![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Vinay Lal Blog : তালিবানের প্রত্যাবর্তন ও সাম্রাজ্যের ঔদ্ধত্য
কাবুলে প্রবেশের আগেই কান্ধাহার, মাজার-ই-শরিফ ও জালালাবাদের মতো শহর, এমনকি ছোট শহরগুলিতে তালিবানের ঢোকার সময় কোনও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি।
![Vinay Lal Blog : তালিবানের প্রত্যাবর্তন ও সাম্রাজ্যের ঔদ্ধত্য Vinay Lal Blog The Return of the Taliban and the Arrogance of Empire Vinay Lal Blog : তালিবানের প্রত্যাবর্তন ও সাম্রাজ্যের ঔদ্ধত্য](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/08/17/c5fa220a85126d1dfa68bd69ce2894ce_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
এই তো মাত্র তিনদিনেরও কম সময়ের আগে আফগানিস্তানের দ্রুত পরিবর্তনশীল ঘটনাক্রমের সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে মার্কিন সংবাদপত্রগুলি মার্কিন বিদেশ নীতি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল যে, ৩০ দিনের আগে তালিবান কাবুলে ঢুকতে পারবে না। ছয় দিন আগে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ৯০ দিনের মধ্যে কাবুলের পতন হতে পারে। আমেরিকা তার সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মেনে চললে ৬-১২ মাসের মধ্যে আশরফ গনির সরকারের পতন ঘটতে পারে বলে গত জুনে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
বহু বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য মতামতপ্রদানকারীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তালিবান যখন একটার পর একটা শহর দখল করছিল, তখন হয়ত অনুভব করে থাকতে পারেন যে, মার্কিন সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ ও বিদেশ বিভাগের পর্যালোচনায় কিছু একটা গলদ ছিল।
আর সবচেয়ে বেশি যা চোখে লাগছে, তা হল গত ৮ জুলাই হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে বিডেন নিজের মতামত দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়ে বলেছিলেন যে, মার্কিন সেনা প্রত্যাহার মানে আফগানিস্তানকে তালিবানের দিকে ঠেলে দেওয়া নয়।
প্রশ্ন ছিল-আপনি কি তালিবানকে বিশ্বাস করেন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট?
প্রশ্ন ছিল- আফগানিস্তানে তালিবানের দখল কি এখন অবশ্যম্ভাবী?
প্রেসিডেন্ট- না , এমনটা নয়
প্রশ্ন-কেন?
প্রেসিডেন্ট- কারণ, আফগান বাহিনীতে রয়েছে ৩,০০,০০০ সুসজ্জিত সেনা। বিশ্বের যে কোনও সামরিক বাহিনীর মতোই সুসজ্জিত..আর রয়েছে ৭৫,০০০-এর মতো তালিবানের বিরুদ্ধে বিমান বাহিনী। এটা অনিবার্য নয়।
মার্কিন সামরিক বিশ্লেষক, নীতি নির্ধারক ও অগনিত বিশেষজ্ঞরা এই প্রথম সম্পূর্ণ অদক্ষ বলে প্রমাণিত হলেন না। সাদ্দাম হোসেন হয়ত বলে থাকতে পারতেন, 'সমস্ত সন্ত্রাসবাদী হামলার জননী', যদিও এ ব্যাপারে তাঁর কোনো হাত ছিল না, তা হল ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে অতর্কিতে হামলা। এই হামলার বদলা নিতে আমেরিকা আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায়। যেখানে এই হামলার মাস্টারমাইন্ড ওসামা বিন লাদেন ডেরা বেঁধেছিল বলে মনে করা হয়েছিল। তখন প্রেসিডেন্ট বুশ ঘোষণা করেছিলেন যে, এই সন্ত্রাসবাদী হামলার চক্রীদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে আমেরিকা বিশ্বের শেষ বিন্দু পর্যন্ত যাবে। আমেরিকার বাহিনী দরকার হলে তাদের গুহা থেকে টেনে বের করে আনবে।
ওই সময় 'ন্যায় বিচার', 'মানবাধিকার', স'ন্ত্রাসবাদের অভিশাপ', 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতির ওপর আক্রমণে'র মতো শব্দ ও শব্দবন্ধের উল্লেখ করা হয়েছিল আমেরিকাকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উৎসাহিত করতে। কিন্তু তখন কোনও সন্দেহ ছিল না যে, আমেরিকা রক্ত নিয়ে রক্তের বদলা নিতে চাইছে।
১৮১২-তে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে ওয়াশিংটন ডিসি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে মার্কিন মূল ভূখণ্ড এর আগে কখনও আক্রমণের শিকার হয়নি। তাছাড়া ঠাণ্ডাযুদ্ধ জয়ী হয়েছিল, সোভিয়েতকে নিঃশেষ করে দিয়েছিল, সোভিয়েত সাম্রাজ্যকে চুরমার করে দিয়েছিল যে আমেরিকা, তাদেরকে মুষ্টিমেয় ইসলামিক জঙ্গিদের কাছে আক্রান্ত হতে হয়েছিল, তা আমেরিকানদের আত্মশ্লাঘায় ঘা দিয়েছিল। আর ওই জঙ্গিরা তখন এমন একটা দেশে গা ঢাকা দিয়েছিল, যে দেশকে এক মার্কিন ভাষ্যকার 'আদিম মানুষের' বাসস্থান বলে উল্লেখ করেছিলেন।
২০০১-এ আফগানিস্তানে মার্কিন হামলার এক বছর পর জানা যায় যে, লাদেন সে দেশ ছেড়ে অন্য কোনও দেশে চলে গিয়েছে। এক দশক পরে জানা যায়, সেই দেশ হল পাকিস্তান। আফগানিস্তানে মিশনে আমেরিকার কোনও লক্ষ্য রেখেছিল, এমন কথা অস্বীকার করেছেন বিডেন। গতকাল (১৬ অগাস্ট) সকালে তাঁর ভাষণে এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের আফগানিস্তান মিশন দেশ গঠনের জন্য ছিল না। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের এই পারম্পরিক যুক্তি একইসঙ্গে সঠিক ও বেঠিকও। বিডেন হয়ত অস্বীকার করলেও একদিকে, দেশগঠনের বুলি ছিল নিঃসন্দেহে বাগাড়ম্বর যা, আধা-মার্কিন দখলদারির জন্য খরচ ক্রমশ বেড়ে চলার পরও একের পর এক প্রশাসন সেনা বহাল রাখার সিদ্ধান্তের জন্য জানিয়েছিল।
বুশ প্রশাসনের দেশ গঠনের বিপুল প্রকল্পের বিরোধিতা করে ওবামা প্রশাসন আফগানিস্তানে মার্কিন মূল মিশনের কথা ঘোষণা করেছিল। তা হল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানেরআল কায়দাকে ছিন্নমূল, নির্মূল ও পরাজিত করা এবং ভবিষ্যতে উভয় দেশে তারা যাতে ফিরে আসতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। কিন্তু একইসঙ্গে বোঝা গিয়েছিল যে, অত্যন্ত অপরিণত অবস্থাতে হলেও আফগানিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেই ওই লক্ষ্য পূর্ণ হতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিডেনের গতকালের বিবৃতি শুধু ভুলই নয়, একইসঙ্গে তা এক অবিমিশ্র ব্যর্থতাও তুলে ধরেছে এবং তা হল যে, ওবামা যে মূল মিশন স্থির করেছিলেন তার থেকে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং যাকে বলা যায় দেশ গঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না, এই মৌলিক বিষয়টি মেনে নেওয়া বা স্বীকার করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা।
দুই দশক পর তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে কিছু দিক বুঝতে বলে আমরা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির কিছু বিষয় চিহ্নিত করতে পারি, যেগুলি এখনও বহাল রয়েছে এবং পরেও থাকবে.. শুধু আফগানিস্তানের মানুষের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ। ২০ বছর আগে একটি নিবন্ধ ( দ্য ফ্যামিলি অফ ফান্ডামেন্টালিজম)-এ লিখেছিলাম যে, আমেরিকা এ কথা জানে যে গত সহস্রাব্দে আফগানিস্তানকে কখনও জয় করা যায়নি এবং এটা হবে তাদের বধ্যভূমি। ব্রিটিশরা কখনও আফগানদের বশীভূত করতে পারেনি।সোভিয়েতও এই প্রতিকূল ভূখণ্ডে নাস্তানাবুদ হয়েছে। প্রত্যেক সুপার পাওয়ারের যে পরিণতি হয়েছে, একগুঁয়ে আমেরিকাকেও তার মুখোমুখি হতে হবে। আফগানিস্তান সাম্রাজ্যগুলির বধ্যভূমি, বিশেষ করে আধুনিক সাম্রাজ্যগুলি..এটা বহুল ব্যবহৃত শব্দ হতে পারে। কিন্তু তালিবান দাবি করছে , যে তাদের জয় দেখিয়ে দিল যে, আফগানরা কখনও বিদেশীদের শাসনাধীন থাকতে পারে না।
কেউ ভাবতেই পারেন যে আমেরিকানরা তাদের অতীতের কথা গর্বের সঙ্গে বলতে অভ্যস্ত, এই একই কারণে আত্মনিয়ন্ত্রণের দুর্নিবার আকাঙ্খা তাদের মধ্যে দানা বেঁধেছিল। যেভাবেই হোক, এই ভাবানুভূতির বিষয়টি মার্কিন হিসেবের মধ্যে কোনওদিন আসেনি এবং আফগানিস্তান সম্পর্কে তাদের মনোভাবের অংশ হয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি, মার্কিন বিদেশ নীতির কট্টর সমালোচকদের মধ্যেও তা ছিল না।
তালিবান যেভাবে হাতে গোনা কয়েকদিনের মধ্যে বিরোধীদের বিধ্বস্ত করেছে এবং সরকারের পতন ঘটিয়েছে, তার একমাত্র কারণ এই নয় যে, আফগানরা বিদেশীদের তাদের দখলদার হিসেবে সহ্য করে না, এই সত্য অনুধাবনে আমেরিকার ব্যর্থতা। এখানে আরও অনেক কিছু বিবেচনার বিষয় রয়েছে। আমার শেষ নিবন্ধে আমি রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তি হিসেবে তালিবানকে উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নৃতত্ত্ববিদ জেমস স্কটের গবেষণার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে পারি, যিনি রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র-বহির্ভূত পরিধির একটা ভেদরেখা টেনেছিলেন। বাস্তবে যেটা সত্যি তা হল, আফগানিস্তানে রাষ্ট্রের নাগাল ছিল খুবই সীমাবদ্ধ এবং আমেরিকা যেখানে ২০ বছর থাকলেও তা পরিবর্তনের জন্য কিছু করেনি। দেশের বিস্তীর্ণ অংশে রাষ্ট্র পৌঁছতেই পারেনি, বরং কার্যত তা ছিল অদৃশ্য। রাষ্ট্রের প্রযুক্তি অন্যত্র প্রবেশ করতে পারলেও ওই বিস্তীর্ণ ভূভাগ ছিল রুক্ষ, অচেনা, প্রতিকূল এবং অভেদ্য। এর পরিণতি ছিল অনেক কিছু। সেগুলির মধ্যে রয়েছে, তালিবান ওই ভূখণ্ডকে হাতের তালুর মতো চিনত। আমেরিকা যাদের কদাচিৎ স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই স্থানীয়দের মধ্যে তালিবান আশ্রয় চাইতে পারত। কিন্তু রাষ্ট্র-বহির্ভূত ক্ষেত্রের ধারণার পিছনে সুগভীর দার্শনিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। এর সারাংশ হল আমেরিকা যে রাষ্ট্রের প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়েছিল, রাষ্ট্র-বহির্ভূত ক্ষেত্র তা অমান্য করেছে এবং তাকে অক্ষম করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত এবং এর সঙ্গে যা সম্পর্কিত, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর তথাকথিত ব্যর্থতার বিষয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় যে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিবেচনা করে দেখা উচিত। প্রত্যেকেই হতভম্ব যে, আফগান বাহিনী কীভাবে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল।
মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিনকেন বারেবারেই নিজেদের দেশের সুরক্ষায় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতার অভাবের কথা বলেছেন। এবং বিডেনেও সেই মতোই কিছুটা ক্লান্তির সঙ্গেই জানিয়েছেন, আফগান সামরিক বাহিনী সহজেই হাল ছেড়ে দিয়েছে, কখনও কখনও কোনও লড়াই ছাড়াই।
তালিবান কোনও একটি গোষ্ঠী নয় এবং তাদের সংখ্যা কত তার কোনও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নেই। তবে সাধারণভাবে যে হিসেব করা হয়, সেই অনুযায়ী, তাদের সংখ্যা দেড় লক্ষের বেশি নয়। অন্যদিকে, আফগান বাহিনীর সংখ্যা তিন লক্ষের বেশি। আর তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিগত বছরগুলিতে প্রচুর ডলার খরচ করা হয়েছে। এরপরও বেশিরভাগ শহরে তালিবান কোনও বাধাই পায়নি বলে জানানো হয়েছে। যখন তারা কাবুলে প্রবেশ করল, তখন শহরের চারটি গেটের কোথাও তালিবানকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি।
কাবুলে প্রবেশের আগেই কান্ধাহার, মাজার-ই-শরিফ ও জালালাবাদের মতো শহর, এমনকি ছোট শহরগুলিতে তালিবানের ঢোকার সময় কোনও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি। তালিবান স্থানীয় গোষ্ঠীগুলির প্রধান ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা করে ফেলেছিল বলে জানানো হচ্ছে। তালিবান শুধু কোনও গুলিবৃষ্টি বা সামান্য গুলি চালিয়েই অগ্রসর হয়নি, অনেক সময় কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই অস্ত্রও তাদের সমর্পণ করা হয়। এরফলে বহু সশস্ত্র গাড়ি, অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড, মর্টার, কামান, নাইট সাইটস ও রকেট লঞ্চার তাদের হস্তগত হয়-আর এখন আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তাদের হাতে চলে এসেছে প্রায় দুশোর বেশি ফাইটার জেট ও ট্যাঙ্ক।
কেউ কেউ এ বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে দুর্নীতির বাড়বাড়ন্তের দিকে আঙুল তুলে এর ব্যাখ্যা দিতে চাইবেন। আবার অন্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর শৃঙ্খলার অভাবের কথা বলছেন বা যুক্তি দিচ্ছেন যে, আফগান সেনারা প্রাণের ভয় পেয়েছিল এবং সেজন্য যুদ্ধ ছাড়াই আত্মসমর্পণের সহজ পথ বেছে নিয়েছে। এর মধ্যে কিছু যুক্তি গতানুগতিক এবং 'নেটিভ'-দের মধ্যে দুর্নীতির অতিমারীর পুরানো ধারনার চর্বিতচর্বন।এই দুর্নীতির কথা বুঝতে হলে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের কুমন্ত্রণা ও মুষ্টিমেয়র হাতে সীমাবদ্ধ কর্মকাণ্ডের দিকটিও খতিয়ে দেখতে হবে। তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যত বেমালুম উধাও হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে কোনও যুক্তিই পঠান ও আফগানদের প্রচলিত ভাবমূর্তির সঙ্গে সাজুয্যপূর্ণ নয়। সেই ধারনা হল, তারা অদম্য যোদ্ধা এবং কোনওভাবেই অস্ত্র ছাড়ে না। কিন্তু আফগান বাহিনী 'প্রশিক্ষিত' করার অর্থ কী?একজন মার্কিন সেনা গড়ে ২৭ পাউন্ডের সুরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম থাকে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা ৭০ পাউন্ডেরও। কিন্তু এর বিপরীতে আফগান যোদ্ধার হাতে থাকে একটি রাইফেল ও কয়েক রাউন্ড গোলাবারুদ। আফগান যোদ্ধা ও মার্কিন সেনাকে পাশাপাশি রাখলে প্রথম জনকে হাস্যকর মনে হয়—যেমন একজন মার্কিন পুলিশ কর্মীকে ইংল্যান্ডের পুলিশের তুলনায় ম্যাডমেড়ে,ফ্যাকাশে, অতিরিক্ত বোঝায় নুইয়ে পড়া মনে হয়।
তবে একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, আফগানিস্তানে অসামরিক ব্যক্তিদের সঙ্গে তালিবানের বিশেষ কোনও প্রভেদ নেই। রাইফেলের সংস্কৃতিতেই বেড়ে ওঠা, সমগ্র অঞ্চলের সঙ্গে পরিচিতি ও সম্পর্কের বিভিন্ন ধরন হয়ে উঠতে পারে সেনা হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ। অন্যদিকে, এর বিপরীতে আমেরিকানদেরই এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ পাওয়ার দরকার ছিল। প্রায় কোনও মার্কিন সেনা, বা এমনকি কোনও কমান্ডিং অফিসার ও জেনারেলরাও আফগানিস্তানের স্থানীয় কোনও ভাষা ও সেদেশের ইতিহাস জানত না। বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় আমেরিকান সেনা আমেরিকার সাধারণ উদাসীনতার প্রতিফলন ঘটায়, সেই সঙ্গে যা বলা যায়, তা হল প্রযুক্তিগত ভ্রান্তি- সেই ঔদ্ধত্য যে, প্রযুক্তি দিয়ে সব খামতি ঢাকা যায়।
আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে, আফগানদের মধ্যে যে পার্থক্যই থাক এবং বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে যে বৈরীতাই থাক, আমেরিকানদের বিদেশী হিসেবে এবং দখলদারী শক্তির সদস্য হিসেবেই দেখা হয়েছে। আমেরিকাকে তাদের মুক্তিপ্রদানকারী হিসেবে অধিকাংশ আফগানই গ্রহণ করতে পারেনি। অনেকেই এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন বিশেষ করে তাদের ভূমিকার উল্লেখ করে। যেমন, আমেরিকানরা আফগান মহিলাদের প্রভুত্ব, যৌন নিগ্রহ, অশিক্ষা ও অধীনতা থেকে মুক্তির কথা ভেবে থাকেন। লিঙ্গর ক্ষেত্রে তালিবান, আফগানিস্তানে মার্কিন দখল ও মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি আমি পরের রচনায় উল্লেখ করব, কারণ তা বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এখন এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে, এই প্রশ্নটি তালিবানের পুণরুত্থান ও ফিরে আসায় যারা সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের প্রসারকামী ও মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্খার চূড়ান্ত হিসেবে গণতন্ত্রের ধারণা পোষণ করেন, তাঁদের পক্ষ তো বটেই, যাঁরা প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র রয়েছে, এমন দেশগুলিতে বাস করেন, তাঁদের কাছেও কঠিন হয়ে উঠেছে।
অপ্রীতিকর সত্য হল যে, বিশ্বের সর্বত্র গণতন্ত্র গুরুতর, অভূতপূর্ব চাপের মধ্যে রয়েছে। আমেরিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশ্বকে এখন ভেবে দেখতে হবে, তালিবানের কাছে আফগানিস্তানের পতন গণতন্ত্রের স্বল্পকালীন ধারণার বিশ্বব্যাপী আসন্ন বিপর্যয়ের অশুভ বার্তাবহনকারী কিনা।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)