India-Bangladesh Border: মালদা সীমান্তে ফের কাঁটাতারের বেড়া তুলতে বাধা BGB-র, কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হল BSF, চরম উত্তেজনা
BSF vs BGB Conflict: পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, কাঁটাতারের বেড়া তোলার কাজই বন্ধ করে দিতে হল।
বৈষ্ণবনগর: সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তোলা নিয়ে ফের অশান্তি। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (BSF) কাজে বাধা বাংলাদেশ সীমান্ত প্রহরা বাহিনীর (BGB)। মালদার বৈষ্ণবনগরে আবারও সেই নিয়ে অশান্তি দেখা দিল। দুই দেশের নাগরিকরা জমায়েতও করলেন সীমান্তে। সেই নিয়ে চরমে পৌঁছল উত্তেজনা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে, কাঁটাতারের বেড়া তোলার কাজই বন্ধ করে দিতে হল। (India-Bangladesh Border)
মালদার বৈষ্ণবনগরের সুখদেবপুর এলাকায় প্রায় ১০০ মিটারে এখনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সেখানে প্রায় উন্মুক্তই। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি কাঁটাতারের বেড়া তুলতে শুরু করে BSF. আর তাকে ঘিরেই মঙ্গলবার থেকে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সেই নিয়ে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে দফা দফায় ফ্ল্যাগ মিটিং হয়। মানচিত্র তুলে ধরে নিজেদের সীমানা পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয় BSF. কিন্তু তার পরও সমস্যার সমাধান হল না। (BSF vs BGB Conflict)
বুধবার বিকেলে ফের কাঁটাতারের বেড়া তোলার কাজ শুরু করে BSF. কিন্তু বিকেলের দিকে সেই কাজে তাদের বাধা দেয় BGB. এমনকি বাংলাদেশের নাগরিকরাও সীমান্তে ছুটে আসেন। এপারে বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দারাও সীমান্তে জমায়েত করেন। চলে স্লোগানের পাল্টা স্লোগান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কোনও রকমে সামাল দেয় BSF. কিন্তু কাঁটাতার তোলার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে আপাতত।
এখানেই শেষ নয়, বৃহস্পতিবারও বৈষ্ণবনগর সীমান্তে উত্তেজনা বজায় রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে যে ভিডিও সামনে এসেছে, তাতে এপার থেকে 'ভারত মাতা কি জয়', 'বন্দে ভারত' স্লোগান ওঠে। পাল্টা স্লোগান ভেসে আসে ওপার থেকেও। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল বলেন, "কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু BGB এবং সেখানকার মানুষদের থেকে বাধা আসে। আমরা গ্রামবাসীরাও একজোট হয়ে এগিয়ে যাই। আজও BSF কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমরা BSF-এর সঙ্গে আছি। এখন যা পরিস্থিতি, ইউনূসের সরকার জঙ্গি পাঠিয়ে দিচ্ছে। এর আগেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে। গরুপাচার চলত। বাংলাদেশের লোক আমাদের ক্ষতি করে। ফসল কেটে নিয়ে চলে যায়।"
জনার্দন মণ্ডল নামের আর এক বাসিন্দা বলেন, "খবর আছে, ওপারে রোহিঙ্গারা পরিবার নিয়ে বসে আছে। ঢোকার চেষ্টা করছে। কোনও কাজ নেই, সন্ধের দিকে এপারে ঢোকার চেষ্টা করে। এর আগেও অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তবে দুই দেশের মধ্যে এমন গন্ডগোল শুনিনি কখনও। বাপ-দাদাদের আমলে হয়েছে। আজ সকালেও কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের জায়গায় আমরা রাস্তা গড়ব। ইউনূস সরকার বাধা দেওয়ার কে?"
শুধু পশ্চিমবঙ্গের মালদা বা নদিয়াই নয়, ত্রিপুরা সীমান্তেও অনুপ্রবেশ আটকাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয় BSF-কে। সীমান্ত নিয়ে এমন সংঘাতের মধ্যেই আজ পেট্রোপোল-বেনাপোল সীমান্তে ফ্ল্যাগ মিটিং রয়েছে BSF এবং BGB-র মধ্যে। আইবি পদমর্যাদার আধিকারিক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে অনুপ্রবেশ এবং পাচার প্রতিহত করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকেই ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে আগের সেই সুসম্পর্কে ছেদ পড়েছে। বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ এসে পড়েছে সীমান্তের এপারেও। বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সেই আবহে ভারতের তরফে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেখানে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই, তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু হয়েছে সেখানে। কিন্তু মালদা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তুলতে গিয়ে বার বার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
BSF-এর প্রাক্তন ডিআইজি সমীর মিত্র এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই কাঁটাতারের বেড়া দিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কাঁটাতারের বেড়া বসলে সহজে আর ঢোকা যাবে না বুঝেই বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি তাঁর। আগেও ওই জায়গায় কাঁটাতার ছিল, কয়েক মিটার আগে বা পিছে বসানো নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছতে হবে বলে মত তাঁর।
যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী গোটা ঘটনায় আক্রমণাত্মক অবস্থান নেন। তিনি বলেন, "ইউনূসের উস্কানিতেই এমন হচ্ছে। জঙ্গিদের সরকার চালাচ্ছেন উনি। কতটা ভারত বিরোধী, তা দেখাতেই BGB-কে উস্কে দিয়েছেন। ভারতীয়রা দলমন নির্বিশেষে জয় শ্রীরাম, ভারত মাতা কি জয় বলছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাঁটাতারের বেড়ার জন্য ৬০০ কিলোমিটার জমি দেননি। জনগণ দায়িত্ব নিয়েছেন, চোরাচালানকারী, মানবপাচারকারী, জামাত, সন্ত্রাসবাদী, মৌলবাদীদের সাইজ করার। দেশীয় অস্ত্র হাতে উঠে এসেছে তাঁদের। আমরা তাঁদের নিয়ে গর্বিত।"
কাঁটাতার তোলা নিয়েই শুধু অশান্ত নয় সীমান্ত এলাকা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, মন্দিরে হামলার ঘটনাও এপারে প্রভাব পড়ছে। চট্টগ্রামে তিনটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। মন্দিরের বিগ্রহ, প্রণামী বাক্স লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা। হিন্দুদের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়েছে বলে খবর। এই সবকিছুর আঁচ এসে পড়ছে এপারেও।