যে হেরফের ঘটেছে আগেও। আগামীতে ২৪ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৫ ঘণ্টায় একদিন হতে পারে বলে আগেই জানা গিয়েছে। দিনের দৈর্ঘ্যে এই তারতম্যের নেপথ্যে মনুষ্যগঠিত কারণও রয়েছে বলে এবার উঠে এল। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে মেরু অঞ্চলের বরফ ক্রমশ গলছে। এর ফলেও পৃথিবীর গতি শ্লথ হচ্ছে বলে উঠে এল গবেষণায়। (Earth Slowing Down)
National Academy of Sciences জার্নালে নয়া গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র Jet Propulsion Laboratory থেকে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে। বিজ্ঞানীদের দাবি, মনুষ্যগঠিত জলবায়ু পরিবর্তন সময়কালের উপরও প্রভাব ফেলছে। পৃথিবীর উষ্ণতা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে চলতি শতক শেষ হতে হতে দিনের দৈর্ঘ্য আরও বাড়বে। (Climate Change Slowing Down Earth)
গবেষণাপত্রটিতে যোগদান রয়েছে NASA-র Jet Propulsion Laboratory-তে কর্মরত ভূপদার্থবিদ সুরেন্দ্র অধিকারীর। তিনি জানিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড এবং আন্টার্কটিকা থেকে লাগাতার বরফ গলছে। সেখান থেকে যে জল বেরিয়ে আসছে, তাতে বিষুবরেখা অঞ্চলের ভর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর গতি ক্রমশ শ্লথ হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: Halo Around Sun in Kolkata: ঝকঝকে আলোর বলয়, কলকাতার আকাশে সূর্যশোভা, বৃষ্টি থামতেই হল দৃশ্যমান
গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর আহ্নিক গতির উপরই প্রত্যেক ঘণ্টা, মিনিট এবং সেকেন্ডের হিসেব নির্ভর করে। পৃথিবীর অন্তঃস্থলে মজুত তরলের ভূমিকাও রয়েছে এতে। আবার চাঁদের অভিকর্ষ টানে পৃথিবীতে যে জোয়ার-ভাঁটা হয়, তার জন্যও অতীতেও পৃথিবীর গতিতে পরিবর্তন ঘটেছে। সাম্প্রতিক কালে তাতে নয়া সংযোজন ঘটেছে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে মেরু অঞ্চলের গলে যাওয়া বরফের।
পৃথিবীর আকার গোল বলে ধরা হলেও, বাস্তবে পৃথিবীর আকৃতি কমলালেবুর মতো। বিষুবরেখা বরাবর ফোলা কিছুটা। জোয়ার-ভাঁটা, অগ্ন্যুৎপাত, টেকটোনিক পাতের অবস্থান বদলের জেরে এই আকারেও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার ফলেও পৃথিবীর গতি শ্লথ হতে পারে বলে আগেও ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু দিনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হল এবার।
পৃথিবীর এক বিভিন্ন প্রান্তে রেডিও সিগনাল পৌঁছনোর সময়কালের হিসেব ধরে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমও ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার মাধ্যমে পৃথিবীর গতির সঠিক হিসেব পাওয়া যায়। হাজার হাজার বছর আগের গ্রহণের রেকর্ডও ঘেঁটে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, মনুষ্য সমাজ যদি এভাবেই গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন ঘটিয়ে চলে, উষ্ণ জলবায়ুর প্রভাব আরও প্রকট হয়ে ধরা দেবে। ২১ শতক শেষ হতে হতে পৃথিবীর গতি শ্লথ হওয়ার জন্য একা চাঁদ আর দায়ী থাকবে না, পৃথিবীবাসীর ভূমিকাও উল্লেখিত হবে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৯০০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের জেরেই দিনের দৈর্ঘ্য ০.৮ মিলি সেকেন্ড বেড়ে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ দিনের দৈর্ঘ্য ২.২ মিলি সেকেন্ড বেড়ে যাবে। মিলি সেকেন্ডের হিসেব শুনে কম মনে হলেও, এর ফল হতে পারে সুদূরপ্রসারী। মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে, পৃথিবীতে দিক নির্দেশেও সমস্যা দেখা দেবে।
সহজ করে বিষয়টি বোঝাতে আইস স্কেটিংয়ের উদাহরণ দিয়েছেন সুই ইউনিভারস্টির অধ্যাপক বেনেডিক্ট সজা। তিনি জানিয়েছেন, আইস স্কেটার যখন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গোল গোল ঘোরেন, হাত দু'টি জড়ো করা থাকে শরীরে সঙ্গে। এতে জোরে ঘোরেন তাঁরা। কিন্তু হাত দু'টি বাইরের দিকে ছড়ালেই গতি কমে যায়। পৃথিবীর ক্ষেত্রেই একই যুক্তি প্রযোজ। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলে গিয়ে পৃথিবীর আকার বদলে যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে তার গতিতেও।