Al-Natah Discovery: জিশুর জন্মেরও আগে নির্মাণ, মরুদ্যানের নীচে চাপা পড়ে ছিল, প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষ থেকে যা যা মিলল...
Science News: প্রাচীন শহরের ওই ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা Plos One জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
নয়াদিল্লি: ধূ ধূ মরুভূমির মাঝে এক টুকরো মরুদ্যান। আর তার নীচে চাপা পড়ে ছিল এক চিলতে প্রাচীন শহর। বাড়িঘর যদিও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে নেই, পড়ে রয়েছে শুধুমাত্র ধ্বংসাবশেষ। ওই শহর আজকের নির্মাণ নয়, বরং জিশু খ্রিস্টের জন্মেরও আগে তৈরি হয়েছিল। খোঁজ মিলল ২০২৪ সালে এসে। যাযাবর এবং শহুরে জীবনের মাঝামাঝি সময়ের সাক্ষী ওই ধ্বংসাবশেষ। প্রত্নতাত্ত্বিকরা সেটি আবিষ্কার করেছেন। (Al-Natah Discovery)
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমে যে বিস্তীর্ণ মরুভূমি রয়েছে, তার মাঝে অবস্থিত মরুদ্যানের নীচে চাপা পড়ে ছিল প্রাচীন শহরটি। সেটিকে 'আল-নাতাহ্' বলে উল্লেখ করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সেখানে গাছপালা, উর্বর মাটি ছিল বলে মত তাঁদের। জানা গিয়েছে, গোটা শহরটিকে ঘিরে ছিল ইঁট-পাথরের দেওয়াল। ১৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেওয়ালটির খোঁজ মিলেছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ উইলিয়াম শার্লো এবং তাঁর সহযোগীরা প্রাচীন শহরটির ধ্বংসস্তূপটিকে খুঁজে বের করেছেন। (Science News)
প্রাচীন শহরের ওই ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা Plos One জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সৌদি গবেষকরাও নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। ধ্বংসাবশেষ থেকে যে দেওয়ালের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, সেটি শহরটিকে ঘিরে রেখেছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁদের মতে, এ থেকে বোঝা যায় যে ওই ধ্বংসস্তূপটি আসলে গোছানো একটি শহর ছিল। নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য দেওয়াল তোলা হয়েছিল চারিদিকে।
ওই মরুদ্যানটিকে Oasis of Khaybar বলে অভিহিত করা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই শহরে একসময় প্রায় ৫০০ বাসিন্দার বসবাস ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ সালে, ব্রোঞ্জ যুগের একেবারে গোড়ার দিকে ওই শরহটি গড়ে তোলা হয়। প্রায় ১০০০ বছর শহরটি টিকেছিল। পরবর্তীতে সেখান থেকে অন্যত্র সরে যান মানুষজন। কেন শহরটি ছেড়ে অন্যত্র সরে যান মানুষজন, তার সদুত্তর যদিও মেলেনি এখনও পর্যন্ত।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ২.৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে বিস্তার ছিল শহরটির। খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে সেটির নির্মাণ হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ সাল পর্যন্ত সেখানে মানুষের বাস ছিল। পরবর্তীতে সেখান থেকে অন্যত্র সরে যেতে শুরু করেন মানুষ জন। একটা সময় পর ওই জায়গাটিকে বসতি এলাকা, প্রশাসনিক এলাকা এবং কবরস্থানে ভাগ করে দেওয়া হয়।
নয়া গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, 'আল-নাতাহ্' শহরে নির্মাণ যখন হয়, সেই সময় বর্তমান সিরিয়া থেকে জর্ডান পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরী বরাবর অঞ্চলে শহরগুলি বিস্তার ঘটছিল। সেই সময় আরবের উত্তর-পশ্চিম অংশকে অনুর্বর মরুভূমি বলে মনে করা হতো। যাযাবররাই সেখান দিয়ে যাতায়াত করতেন এবং সেখানে কবরস্থান গড়ে উঠেছিল। যে শহরের ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেখানে থেকে যাযাবররা থিতু হতে শুরু করেন বলে মত গবেষকদের।
কী কী পাওয়া গিয়েছে, বিশদ জানতে ক্লিক করুন- https://journals.plos.org/plosone/article?id=10.1371/journal.pone.0309963
দেড় দশক আগে ওই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে প্রথম দেওয়ালের অংশ বিশেষের খোঁজ পান গবেষকরা। ব্যাসল্ট শিলার আস্তরণ ওই ধ্বংসস্তূপকে লোকচক্ষু থেকে আড়াল করে রেখেছিল। দেওয়ালের ভগ্নাবশেষ খুঁজে পওয়ার পর সেখানে খননকার্য চালানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সেই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, ভিতের নির্মাণ এতটাই মজবুত যে সেখানে বড় বড় বাড়ি থেকে থাকতে পারে। পাহাড়ের ঢালে অন্তত ৫০টি বাড়ি থাকার প্রমাণ মেলে। সেগুলি আবার ছোট ছোট দেওয়ালে ঘেরা ছিল।
খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে ওই ধ্বংসস্তূপের সমাধিক্ষেত্র থেকে ধাতব অস্ত্রশস্ত্রও উদ্ধার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। কুড়ুল, ছুরির পাশাপাশি রত্নও উদ্ধার হয়েছে। চিনামাটির বাসনপত্র পাওয়া গিয়েছে সেখান থেকে। যে দেওয়ালের ভগ্নাবশেষের খোঁজ মেলে, সেটি প্রায় ১৬ ফুট উঁচু ছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সেখানে প্রভাবশালী, অভিজাতদের বসবাস ছিল বলে ধারণা তাঁদের। গবেষকদের মতে, পুরোপুরি ভাবে শহুরে জীবনে প্রবেশের আগে যাযাবররা এই ধরনের বসতি এলাকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে নগরায়ন ঘটে।