Sam bahadur Review: ভিকির অভিনয়েই ছবির প্রাণ, 'শ্যাম বাহাদুর'-এ ঘাটতি রইল কোথায় কোথায়?
Film Sam Bahadur Review: একটা গোটা ছবি যে কীভাবে কেবলমাত্র দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তা ভিকির থেকে শিক্ষণীয়।
মেঘনা গুলজার
ভিকি কৌশল, সানিয়া মলহোত্র, ফতিমা সানা শেখ
কলকাতা: তিনি যখন প্রথম রুপোলি পর্দায় রাখেন, তখন কেউ বোধহয় আন্দাজও করতে পারেননি, অত্যন্ত সাদামাটা দেখতে এই ছেলেটিই একদিন হয়ে উঠতে বলিউডের দুঁদে অভিনেতা। জায়গা করে নেবে প্রথম সারির নায়কদের তালিকায়। সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি 'শ্যাম বাহাদুর' (Sam Bahadur) দেখতে দেখতে দর্শকেরা বুঝতে পারবেন, কোন মন্ত্রে ভিকি বারে বারে মন ছুঁয়ে যায় দর্শকদের। প্রিয় হয়ে ওঠে পরিচালকের। একটা গোটা ছবি যে কীভাবে কেবলমাত্র দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তা ভিকির থেকে শিক্ষণীয়।
ছবির গল্প
মেঘনা গুলজার পরিচালিত এই ছবিটি 'শ্যাম বাহাদুর'-এর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। শ্যাম বাহাদুর একজন ফিল্ড মার্শাল হয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর এক অনন্য চরিত্র, একটি যুদ্ধের নায়ক শ্যাম বাহাদুরের জীবন কেমন ছিল, কীভাবে তিনি সেনাবাহিনীতে এসেছিলেন, পর্যায়ক্রমে এই সমস্ত গল্পকে ধাপে ধাপে তুলে ধরেছেন পরিচালক। গোটা ছবি জুড়ে একদিকে যেমন শ্যাম বাহাদুরের চরিত্রকে নিপুণ তুলিতে আঁকা হয়েছে, তেমনই মানুষের সঙ্গে সেনাবাহিনীর নৈক্যটের গল্প বলেছেন পরিচালক। শ্যাম বাহাদুর কীভাবে সৈনিকদের উজ্জীবিত করতেন, কীভাবে লড়াই করতেন এই সমস্ত কিছুকেই তুলে ধরা হয়েছে।
কেমন হল শ্যাম বাহাদুর?
এই ছবির ট্রেলার মুক্তির পরে মনে হয়েছিল। বছরের সেরা ট্রেলার এটি। স্বভাবতই ছবিটি নিয়ে বেশ প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল। গোটা সিনেমাতে ভিকি কৌশল উপভোগ্য, তবে কাহিনীর বাঁধুনি কোথাও কোথাও আলগা হয়েছে। ছবিটিতে ভীষণ চোখে পড়েছে রিসার্চের অভাব। 'শ্যাম বাহাদুর'-এর শুরুটা ভীষণ হালকা চালে। সহজে ছবির সঙ্গে দর্শক যোগস্থাপন করতে পারবে না। তবে ধীরে ধীরে ছবিটি যতই বিরতির দিকে এগোয়, ততই বাড়তে থাকে আগ্রহ। ছবির দ্বিতীয়ভাগ বেশ ভাল এবং বলাই যায় যে ভিকি কৌশল তাঁর অভিনয়ের জোরে ছবিটিতে একাই টেনে নিয়ে গিয়েছেন।
এই ছবিটি যে শাম মানেকসরের জীবনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা, তা ইতিমধ্যেই সবার জানা। এই চরিত্রকে নিয়ে প্রচুর ভিডিও ইতিমধ্যেই ইউটিউবে রয়েছে। তাঁর ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, বিতর্কে জড়িয়ে পড়া, সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় ইন্টারনেট খুললেই। এই ছবিটি সেইসব তথ্যের বাইরে থেকে নতুন করে চেনাতে পারল না শ্যাম মানেকসরকে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও বিতর্কগুলিকেই ফের একবার বড়পর্দায় তুলে ধরল এই ছবি। সিনেমার শেষে দেখানো হয় শাম মানেকসরের অবসর নেওয়াকেই। ছবিতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছুটা অংশ অন্ধকারেই রাখা হয়েছে। বরং ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেনাদের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ, রসবোধ ও সাহসীকতা। কিন্তু গোটা ছবি জুড়ে কার্যত কোনওরকম ঝুঁকি না নেওয়া দর্শকদের হতাশ করতে পারে। 'শ্যাম বাহাদুর' -এর ট্রেলার দর্শকদের মনে যে প্রত্যাশা তৈরি করেছিল, তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এই ছবি।
অভিনয়
অভিনয়েই এই ছবির সবচেয়ে ভাল, বলা উচিত একমাত্র আকর্ষণের জায়গা। এই ছবিতে ভিকি নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন। বলাই যায়, 'শ্যাম বাহাদুর' আরও একবার প্রমাণ করে দিল ভিকি কি দুর্দান্ত অভিনেতা। ভিকিকে এই ছবিতে দেখলে, ভিকি কৌশল বলে বিশ্বাস করতে বেশ অসুবিধায় হয়। মনে হয়, ভিকি নয়, পর্দায় যিনি রয়েছেন তিনি শাম মানেকসর। শ্যাম বাহাদুর যখন সৈনিকদের দেখে, হাঁটাচলা করে... তখন শিহরিত হয় দর্শক। আবার প্রধানমন্ত্রীকে সুইটি বলার হিম্মত দেখে হাসির ঝিলিক খেলে যায় ঠোঁটে।
ভিকি অদ্ভূতভাবে শাম মানেকসরের ভঙ্গি, হাঁটাচলা, আদবকায়দা সমস্ত কিছু অবিকল নকল করেছেন। ভিকি চরিত্রের এতটাই গভীরে গিয়ে শাম মানেকসরকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, তা প্রশংসনীয়। তাঁর অভিনয়ের জোরেই গোটা ছবিটিকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। কেবল এই ছবি কেন, সর্দার উধম সিং বা উরির মতো ছবিতেও ভিকি বারে বারে প্রমাণ করেছেন নিজের অভিনয় দক্ষতা। বলাই যায়, শ্যাম বাহাদুর তাঁর মুকুটে আরও একটি পালক। শাম মানেকসরের তারুণ্য থেকে শুরু করে বার্ধক্য, সমস্ত ধাপকেই নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ভিকি। তাঁর চোখের দিকে তাকিয়েই হারিয়ে যাওয়া যায় কেবল। শ্যাম বাহাদুরের স্ত্রীর চরিত্রে সানিয়া মলহোত্র বেশ মানানসই। ইন্দিরা গাঁধীর চরিত্রে ফতিমা সানা শেখও ভাল অভিনয় করেছেন। তবে ভিকি কৌশলের অভিনয়েই এই ছবিটির প্রাণ।
পরিচালনা
ছবি পরিচালনার মাপকাঠিতে মেঘনা গুলজার উৎরে গেলেও, শাম মানেকসরকে নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণায় ঘাটতি হয়েছে এই কথা বলতেই হবে। শাম মানেকসরে জীবনের কেবলমাত্র একটি দিককেই আলোকিত করা হয়েছে এই ছবি জুড়ে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের একটা অংশ রয়ে গিয়েছে অন্ধকারেই। একথা বলতেই হয় যে, ভিকি কৌশলের মত দুর্দান্ত অভিনেতা মেঘনা যেখানে পেয়েছিলেন, সেখানে চিত্রনাট্যে আরও গবেষণা ও বিশ্লেষণ থাকলে এই ছবি একটি দুর্দান্ত তথ্যচিত্র হতে পারত।
মিউজিক
এই সিনেমার গানগুলি বেশ মনোগ্রাহী। গুলজারের লেখা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। শঙ্কর মহাদেবনের কণ্ঠে ‘বান্দা’ গানটি ছবির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শকদের আবেগপ্রবণ করে তোলে। মোট কথা, মিউজিক এই ছবিতে একটা অন্যরকম আবেগ নিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন: Jaya Ahsan Exclusive: সেটে মোমো বানাতেন পঙ্কজ, জয়ার ডায়েটে থাকত নলেন গুড়ের রসগোল্লা
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।