Ostader Maar: পাক পেসারের বিষ সামলে হাফসেঞ্চুরি, ধোনিকে গিয়ে বলেছিলেন, ভাই বল করতে চাই
Robin Uthappa: ২০০৭ সালের ডারবানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাক বোলিংয়ের সামনে তখন কোণঠাসা ভারত। ব্যাট হাতে প্রত্যাঘাত করলেন রবিন উথাপ্পা। বোল আউটেও নায়ক।
কলকাতা: ডারবান মানেই সবুজ বাইশ গজ। বল পিচে পড়ে সাঁ সাঁ তেড়ে আসবে ব্যাটসম্যানের শরীর তাক করে। মুখে জিঙ্ক অক্সাইড মেখে অ্যালান ডোনাল্ড-শন পোলকরা বিপক্ষ শিবিরে থরহরিকম্প তুলে দেবেন।
সেই মাঠেই বল হাতে ভারতের দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিলেন পাকিস্তানের (Ind vs Pak) এক পেসার। মহম্মদ আসিফ (Mohammad Asif)। তখনও স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েননি। ফুল স্লিভ জার্সি। দৌড়ে আসার সময় চোখের ওপর উড়ে এসে পড়ে চুল। অথচ লক্ষ্যে অবিচল। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে লাগাতার গোলাগুলি বর্ষণ। বিষাক্ত স্যুইং আর আগুনে গতির যুগলবন্দিতে ঘায়েল গৌতম গম্ভীর, বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহ ও দীনেশ কার্তিকের মতো ক্রিকেট বিশ্বের তাবড় ব্যাটাররা।
আর সেই বিষ সামলে কি না পাল্টা লড়াই শুরু করলেন কর্নাটকের এক আনকোরা!
বছর খানেকও হয়নি জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে। ২০০৭ সালের ডারবানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাক বোলিংয়ের সামনে তখন কোণঠাসা ভারত। ব্যাট হাতে প্রত্যাঘাত করলেন রবিন উথাপ্পা (Robin Uthappa)। তিন নম্বরে নেমে ৩৯ বলে করলেন ৫০। দলের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর। আসিফের ৮ বলে সতর্কভাবে করলেন ৬ রান। মারলেন একটি বাউন্ডারিও। তাঁর দাপটেই ৩৬/৪ হয়ে যাওয়া ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে তুলল লড়াই করার মতো পুঁজি। টিম ইন্ডিয়ার স্কোর দাঁড়াল ১৪১/৯। ১৮ রানে ৪ উইকেট আসিফের। তবে উথাপ্পাকে পর্যুদস্ত করতে পারলেন না।
নাটকের অবশ্য তখনও বাকি ছিল। ভারতের রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানও উইকেট হারাল নিয়মিত ব্যবধানে। শেষ পর্যন্ত মিসবা উল হকরা ২০ ওভারে ১৪১ রানেই আটকে গেলেন। পাকিস্তান ১৪১/৭ করায় ম্যাচ টাই।
তখনও সুপার ওভারের নিয়ম চালু হয়নি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টাই ম্যাচ ফয়সালার জন্য সেই বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হয়েছিল বোল আউট। অনেকটা ফুটবলের টাইব্রেকারের মতো। যেখানে দুই দলের বাছাই করা বোলাররা ফাঁকা স্টাম্পে একে একে বল করবেন। যে উইকেটে লাগাতে পারবেন, দেশকে দেবেন লাইফলাইন। সুযোগ নষ্ট করা মানে হারের ভ্রুকুটি।
বোল আউটের আগে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তখন বেছে নিচ্ছিলেন বোলারদের নাম। অধিনায়কের কাছে নিজেই এগিয়ে গেলেন উথাপ্পা। বললেন, 'ভাই, আমি বল করতে চাই। ঠিক উইকেটে লাগাব।' ধোনি আব্দার মেনে নেন। বলেন, 'যা, বোলিং কর।' নেপথ্যে কারণও ছিল। ধোনির ক্ষুরধার মস্তিষ্ক বলেছিল, প্র্যাক্টিসে বোল আউটের সময় নিয়মিত ভাবে যে স্টাম্পে বল লাগাত, তার নাম উথাপ্পা।
ভারতের হয়ে প্রথম বলেই স্টাম্প ভেঙে দেন সহবাগ। পাকিস্তানের ইয়াসির আরাফত সুযোগ নষ্ট করেন। ভারতকে ২-০ এগিয়ে দেন হরভজন সিংহ। পাকিস্তানের উমর গুলও সুযোগ নষ্ট করেন। ভারতের হয়ে তৃতীয় বল করতে আসেন উথাপ্পা। তাঁর ওপর ছিল পাহাড়প্রমাণ চাপ। একদিকে সামনে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। তার ওপর তিনি অনিয়মিত বোলার। নিজেই অধিনায়কের কাছে গিয়ে বল চেয়ে নিয়েছেন। উইকেটে লাগানো মানে ভারতের জয়ের রাস্তা সুগম হয়ে যাওয়া। আর ফস্কালে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়ে যাবে পাকিস্তান।
লক্ষ্যভেদ করেন উথাপ্পা। স্টাম্প ভাঙতেই মাথার টুপি খুলে গ্যালারির অভিবাদন গ্রহণ করেন। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম জনপ্রিয় দৃশ্য। পাকিস্তানের হয়ে তৃতীয় বলও নিশানায় লাগাতে পারেননি শাহিদ আফ্রিদি। ম্যাচ জিতে যায় ভারত। সেবারের বিশ্বকাপেও চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। গ্রুপের ম্য়াচে উথাপ্পার অসাধারণ পারফরম্যান্সের সুবাদে পাক-বধ না করলে হয়তো যে দৌড় শুরুই হতো না। ক্যাপ্টেন কুলের প্রথম বড় ট্রফি। আর সদ্য অবসর নেওয়া উথাপ্পার কেরিয়ারে অন্যতম সোনালি অধ্যায় রচিত হয়েছিল ডারবানের সেই ম্যাচেই।
আরও পড়ুন: রাতের আকাশে মায়াবী আলোর খেলা, ইডেনে দর্শকদের জন্য হাজির চোখধাঁধানো লেজার শো