Solar Storm: প্রতিবারই শক্তি বাড়িয়ে আঘাত, সৌরঝড়ের বিরুদ্ধে যুঝে চলেছে পৃথিবী, আশঙ্কার কথা শোনাল ISRO
Solar Storm Effects: একদিকে, পৃথিবীর বুকে পারদ যেমন নিত্য নতুন রেকর্ড গড়ছে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অহরহ আছড়ে পড়ছে সৌরঝড়।
নয়াদিল্লি: চোখের আড়াল হওয়ার আগেও পৃথিবীর উদ্দেশে জ্বলন্ত দীর্ঘশ্বাস সূর্যগহ্বরের। এর ফলে আবারও পৃথিবীর উপর ঘনিয়ে এল সমূহ বিপদ। বেশ কিছু দিন ধরেই সূর্যের চোখরাঙানি বজায় রয়েছে। একদিকে, পৃথিবীর বুকে পারদ যেমন নিত্য নতুন রেকর্ড গড়ছে, তেমনই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অহরহ আছড়ে পড়ছে সৌরঝড়। কোনও রকমে তা এযাবৎ তা থেকে রক্ষা পেয়ে আসছে পৃথিবী। তবে আগামী দিনে আরও বিপদ অপেক্ষা করছে বলে জানাল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. তারা জানিয়েছে, উত্তর মেরুর উপর দিয়ে বিমান চলাচল ইতিমধ্যেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আপনাআপনিই বহু বিমানের উড়ানের দিশা পাল্টে যাচ্ছে। আগামী দিনে আরও মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ISRO.
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের উপর গাঢ় রঙের, বৃহদাকার একটি দাগ দেখা যায়। ১৫টি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে যে প্রস্থ পাওয়া যাবে, তার চেয়েও চওড়া ওই দাগটি, যা নাম AR3664. এতদিন পৃথিবী থেকে স্পষ্ট দেখা গেলেও, সম্প্রতি চোখের আড়াল হয়েছে সে। কিন্তু যাওয়ার আগে ফের পৃথিবীর দিকে দু'-দু'টি সৌরঝড় নিক্ষেপ করে গিয়েছে। তীব্র শক্তিশালী ওই সৌরঝড়টির একটিকে X3.4 এবং অন্যটিকে X2.9 নামে অভিহিত করছেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী, বুধবার ভোর ৪টে বেজে ৩৭ এবং সকাল ১০টা বেজে ৩৮ মিনিটে সেগুলি চরম আকার ধারণ করে বলে জানা গিয়েছে।
কিন্তু যে সৌরঝড়কে ঘিরে প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা, তা আসলে কী?
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্য থেকে প্রবল পরিমাণে তড়িদাহত বা আয়নিত কণার স্রোত মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে, যা ঘণ্টায় ৩০ লক্ষ মাইল গতিতে পৃথিবীর দিকেও ধেয়ে আসা ওই শক্তিকেই সৌরঝড় বলা হয়। সৌরঝড়ের পাশাপাশি সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে সৌরবায়ু (Solar Wind), সৌরশিখা (Solar Flare) এবং সৌরকণা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সামনে সেগুলি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ঘর্ষণ লেগে লক্ষ লক্ষ আগুনের ফুলকিতে পরিণত হয় সেগুলি, যা মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি রূপে ধরা দেয় আমাদের চোখে। উত্তর মেরুর আকাশে যে আলোর নাচ দেখা যায় তাকে বলে মেরুজ্যোতি বোরিয়ালিস, দক্ষিণ মেরুতে আবার এর নাম মেরুজ্যোতি অস্ট্রেলিস।
পৃথিবীতে কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম সৌরঝড়?
পৃথিবীতে এই সৌরঝড়ের প্রভাবও হয় সুদূরপ্রসারী। শুধু মেরু অঞ্চলে শুধুমাত্র রঙি আলোর নৃত্যই চোখে পড়ে না, এতে মহাকাশে বিরাজমান কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পৃথিবীর রেডিও সংযোগ এবং বৈদ্যুতিন যোগাযোগও বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিমান, জাহাজ দিক ঠিক করতে গিয়ে বিপদে পড়ে। আবার বিদ্যুতের গ্রিডেরও ক্ষতি হতে পারে। পাশাপাশি, সৌর বিকিরণ সংস্পর্শে এসে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে, যা থেকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কর্মরত বিজ্ঞানী এমনকি মেরুপ্রদেশের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। আর সরাসরি যদি পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে সৌরঝড়, তাহলে মুহূর্তের মধ্যে সব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তবে এই বিপদ থেকে পৃথিবীকে বরাবর রক্ষা করে আসছে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, যা বর্মের মতো পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে, আঘাত থেকে বাঁচিয়ে চলেছে। এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে ধাক্কা খেয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায় সৌরঝড়।
ঘন ঘন চোখরাঙানি সূর্যের
আমেরিকার National Oceanic and Atmospheric Administration-এর মহাকাশের আবহাওয়া সংক্রান্ত বিভাগ জানিয়েছে, AR3664 থেকে যে সৌরঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে, তার সঙ্গে সূর্য থেকে উৎসারিত সৌরকণার ঢেউ-ও পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় Coronal Mass Ejection. এর ফলে ইলেকট্রন এবং আয়নের মিশ্রণ, সৌর প্লাজমা ছড়িয়ে পড়েছে মহাশূন্যে। ঘটনার সময় সূর্যের ওই দাগটির মুখ ছিলল পৃথিবীর দিকেই, ফলে আমাদের বায়ুমণ্ডলই আছড়ে পড়ে সৌরকণা। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে সম্প্রতি একাধিক দেশে মেরুপ্রভার দর্শন মেলে এবং বেশ কিছু জায়গায় রেডিও সিগনাল উড়ে যায়।
ভারতের লাদাখের আকাশে মেরুপ্রভার রঙিন রূপ দেখা গেলেও, নীচু অবস্থানের জন্যই সৌরঝড়ের তেমন সার্বিক প্রভাব এ দেশে লক্ষ্য করা যায়নি। ISRO জানিয়েছে, ১১ মে ভোরবেলা মূল সৌরঝড়টি ধেয়ে আসে। তখনও বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারটি সম্পূর্ণ ভাবে গড়ে ওঠেনি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একেবারে উপরিভাগ, ৮০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার এলাকাকে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয়। সেখানে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি এবং সৌর বিকিরণ অণু এবং পরমাণুতে পরিণত হয়ে ইলেক্ট্রনের স্তর তৈরি করে। এই আয়নোস্ফিয়ারই রেডিও সংযোগ স্থাপনের সহায়ক। সেই আয়নোস্ফিয়ার সম্পূর্ণ আকার ধারণ করার আগেই ১১ মে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সৌরঝড়ের আঘাত এসে পড়ে বলে জানিয়েছে ISRO.