UPSC : দিনমজুরি করেছেন স্কুলের ফাঁকে, সিভিল সার্ভিস আটবারের চেষ্টায় ; অনুপ্রেরণার নাম রাম ভজন
UPSC Success Story : কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের যে কোনও বিকল্প হয় না তা আর একবার প্রমাণ করলেন রাম ভজন কুমার।
দিল্লি : ফল যেদিন থেকে বেরিয়েছে, বিরাম নেই তাঁর ফোনে। বেজেই যাচ্ছে অনবরত। আর বাজবে নাই বা কেন, যে কীর্তি করে ফেলেছেন, অভিনন্দনের বন্যা তো বইবেই। শুভাকাঙ্খী, আত্মীয়-স্বজন যে যেখানে ছিলেন, ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দিল্লি পুলিশের হেড কনস্টেবল রাম ভজন কুমার। দেশের প্রশাসনিক স্তরে সেরা পরীক্ষা মানা হয় যাকে সেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তাও এক-আধবার নয়। দীর্ঘ আটবারের প্রচেষ্টায়। ৩৪ বছর বয়সী রাম ভজন। কর্মরত দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল পুলিশ স্টেশনে। মঙ্গলবার UPSC সিভিল সার্ভিসের ফল বের হওয়ার পর দেখেন সর্বভারতীয় স্তরে ৬৬৭ র্যাঙ্ক করেছেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাস রেখেই এই সাফল্য। বলছেন রাম ভজন। তাঁর লড়াই অনুপ্রাণিত করবে অনেককেই।
স্কুলের ফাঁকে দিনমজুরের কাজ
এবার গোটা দেশে ৯৩৩ জন রয়েছেন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চূড়ান্ত নির্বাচিতদের তালিকায়। যদিও রাম ভজন কুমার যেখান থেকে উঠে এসেছেন, যেভাবে লড়াই করে ওই তালিকায় নিজেকে এনে ফেলেছেন - একদমই সহজ ছিল না তা। রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রাম বাপি থেকে উঠে এসেছেন। দউসা জেলার এই গ্রামে দিনমজুরের কাজ করে, দিনরাত এক করে ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন রাম ভজন কুমারের বাবা-মা। শুধু তাঁরাই নন, পরিবারের অবস্থা এমন ছিল, কখনও খেতেও পাননি ভাল করে। দু'বেলা দু'মুঠো রোজগারের জন্য স্কুলের ফাঁকে দিনমজুরের কাজ করতেন রাম ভজনও।
পড়াশোনা করেছেন গ্রামের স্কুলেই। পরে ২০০৯ সালে ক্লাস টুয়েলভ পাশ করার পরে চাকরি পান দিল্লি পুলিশে। কনস্টেবল হিসেবে তাঁর প্রথম পোস্টিং ছিল বিজয় ঘাটে। পরে বদলি হন শাহবাদ ডেয়ারি পুলিশ স্টেশনে আর বর্তমানে সাইবার সেল পুলিশ স্টেশনে কর্মরত। তবে আরও এগোতে চাইতেন তিনি। তাই পুলিশে চাকরি করতে করতেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন রাজস্থান ইউনিভার্সিটি থেকে। ২০১২ সালে JRF সহ NET - এ সফল হন। হিন্দি বিষয়ে। ওই একই বছরে বিয়েও করেন।
প্রস্তুতি পর্ব
তবে সাফল্যের খিদে থেমে যেতে দেয়নি রাম ভজনকে। ২০১৫ সালে পুরোদমে শুরু করেন পড়াশোনা। পাখির চোখ সিভিল সার্ভিস। ২০১৮ সালে মেন পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান। তবে সেবার হয়নি। বারবার পরীক্ষা দিয়েও ছেঁড়েনি শিকে। অবশেষে ২০২২-এর সিভিল সার্ভিসে স্বপ্নপূরণ। ক্রমতালিকায় ৬৬৭ নম্বরে নাম। কাজের চাপ সামলে কীভাবে নিয়েছিলেন প্রস্তুতি ? রাম ভজন কুমার বলছেন, কাজও করেছেন। আর সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়েছেন রোজ। সমর্থন পেয়েছেন স্ত্রী অঞ্জলি ও মায়ের। কারো বিশেষ অবদান ? রাম ভজন কুমার নাম নিচ্ছেন ফিরোজ আলমের। তিনিও কনস্টেবল ছিলেন দিল্লি পুলিশে। ২০১৯ সালে UPSC-তে সফল হয়ে ACP হয়েছেন তিনি। ফিরোজ আলম কঠোর পরিশ্রম করতে তাঁকে সবসময় সাহায্য করেছেন বলে জানান রাম ভজন।
তাঁর কীর্তিতে বড় গর্ব আরেকজনের। তিনি রাম ভজন কুমারের মা। প্রত্যন্ত গ্রামের আর পাঁচটা সাধারণ মায়ের মতই। বলছেন, ছেলে বড় অফিসার হয়েছে। আর দিনমজুরের কাজ করবেন না তিনি। গর্বিত দিল্লি পুলিশও।
দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক IPS সুমন নালওয়া। ফোর্সের সবার কাছে অনুপ্রেরণা রাম ভজন। বলছেন তিনি। লিখেছেন, “From an aspirant to inspiration.”
তবে, এখানেই যে অগ্রগতির পথ শেষ নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন রাম ভজন। আটবারের চেষ্টায় সফল হয়েও নবমবারের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন তিনি। ২৮ মে আবার দেবেন পরীক্ষা। এবার তিনি লড়বেন র্যাঙ্ক আরও ভাল করার জন্য। জানিয়েছেন, তিনি OBC ক্যাটেগরি ভুক্ত। তাই নবমবারের মতো বসতে পারছেন। আর এবারই শেষবার।
আরও পড়ুন : দিল্লি ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্রী ইউপিএসসি টপার , কে এই ঈশিতা কিশোর ?
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI