জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে ১৯ মিনিটের মাথায় ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সান্ধুর অপ্রত্যাশিত ভুলকে কাজে লাগিয়ে মালয়েশিয়াকে এগিয়ে দেন তাদের ফরোয়ার্ড পাওলো জোসু। ৩৯তম মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত হেডে গোল করে সমতা আনেন অভিজ্ঞ ভারতীয় ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে।
স্বাভাবিক ভাবেই এই ফলে খুশি নন ভারতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ মানোলো মার্কেজ। ম্যাচের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'ম্যাচটা জিততে না পেরে আমরা হতাশ'। কিন্তু মার্চে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে তাঁর দলের সাফল্য নিয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবেই তাঁকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হল। বলেন, 'জানি অনেক দিন হয়ে গেল আমরা কোনও ম্যাচ জিততে পারিনি। তবে আমি নিশ্চিত ২০২৭-এ এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা আমরা অর্জন করব। এখনও চার মাস দেরি আছে সেই বাছাই পর্বের। তবে মার্চে আমরা জয় পাব'।
প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ভারতীয় অ্যাটাকারদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা এই ম্যাচেও বজায় ছিল। আক্রমণ তৈরির জন্য দুই উইংকে কাজে লাগালেও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে ভারতীয়দের ব্যর্থতা বারবার ফুটে ওঠে। দুই ফরোয়ার্ড ফারুখ ও ইরফানকে খুব একটা ধারালো লাগেনি। মনবীর সিংহ, লিস্টন কোলাসো, জিথিন এমএস, ভিবিন মোহননদের রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখে তাদের নামানো হলেও কোচের এই সিদ্ধান্তের যথাযথ মান তাঁরা বোধহয় রাখতে পারেননি।
কোচের নিজের কথাতেই আক্রমণ নিয়ে তাঁর অসন্তোষের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। মার্কেজ বরং খুশি তাঁর দলের রক্ষণ নিয়ে। বলেন, 'আমরা প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে পেরেছি। এটা একটা ইতিবাচক দিক। রক্ষণও ভাল করেছি। শেষ দিকে একটা শট পোস্টে লাগার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ওদের আমরা গোলের সুযোগ তৈরি করতে দিইনি। আমরা ভাল কম্বিনেশন তৈরি করেছি ঠিকই, কিন্তু সেগুলোকে কার্যকর করে তুলতে পারিনি'।
ভারত গোল শোধ করে সেটপিস থেকে, যখন ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের কর্নারে হেড করে বক্সের মাঝখান থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন রাহুল ভেকে। এক্ষেত্রে কর্নার কিক এবং হেড, দুটোই নিখুঁত ছিল। ওই সময় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা সন্দেশ ঝিঙ্গনকে পাহাড়া দিতে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এই সুযোগে প্রায় অরক্ষিত রাহুল কাজের কাজটি করে নেন।
এই গোল নিয়ে খুশি মার্কেজ বলেন, 'আমাদের গোলটা খুব ভাল হয়েছে। শুধু যে ব্র্যান্ডন ভাল কর্নার করেছে ও রাহুল ভাল হেড করেছে, তা নয়, প্রত্যেকেই তাদের ভূমিকা যথাযথ ভাবে পালন করেছে। এই ম্যাচে অনেক ইতিবাচক দিকই পাওয়া গিয়েছে। ম্যাচটা আমরা জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তবে দলের ফুটবলারদের চেষ্টা এবং আমাদের উন্নতি দেখে ভাল লেগেছে'।
সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই হায়দরাবাদেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে সিরিয়ার কাছে তিন গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যায় মার্কেজের ভারত। তার আগে মরিশাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে।
সেই দুই ম্যাচের সঙ্গে এই ম্যাচের তুলনা করে ভারতীয় দলের হেড কোচ বলেন, 'মরিশাস বা সিরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের সঙ্গে যদি তুলনা করেন, তা হলে বলব মালয়েশিয়া ওদের চেয়ে হাজার গুন ভাল। ওরা একেবারে শেষে যে গোলের সুযোগটা পেয়েছিল, তাতে জিততে পারত। আমরাও ম্যাচটা জিততে পারতাম। এখানেই বোঝা যায়, আমরা কতটা উন্নতি করেছি। অন্তত এটা বুঝতে পারছি যে, আমরা কী করতে চাই। এটা ঠিকই যে আরও উন্নতির অবকাশ রয়েছে। আমাদের গোল করতে হবে। তবে এই ম্যাচে যে রকম খেলেছি আমরা, তার চেয়ে ভাল খেলতে পারি আমরা এবং খেলবও'।
দলের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি মার্কেজ বলেন, 'চার মাসের মধ্যে দলের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে আমাদের দল নিয়ে আমি খুশি। এই দলই থাকবে কি না, তা বলা কঠিন। তবে কয়েকজন নবাগত ফুটবলারের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট। যেমন ইরফান আজ ভাল খেলেছে'।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজও মনে করেন, এই ম্যাচে তারা দল হিসেবে ভাল খেলেছে। বলেন, 'সব মিলিয়ে আমরা ভাল খেলেছে। দুই অর্ধেই কিছু কিছু সময়ে আমরা ভাল খেলেছি। আরও গোল করতে পারতাম আমরা। আমাদের ফুটবলারদের চেষ্টায় আমরা খুশি। তবে এই ফলে হতাশ। আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে'।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: বয়স তো সংখ্যামাত্র, বাইসাইকেল কিকে দুরন্ত গোল ৩৯-র রোনাল্ডোর, নেশনস লিগের শেষ আটে পর্তুগাল