Krishnanagar Lok Sabha Constituency: ইতিহাস নিয়েও জোর দ্বন্দ্ব, মুখোমুখি মহুয়া বনাম অমৃতা, কৃষ্ণনগরের রাজনৈতিক সমীকরণ কী বলছে?
Lok Sabha Elections 2024: বাংলার ৪১টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণনগর।
কৃষ্ণনগর: বনেদিয়ানার কেন্দ্রস্থল হিসেবে কৃষ্ণনগরের পরিচিতি ছিল একসময়। সেই জৌলুস না থাকলেও, শুধুমাত্র জীর্ণ কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকলেও, সেখানকার রাজবাড়ি আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মস্থান কৃষ্ণনগরকে একসময় গুরুত্ব দিতেন সাহেবরাও। যে কারণে ১৮৪০ সালের আশেপাশে সেখানে প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জার নির্মাণ হয়। আবার ১৮৯৮ সালে নির্মিত হয় ক্যাথলিক গির্জার। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের সুখ্যাতি গোটা পৃথিবীতে, যার উৎসস্থল ঘূর্ণি। (Krishnanagar Lok Sabha Constituency)
ইতিহাস এবং সংস্কৃতির মিলনস্থল হিসেবে দীর্ঘ দিনের সুনাম কৃষ্ণনগরের। কৃষ্ণনগরের রাজনৈতিক ইতিহাসও বর্ণময়, যার কেন্দ্রে রয়েছে রাজবাড়ি। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে ইংরেজদের কাছে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে পরাধীনতার অন্ধকার নেমে আসে বাংলার বুকে। পরাধীনতার সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে যায় রাজবাড়ির নামও। সিরাজকে সরানোর চক্রান্তে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও শামিল ছিল বলে বার বার উঠে এসেছে ইতিহাসে। এমনকি রাজবাড়ি থেকে ইংরেজদের সৈন্য-সামন্ত দিয়ে সাহায্য করা হয় বলেও জানা যায়। (Lok Sabha Elections 2024)
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে পুরনো সেই ইতিহাস রাজনৈতিক তরজার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ রাজবাড়ির সদস্যা অমৃতা রায়কে সেখান কৃষ্ণনগর থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী করেছে মহুয়া মৈত্রকে। অমৃতার দাবি, ইতিহাস স্মরণ করিয়ে তাঁদের বারংবার আক্রমণ করা হচ্ছে জোড়াফুল শিবিরের তরফে। অথচ ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলানো ছাড়া উপায় ছিল না কৃষ্ণচন্দ্রের। মুসলিম শাসকের থেকে হিন্দু এবং সনাতন ধর্মকে রক্ষা করতেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নেন বলে দাবি করেছেন অমৃতা, যদিও তা ইতিহাসের বিকৃতি ছাড়া কিছুই নয় বলে পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূল। এমনকি ইতিহাসের পাতা ওল্টাতে শুরু করলে মুখ লুকনোর জায়গা থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এই আবহেই, আগামী ১৩ মে, চতুর্থ দফায় কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। সেখানে মূল লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপি-র মধ্যেই। টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে গতবছর লোকসভার সাংসদ পদ খোওয়ান মহুয়া। আবারও ওই আসন থেকে সংসদে প্রবেশ করতে মরিয়া তিনি। অন্য দিকে, মহুয়াকে হারানো বিজেপি-র কাছে একরকমের চ্যালেঞ্জও। কৃষ্ণনগরে আবার এসএম সাদিকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনের অন্যতম হাইভোল্টেজ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে কৃষ্ণনগর। ভোটগ্রহণের আগে তাই কৃষ্ণনগরের জনবিন্যাস, রাজনৈতিক সমীকরণ দেখে নেওয়া যাক।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের আওতায় পড়ে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র
আসন নং | নাম | জেলা |
৭৮ | তেহট্ট | নদিয়া |
৭৯ | পলাশিপাড়া | নদিয়া |
৮০ | কালিগঞ্জ | নদিয়া |
৮১ | নাকাশিপাড়া | নদিয়া |
৮২ | চাপড়া | নদিয়া |
৮৩ | কৃষ্ণনগর উত্তর | নদিয়া |
৮৫ | কৃষ্ণনগর দক্ষিণ | নদিয়া |
জাতিগত পরিসংখ্যান
জাতি | জনসংখ্যার হার |
বৌদ্ধ | ০.০১% |
খ্রিস্টান | ০.৬৫% |
জৈন | ০.০১% |
মুসলিম | ৩৬.৩% |
তফসিলি জাতি | ২২.৭% |
তফসিলি উপজাতি | ১.৭% |
শিখ | ০.০২% |
গত তিন লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হন কৃষ্ণনগর থেকে-
- ২০১৯ সালে মহুয়া মৈত্র
- ২০১৪ সালে তাপস রায়
- ২০০৯ সালে তাপস রায়
কোন দলের কত বিধায়ক
আসন নং | নাম | বিধায়কের নাম | দলের নাম |
৭৮ | তেহট্ট | তাপস কুমার সাহা | তৃণমূল |
৭৯ | পলাশিপাড়া | মানিক ভট্টাচার্য | তৃণমূল |
৮০ | কালিগঞ্জ | নাসিরুদ্দিন আহমেদ (লাল) | তৃণমূল |
৮১ | নাকাশিপাড়া | কল্লোল খান | তৃণমূল |
৮২ | চাপড়া | রুকবানুর রহমান | তৃণমূল |
৮৩ | কৃষ্ণনগর উত্তর | মুকুল রায় | বিজেপি (পরে তৃণমূলের পতাকা নেন) |
৮৫ | কৃষ্ণনগর দক্ষিণ | ঊজ্জ্বল বিশ্বাস | তৃণমূল |
কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনে কোন দলের প্রাপ্ত ভোটের হার কত
নির্বাচনের সাল | কংগ্রেস | BJP | CPI | তৃণমূল | CPM | RSP | AIFB | SUCI (C) | GOJAM |
২০২১ বিধানসভা | ২.৫ | ৩৭.৮ | ০ | ৪৫.৮ | ৫.৭ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২০১৯ লোকসভা | ২.৮ | ৪০.৫ | ০ | ৪৫.৩ | ৮.৯ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২০১৬ বিধানসভা | ১১.৮ | ৯ | ০ | ৪৬.২ | ২৯.২ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২০১৪ লোকসভা | ৬ | ২৬.৪ | ০ | ৩৫.২ | ২৯.৪ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২০১১ বিধানসভা | ০ | ৬ | ০ | ৪৪.২ | ৩৫.৭ | ০ | ০ | ০ | ০ |
২০০৯ লোকসভা | ০ | ১৬.৮ | ০ | ৪২.৪ | ৩৫ | ০ | ০ | ০ | ০ |
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র সংরক্ষিত আসন নয়। নদিয়া জেলার কিছু অংশ এর অন্তর্গত। কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকদের সাক্ষরতার হার ৬৭.৩৫ শতাংশ। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে তফসিলি জাতির ভোটারের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ৮৪৫, যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২২.৭ শতাংশ, তফসিলি উপজাতি ভোটারের সংখ্যা ২৭ হাজার ৬২৩, যা মোট জনসংখ্যার ১.৭ শতাংশ, কৃষ্ণনগরে মুসলিম ভোটার রয়েছেন ৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৯২ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৩৬.৩ শতাংশ।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে গ্রামীণ ভোটারের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ১৮ হাজার ৫০৮, যা মোট জনসংখ্যার ৮৭.৩ শতাংশ। পাশাপাশি, শহুরে ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৬ হাজার ৩৫৮, মোট জনসংখ্যার ১২.৭ শতাংশ যা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষ্ণনগরে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৬৬। কৃষ্ণনগরে বুথের সংখ্যা ১৮১২। ২০১৯ সালে বুথে গিয়ে ভোট দিয়েছিলেন ৮২.৪ শতাংশ মানুষ। ২০১৬ সালে সেই হার ছিল ৮৫.৭ শতাংশ।
তথ্যসূত্র: চাণক্য, নির্বাচন কমিশন। পরিসংখ্যান: ২০১১ সালের আদমশুমারি।