Aurangzeb Tomb Row: বাবরি মসজিদ করে দেওয়ার হুমকি, ঔরঙ্গজেবের সমাধি ঘিরে তপ্ত নাগপুর, নেপথ্যে রাজনৈতিক উস্কানির অভিযোগ
Nagpur Clash: ইতিহাস বলছে, ১৭০৭ সালে ঔরঙ্গজেব মারা যান। তাঁর ইচ্ছেকে স্বীকৃতি দিয়েই খুলদাবাদে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে।

মুম্বই: না আছে মুঘল সাম্রাজ্য, না আছেন মুঘল সম্রাট। কিন্তু মৃত্যুর ৩০০ বছর পরও ঔরঙ্গজেবের নামে অশান্তি ছড়াচ্ছে ভারতে। সেই রেশ বজায় রেখেই সোমবার মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াল। ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে মিছিল করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব সংগঠন বজরঙ্গ দল। ঔরঙ্গজেবের কুশপুতুলও পোড়ায় তারা। আর সেই মিছিলকে ঘিরেই ছড়াল হিংসা। ইঁট-পাথরবৃষ্টি, অগ্নিসংযোগ, বাদ গেল না কিছুই। পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমে আক্রান্ত হল পুলিশ, দমকলবাহিনীও। কিন্তু ঔরঙ্গজেবের সমাধি ভাঙার দাবিই বা উঠছে কেন, কেনই বা সেই নিয়ে হিংসা ছড়াচ্ছে? এর নেপথ্যেও রয়েছে রাজনীতি। (Aurangzeb Tomb Row)
ইতিহাস বলছে, ১৭০৭ সালে ঔরঙ্গজেব মারা যান। তাঁর ইচ্ছেকে স্বীকৃতি দিয়েই খুলদাবাদে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকে। মহারাষ্ট্রের খুলদাবাদেই কেন সমাধিস্থ হতে চেয়েছিলেন ঔরঙ্গজেব, তার নেপথ্যেও রয়েছে কাহিনি। জানা যায়, শেখ জৈনুদ্দিন ঔরঙ্গজেবের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। তাঁর দরগার কাছেই সমাধিস্থ হতে চেয়েছিলেম মুঘল সম্রাট। অন্য মুঘল সম্রাটদের মতো রাজকীয় সমাধি চাননি ঔরঙ্গজেব। বরং সাধারণ মানুষের মতো সমাধি চেয়েছিলেন তিনি। সেই মতো তাঁর দেহ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ইংরেজ সরকারের ভাইসরয় লর্ড কার্জন তাঁর সমাধিক্ষেত্রটি শ্বেতপাথরে বাঁধিয়ে দেন। (Nagpur Clash)
ঔরঙ্গজেবের ওই সমাধি নিয়েই এই মুহূর্তে থমথমে নাগপুর-সহ মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা। সোমবার সেন্ট্রাল নাগপুরের মহলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব সংগঠন বজরঙ্গ দলের একটি মিছিলকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়ায়। খুলদাবাদ থেকে ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরাতে হবে বলে দাবি জানিয়ে রাস্তায় নামে তারা। সেই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের কাছে আগে স্মারকলিপিও জমা দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাদের দাবি ছিল, ছত্রপতি সম্ভাজীনগরে ঔরঙ্গজেবের যে সমাধি রয়েছে, তা না সরানো হলে ওই নির্মাণটির পরিণতিও হবে বাবরি মসজিদের মতোই। সোমবারের মিছিলে ঔরঙ্গজেবের কুশপুতলও পোড়ানো হয়। আর সেই থেকেই অশান্তি ছড়ায়।
কিন্তু ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি কেন উঠছে? বজরঙ্গ দলের দাবি, মারাঠা শাসকদের সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের সংঘাতের যে ইতিহাস, তাতে মুঘল সম্রাটের সমাধি যন্ত্রণা এবং দাসত্বের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। শিবাজিপুত্র ছত্রপতি সম্ভাজী মহারাজের মৃত্যু, কাশী, মথুরা এবং সোমনাথে মন্দির ভাঙায় ঔরঙ্গজেবের যে ভূমিকা, সেকথা স্মরণ করেও ওই সমাধি রাখা যায় না বলে মত বিশ্ব হিন্দু পরিষদের। এর আগে, মুম্বইয়েও সেই দাবিতে মিছিল করেছিল হিন্দুত্ববাদী ওই সংগঠন। সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দ ছবি 'ছাওয়া' সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালে। নতুন করে জোর পায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আবু আজমি জানান, তিনি ঔরঙ্গজেবকে অত্যাচারী শাসক হিসেবে দেখেন না। 'ছাওয়ার' মতো ছবি ঔরঙ্গজেবের এমন ভাবমূর্তি তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মহারাষ্ট্রের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হর্ষবর্ধন সপকল আবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীসের সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের তুলনা টানেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, "ঔরঙ্গজেব অত্যাচারী শাসক ছিলেন। আজ দেবেন্দ্র ফড়ণবীসও সমান অত্যাচারী।" সেই নিয়েও বিতর্ক বাধে।
তবে শুধুমাত্র বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা বজরঙ্গ দল নয়, সপ্তাহখানেক আগে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর পক্ষে সওয়াল করেন। সাতারার বিজেপি সাংসদ উদয়নরাজে ভোঁসলে, যিনি ছত্রপতি শিবাজির বংশধর, তিনি ঔরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি তুললে দেবেন্দ্র জবাবী চিঠিতে লেখেন, 'আমরাও একই জিনিস চাই। কিন্তু আইনের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে। ওইটি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত একটি সৌধ। কংগ্রেস সরকারের আমলে সেটিকে সংরক্ষিত সৌধের স্বীকৃতি দেওয়া হয়'।
এর পর সোমবারও ঔরঙ্গজেবকে আক্রমণ করেন দেবেন্দ্র। ঠাণের একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "যে হারে নির্বিচারে হত্যা চালিয়ে গিয়েছেন ঔরঙ্গজেব, তার পরও তাঁর সমাধি রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সরকারকে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমি কথা দিচ্ছি, মহিমাকীর্তন করে কেউ যদি ঔরঙ্গজেবকে গরিমান্বিত করতে চান, তিনি সফল হবেন না।"
দেবেন্দ্রর মন্ত্রী নীতেশ রানে আরও একদম এগিয়ে বাবরি মসজিদের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে আহ্বান জানান হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকে। তাঁর বক্তব্য ছিল, "সরকার নিজের দায়িত্ব পালন করবে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিকে তাদের কাজ করতে হবে। বাবরি মসজিগ যখন ভাঙা হচ্ছিল, আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকিনি, গল্পে মশগুল থাকিনি। আমাদের করসেবকরা উচিত কাজ করেছিলেন।" ১৯৯২ সালে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনারই উল্লেখ টানেন নীতেশ। আর তার পরই হিংসায় তপ্ত হয়ে ওঠে নাগপুর।
তাই নাগপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসার জন্য সরকারি ভাবে গুজব ছড়ানোর কথা বলা হলেও, গোটা ঘটনার জন্য রাজ্যের শাসকদল বিজেপি-কেই দায়ী করছে বিরোধীরা। উদ্ধব ঠাকরে নেতৃত্বাধীন শিবসেনার বিধান পরিষদীয় সদস্য অম্বাদাস দানব বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার ASI-এর মাধ্যমে সৌধ রক্ষার টাকা জোগায়। তার পরও কেন্দ্র এবং রাজ্যেরই কিছু লোত সৌধ ভাঙার উস্কানি দেন।" নাগপুরে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় বিজেপি-কেই কাঠগড়ায় তুলেছেন মহারাষ্ট্র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার। শান্তির আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, "ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতে জোগানো হচ্ছে ইন্ধন। নাগপুরের মানুষকে বলব, শান্তি বজায় রাখুন। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, খেয়াল রাখতে হবে।" এই মুহূর্তে নাগপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়েছে। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যায়। ঔরঙ্গজেবের সমাধিতে যাওয়া নিয়েও জারি রয়েছে বিধিনিষেধ।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
