এক্সপ্লোর
Advertisement
(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
ব্লাড ক্যানসার ব্যারেটো, ইয়াকুবুদের সতীর্থ প্রাক্তন জাতীয় ফুটবলারের, অর্থ, রক্ত, প্লেটলেট দিয়ে পাশে মোহনবাগানিরা
চিকিৎসার জন্য আপাতত প্রতি মাসে দরকার আড়াইলাখ টাকা, তেমন জরুরি প্রচুর রক্ত আর প্লেটলেট।
কলকাতা: সুরজিৎ বোস। কলকাতা ময়দানে পরিচিত ছিলেন বাজু নামে। টালিগঞ্জ অগ্রগামী, মোহনবাগান, মহমেডান স্পোর্টিংয়ে এক সময় চুটিয়ে খেলা ৩৪ বছরের বাজু এখন ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন। চিকিৎসা চলছে দিল্লির এইমসে। না এআইএফএফ, না আইএফএ, না রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার- এই সঙ্কটে কেউ তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়নি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্বের মোহনবাগান সমর্থকরা, এক বছর যাঁদের ক্লাবে তিনি খেলেছিলেন।
আজকালকার ছেলেপুলেরা ফুটবলের বদলে ক্রিকেটে আকৃষ্ট হচ্ছে বেশি, এ নিয়ে ফুটবল কর্তাদের ক্ষোভ অনেক। কিন্তু ঘটনা হল, ক্রিকেটাররা যে সুযোগ সুবিধে পান, তার কণামাত্র ফুটবলাররা পান কি? কোনও ক্রিকেটার যদি জীবনে একটাও বোর্ড ম্যাচ খেলেন, তাহলেই সারা জীবন তাঁর পেনশন নিশ্চিত। এছাড়া হাজারটা সুযোগ সুবিধে তো আছেই। রাজ্যের ক্রিকেট বোর্ডগুলোও এসে দাঁড়ায় দুঃস্থ ক্রিকেটারদের পাশে। কিন্তু ফুটবলাররা? একজন ফুটবলার সারা জীবন দেশের হয়ে খেলেও পেনশন পান না, খেলার মাঠে যত টাকা উপার্জন, তাই তাঁরা গোটা জীবনের সম্বল।
সুরজিৎ বোসের ঘটনাই দেখা যাক। পেশাদার ফুটবলার হবেন বলে রেলের চাকরি নেননি কল্যাণীর ছেলে সুরজিৎ। ২০০৩-০৪-এ তাঁর কলকাতা ময়দানে পা রাখা। উইথড্রল ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলা সুরজিৎ কেরিয়ার শুরু করেন টালিগঞ্জ অগ্রগামী থেকে, তবে সব থেকে বেশি সাফল্য পেয়েছেন মাহিন্দ্রা ইউনাইটেডের হয়ে খেলে। কোচ ডেরেক পেরেরার প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি, খেলেছেন ব্যারেটো, ইয়াকুবুদের সঙ্গে। মোহনবাগানের হয়ে খেলেছেন ডুরান্ড কাপে, তাঁর আমলে মাহিন্দ্রা জাতীয় লিগ জিতেছিল।
এছাড়া ফেডারেশন কাপ, জাতীয় লিগ, সন্তোষ ট্রফিতে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। সুখবিন্দর সিংহ যখন কোচ ছিলেন, সে সময় খেলেছেন জাতীয় দলেও। ২০০৫-এ ভারতের পাকিস্তান সফরে ছিলেন তিনি। গোল কম দিয়েছেন, মূলত বাড়াতেন গোলের পাস। কেরিয়ারের মধ্যগগনে ২০১৫-১৬-য় হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট লাগায় অকালে ফুটবলকে বিদায় জানাতে বাধ্য হন। কল্যাণীতে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ফুটবলের কোচিং সেন্টার করেন, পুনের এক ফুটবল অ্যাকাডেমির প্রশিক্ষকও ছিলেন। এক জুনিয়র ফুটবলারকে ট্রায়াল দিতে পুনা থেকে গত মাসে দিল্লি নিয়ে আসেন সুরজিৎ। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১১ অগাস্ট তাঁকে এইমসে ভর্তি করা হয়, ধরা পড়ে, তাঁর ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। তখন থেকে তিনি এইমসে চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসার জন্য আপাতত প্রতি মাসে দরকার আড়াইলাখ টাকা, তেমন জরুরি প্রচুর রক্ত আর প্লেটলেট। প্রায় অথৈ জলে পড়া বাজুর পাশে এসে দাঁড়ায় প্রবাসী মোহনবাগান সমর্থকদের সংগঠন দিল্লি মেরিনার্স। শুরু হয় টাকা তোলা। গোটা দেশের মোহনবাগান সমর্থকরা এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়ান, ক্রাউডফান্ডিং সংস্থা মিলাপের সাহায্য নেওয়া হয়, বিশ্ব জুড়ে শুরু হয় বাজুর জন্য টাকা তোলা। মেরিনার্স অ্যাব্রডের মাধ্যমে দিল্লি, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের অনাবাসী মোহনবাগানিরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, এক মাসে আড়াইলাখের মত টাকা উঠেছে শুধু মোহনবাগান সমর্থকদের থেকে। সুরজিতের অ্যাকাউন্ট নাম্বার প্রকাশ করা হয়, পঞ্জাব মিনার্ভা অ্যাকাডেমির মালিক রঞ্জিত বাজাজও অর্থসাহায্য করেন। প্রবাসী ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে, তাঁরাও টাকা তুলছেন। অর্থাৎ প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় মোটামুটি হয়েছে, এবার দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রস্তুতি প্রয়োজন। কিন্তু টুইটারের মাধ্যমে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ক্রীড়া মন্ত্রক এবং এআইএফএফ এক পয়সাও দেয়নি বলে অভিযোগ। প্লেয়ার্স ফোরাম এক লাখ টাকা দিয়েই দায় সেরেছে।
সমস্যা হল, করোনার জন্য অনেকে রক্ত দিতে এইমসে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই মোহনবাগানিরাই ১৮ ইউনিট রক্ত দিয়েছেন প্রিয় ফুটবলারের জন্য। কেমোথেরাপি চললে রক্তের প্লেটলেট কমে যায়, তাই দিল্লি প্রবাসী বাগান সমর্থকরা নিয়মিত রক্ত দিতে আসছেন, নিয়ে আসছেন বন্ধুবান্ধবদের। প্রতিদিন এভাবে জোগাড় করা হচ্ছে ১-২ ইউনিট করে রক্ত।
এখন প্রশ্ন, কতদিন এভাবে শুধু ফুটবলপ্রেমীদের ভরসায় বাজুর চিকিৎসা চালানো যাবে। বাড়ির একমাত্র উপার্জনশীল মানুষটি এভাবে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আর্থিকভাবে অত্যন্ত সঙ্কটে পড়েছে তাঁর পরিবার। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী শম্পা ও ১০ এবং ২ বছরের দুই কন্যা। বড় মেয়ে অলিভিয়া স্কুলে পড়ে, তার এ বছরের স্কুলের খরচও জোগানো যাচ্ছিল না, শেষমেষ মোহনবাগানিরাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। শম্পার একটা চাকরির জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁরা আবেদন করেছেন, যাতে পরিবারটা বেঁচে যায়। আর গুরুতর অসুস্থ সুরজিতের জন্য যদি পাওয়া যায় একটু সরকারি বদান্যতা।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
জেলার
জেলার
Advertisement